—প্রতীকী ছবি।
শৈশব-কৈশোর তাঁদের কেটেছিল ফুটবল পায়ে। তার পরে জীবন অন্য খাতে বয়ে গিয়েছে ওঁদের। কেউ খুনের দায়ে, কেউ বা অন্য কোনও অপরাধে আজ জেলবন্দি। তবে, জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে দিন কাটলেও এখনও তাঁদের পায়ে সেই ফুটবল-জাদু অটুট। আজ, শুক্রবার দমদমের অমল দত্ত স্টেডিয়ামে সেই ফুটবল পায়ে ছুটতে দেখা যাবে ওই সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের। প্রদর্শনী ম্যাচে জেলবন্দিদের নিয়ে গড়া দলের মুখোমুখি হবেন একদা কলকাতার ময়দান কাঁপানো ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কিছু খেলোয়াড়। ইতিমধ্যে ম্যাচ ঘিরে উন্মাদনা বাড়ছে কারা দফতরের অন্দরে।
জেলবন্দিদের মধ্যে ফুটবল প্রতিভার খোঁজ শুরু হয়েছিল আগেই। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের সংশোধনের যে প্রক্রিয়া বাম আমলে শুরু হয়, সেই প্রক্রিয়ার একটি অংশই হল এই ফুটবল প্রতিযোগিতা— এমনই জানালেন কারা দফতরের এক আধিকারিক। এই উদ্যোগের নেপথ্যে আছেন কলকাতা ফুটবল লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা তথা প্রাক্তন ফুটবলার ও ভাষ্যকার মিহির দাস। এক সময়ে ফুটবলে বাংলাকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারগুলিতে বন্দিদের অনেকেই ভাল ফুটবল খেলেন। কারা দফতরের অনুমতি পেয়ে সেই সব ফুটবল-প্রতিভাদের খুঁজে বার করার চেষ্টা শুরু করি। কোনও দিন তো ওঁরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরবেন। ফুটবলকে যাতে তাঁরা ভুলে না যান, তা নিশ্চিত করতেই এই প্রচেষ্টা।’’
কয়েক মাস আগে রাজ্যের সব ক’টি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দি ফুটবলারদের নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের স্মরণে ‘বিবেক কাপ’ অনুষ্ঠিত হয়। বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মাঠে সেই প্রতিযোগিতার পরেই তাঁদের থেকে বাছাই করা খেলোয়াড়দের নিয়ে ১৬ জনের দল সাজান মিহির। আজ, সেই দল প্রদর্শনী ম্যাচ খেলবে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে। মিহিরের দাবি, ‘‘ম্যাচে খেলবেন প্রতাপ সেনাপতি, দেবাশিস পালচৌধুরী, সঞ্জয় মাঝির মতো প্রাক্তন ফুটবলারেরা।’’ দফতর সূত্রের খবর, ম্যাচের সময়ে স্টেডিয়ামে কড়া নজরদারি চলবে। ম্যাচের দুই অর্ধে খেলা হবে ২৫ মিনিট করে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ওই ফুটবলারদের প্যারোলে নিয়ে আসা হয়েছে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের দু’জন, মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের তিন জন, বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক জন, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের তিন জন, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ছ’জন ও বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক জন। মিহির জানান, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই অনুশীলন করেছেন তাঁরা। প্রাক্তন বেশ কিছু ফুটবলার ও বিভিন্ন ফুটবল সংস্থার কর্ণধারদের এই ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মিহির। তিনি বলেন, ‘‘প্রস্তুতি শেষ। কারা দফতরের শীর্ষ আধিকারিকেরা খেলা দেখবেন।’’ কারা দফতরের ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সকলের সামনে ফুটবল প্রতিভার প্রদর্শন করতে পারবেন জেলবন্দি ওই ফুটবলারেরা। এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy