Advertisement
E-Paper

ভাসানের গোলমাল গড়াল মৃত্যুতে

সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে শহরের নানা জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। এ বার তা গড়াল মৃত্যুতে। শনিবার গভীর রাতে সল্টলেকের সংযুক্ত এলাকা পোলেনাইটে বিসর্জন নিয়ে দুই পরিবারে অশান্তির জেরে মৃত্যু হল এক যুবকের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২০
তাপস মাইতি।  নিজস্ব চিত্র

তাপস মাইতি। নিজস্ব চিত্র

সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে শহরের নানা জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। এ বার তা গড়াল মৃত্যুতে। শনিবার গভীর রাতে সল্টলেকের সংযুক্ত এলাকা পোলেনাইটে বিসর্জন নিয়ে দুই পরিবারে অশান্তির জেরে মৃত্যু হল এক যুবকের। ঘটনায় তাঁর প্রতিবেশী চার জনকে গ্রেফতার করে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বিসর্জনের গোলমালের পাশাপাশি কালীপুজোয় চাঁদা না দেওয়ার ক্ষোভও কাজ করেছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।

নিহতের নাম তাপস মাইতি (৩৯)। স্থানীয় বাসিন্দা ওই ব্যক্তি পেশায় গাড়িচালক। পুলিশ জানায়, সরস্বতী পুজোর ভাসানে নাচতে না পারার ক্ষোভকে ঘিরে দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তির সূত্রপাত। তা গড়ায় হাতাহাতি, মারামারিতে। অভিযোগ, প্রতিবেশী ছায়া সর্দার নামে এক মহিলার সঙ্গে তাপসের স্ত্রী বাতাসীর ঝগড়ার জেরে ছায়ার পরিজনেরা তাপসকে রাস্তায় ফেলে পেটান। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা তাপসকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানায়, ওই রাতে পোলেনাইটের একটি সরস্বতী পুজোর ভাসানে তাপসের গাড়িতে চাপিয়ে সাউন্ড বক্স নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনিই। গাড়ির সামনে একটি সাইকেল ভ্যানে জেনারেটর নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সাইকেল ভ্যানের আগে একটি রিকশা ও তারও আগের গাড়িতে ছিল প্রতিমা। নিউ টাউনে বিসর্জনের ঘাটে যাওয়ার পথে গানের তালে তালে চলছিল উদ্দাম নাচ।

পুলিশ জেনেছে, কোনও ভাবে তাপসের গাড়ির সঙ্গে সাইকেল ভ্যানটির সামান্য ঠোকাঠুকি হলে তাপস ও ভ্যান চালকের মধ্যে বচসা বাধে। তা নিয়ে ঝামেলার জেরে রেগে গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়িতে ফিরে যান তাপসবাবু। সাউন্ড বক্সের গাড়ি ফিরে যাওয়ায় নাচ-গান-হুল্লোড় বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, বিসর্জন মিছিল থেকে তাপসের ফিরে আসা নিয়ে রাতেই তাঁর স্ত্রী বাতাসীর সঙ্গে ঝ়গড়া শুরু হয় প্রতিবেশী ছায়া সর্দার নামে এক মহিলার। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ছায়া গালিগালাজ করায় বাতাসী প্রতিবাদ করেন। ইতিমধ্যে ছায়ার পরিবারের অন্য সদস্যরাও ঝগড়ায় যোগ দেন। তাপস এগিয়ে যান স্ত্রীর পাশে। অভিযোগ, এর পরেই মারামারি, চুলোচুলি শুরু। রাস্তায় ফেলে তাপসের বুকে-পেটে ঘুষি ও লাথি মারা হয়। রাস্তাতেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন ওই যুবক।

তাপসের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে রাতেই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। অভিযুক্ত ছায়া সর্দার, তাঁর দুই মেয়ে শকুন্তলা, পাপিয়া ও এক ছেলে অজয়কে আটক করা হয়। রবিবার দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ জেরার পরে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘তাপসের স্ত্রী পুলিশকে জানান, ভাসান ছেড়ে আসাই একমাত্র কারণ নয়। কালীপুজোয় তাপসের কাছে ১০০০ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। তাপস তা দেননি।’’ শনিবারের ঘটনার পিছনে চাঁদা না পাওয়ার ক্ষোভও কাজ করেছে বলে তাপসের পরিবারের অভিযোগ।

তদন্তকারীরাও মনে করছেন, ভাসানে নাচতে না পারাটাই মৃত্যুর পিছনে একমাত্র কারণ নয়। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘এলাকা ঘুরে জানা গিয়েছে, দু’টি পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই বিবাদ ছিল। ঘটনার সময়ে এমন এক জনের উপস্থিতির কথা জানা গিয়েছে, যিনি ছায়াদের পরিবারের কেউ নন। মাইতি পরিবারের অভিযোগ, তিনিই বাইরে উস্কানি দিয়েছেন।’’ পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকেই সেই যুবক ও ছায়ার এক ছেলে গা ঢাকা দিয়েছে।

সব দিক মাথায় রেখেই পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ঘটনার পিছনে পুরনো শত্রুতা কাজ করেছে কি না, সর্দার পরিবারের বাইরেও আর কাদের ভূমিকা রয়েছে, সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পোলেনাইটে। দোষীদের কড়া শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর বক্তব্যকে সমর্থন করে স্থানীয় কাউন্সিলর বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যাতে এই ধরনের ঘটনা থেকে মানুষ পরবর্তীকালে শিক্ষা নিতে পারে।’’

Saraswati Puja Immersion Salt Lake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy