Advertisement
E-Paper

স্ত্রীকে খুন করে প্রৌঢ় আত্মঘাতী

স্থানীয় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিকাশ নস্কর বলেন, ‘‘শম্ভুনাথবাবু সল্টলেকের ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে মালির কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে অবসর নেন। স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসা ছিল ব্যয়বহুল। সম্ভবত সে কারণেই অবসাদে ভুগছিলেন।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪৫

পাঁচ জনের ভরণপোষণ। তার মধ্যে এক জনের ব্রেন স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। শরীরের এক দিক অসাড়। হাঁটাচলা করতে পারেন না। কথাবার্তাও প্রায় বন্ধ। তাঁর জন্য ১২ ঘণ্টার এক জন আয়া রাখতে হয়েছে। প্রতি দিন শুধু সেই অসুস্থ মানুষটির চিকিৎসার খরচই গড়ে আড়াই হাজার টাকা!

কিন্তু সম্বল বলতে দুই ছেলের যৎসামান্য আয় ও বাবার পেনশন। ফলে, সেই পরিবারের বেঁচে থাকার লড়াই ছিল তীব্র। যার জেরে গৃহকর্তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছিল মানসিক অবসাদ আর তীব্র হতাশা।

বৃহস্পতিবার রাতে দেখা গেল, খাটের উপরে চেয়ারে গলায় দড়ি জড়ানো অবস্থায় বসে গৃহকর্তা। দড়ির অপর প্রান্ত সিলিং ফ্যানের সঙ্গে জড়ানো। সেই বিছানাতেই পড়ে রয়েছে গৃহকর্ত্রীর নিথর দেহ।

পুলিশ জানিয়েছে, বিধাননগর পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে কেষ্টপুরের বারোয়ারিতলায় মৃত ওই দম্পতির নাম শম্ভুনাথ মণ্ডল (৬২) ও জয়ন্তী মণ্ডল (৫০)। শম্ভুনাথবাবু স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। শম্ভুনাথবাবুর আত্মীয় শম্ভুনাথ প্রামাণিক জানান, সাড়ে তিন মাস আগে ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল জয়ন্তীদেবীর। তার পরে এক জটিল অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। ওই অস্ত্রোপচারের পরে শরীরের এক দিক অসাড় হয়ে যায়। তাঁর চিকিৎসার জন্যই প্রতিদিন আড়াই-তিন হাজার টাকা খরচ হতো।

শম্ভুনাথবাবু অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। পেনশনই সম্বল ছিল তাঁর। বড় ছেলে সুদীপ এবং ছোট ছেলে সুবীর পানীয় জল সরবরাহের ব্যবসা করেন। সুদীপ বিবাহিত। তিন জনের মিলিত রোজগারেও ওই বিপুল খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে আয়াকে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ব্যবসার কাজে বাইরে গিয়েছিলেন সুবীর। সুদীপও কাজের সূত্রে বাইরে ছিলেন। আয়া বাড়িতে ঢুকে শম্ভুনাথবাবুর ঘরের দরজায় ধাক্কা দেন। কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি সুবীরকে ফোনে বিষয়টি জানান। সুবীর বাড়ি ফিরে বাবা-মাকে ডাকতে থাকেন। সাড়া না মেলায় শেষে দরজা ভেঙে তাঁরা ভিতরে ঢোকেন।

এই ঘটনায় পুলিশ খুন এবং অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে। কাগজের নীচে শম্ভুনাথবাবুর নাম লেখা। তাতে আর্থিক অনটন ও মানসিক অবসাদের কথা রয়েছে।

স্থানীয় ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিকাশ নস্কর বলেন, ‘‘শম্ভুনাথবাবু সল্টলেকের ভাবা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টারে মালির কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে অবসর নেন। স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসা ছিল ব্যয়বহুল। সম্ভবত সে কারণেই অবসাদে ভুগছিলেন।’’

বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, লড়াইটা আর চালাতে পারলেন না শম্ভুনাথবাবু। অল্প রোজগারেও ধীরে ধীরে একতলা থেকে দোতলা, এমনকী ছাদের উপরেও ঘর করেছিলেন তিনি। এক ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থতার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সুবীর এবং সুদীপ জানিয়েছেন, মায়ের অসুস্থতা ও চিকিৎসার বিপুল খরচের চাপেই তাঁদের বাবা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

কিন্তু কোন অবস্থায় পৌঁছলে এমনটা করা সম্ভব?

মনোরোগের চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘‘আশা ফুরিয়ে গেলেই হতাশা তৈরি হয়। দীর্ঘদিন ধরে কাছের মানুষের অসুস্থতা মানসিক অবসাদ তৈরি করে। তার উপরে যদি বোঝা যায়, সুস্থ হওয়ার আশা ক্ষীণ, তখন হতাশা বেশি করে গ্রাস করে। আর্থিক সঙ্কটে মানসিক চাপ বাড়ে। জীবনের প্রতি বিরক্তি তৈরি হয়।’’

মনোবিদ সঞ্জয় গর্গ বলেন, ‘‘সামাজিক নিরাপত্তার অভাব বয়স্কদের আরও অসহায় করে তোলে। সেই সঙ্গে প্রিয়জনের দীর্ঘ অসুস্থতা। শম্ভুনাথবাবু মানসিক ভাবে এতই বিপর্যস্ত ছিলেন যে, মৃত্যুকেই মুক্তির পথ ভেবেছেন।’’

Suicide Murder depression
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy