Advertisement
E-Paper

আর্থিক প্রতারণার শিকার, মেয়ের বিয়ের খরচ জোটাতে পথে পথে ঘুরছেন মা

অর্থলগ্নি সংস্থায় জমা রাখা সঞ্চয়ের সার্টিফিকেট আর একগুচ্ছ অভিযোগপত্র সঙ্গে নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন এক মা। নিজের অসহায়তার প্রমাণ হিসাবে সঙ্গে রেখেছেন মেয়ের বিয়ের কার্ড।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা জমা রাখার কাগজ হাতে পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা জমা রাখার কাগজ হাতে পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৫
Share
Save

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার ঘরে পড়ে রয়েছে সঞ্চয়ের ধন।

সেই টাকা উদ্ধার করতে প্রশাসন থেকে নবান্ন— সর্বস্তরে দরবার করা হয়েছে। সামনে চলে এসেছে মেয়ের বিয়ে। কোনও মতে সেই বিয়ের খরচটুকু তুলতে সরকারি প্রকল্পের টাকা পাওয়ার জন্য দরখাস্তও করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও আশার আলো দেখতে পায়নি পরিবার। এমনই পরিস্থিতিতে অর্থলগ্নি সংস্থায় জমা রাখা সঞ্চয়ের সার্টিফিকেট আর একগুচ্ছ অভিযোগপত্র সঙ্গে নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন এক মা। নিজের অসহায়তার প্রমাণ হিসাবে সঙ্গে রেখেছেন মেয়ের বিয়ের কার্ড।

ব্যারাকপুরের কাছে জেটিয়ার বাসিন্দা পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বামী ওষুধের দোকানে কাজ করেন। টানাটানির সংসারে তাঁদের প্রধান ভরসা ছিল মায়ের বাড়ি বিক্রি বাবদ পাওয়া টাকাটুকু। প্রতিবেশীর পরামর্শে সেই টাকা এবং নিজের জমানো অর্থ পাপড়ি লগ্নি করেছিলেন একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায়। এক বছরের মধ্যে সেই সংস্থা বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে গত এক দশক ধরে সেই টাকা উদ্ধারে নবান্ন থেকে কালীঘাট ছুটে বেড়িয়েছেন পাপড়ি। কিন্তু হতাশা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। এর আগে এক বার মেয়ের বিয়ের ঠিক হয়েও টাকার অভাবে আটকে যায়। দু’বছর আগে ফের মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন পাপড়ি। এ বারও সেই একই সমস্যার মুখোমুখি তাঁরা।

পাপড়ি জানান, তাঁর স্বামী আগে একটি ভাল সংস্থায় চাকরি করতেন। তখন তাঁর কিছু সঞ্চয় হয়েছিল। ২০১২ সালে তাঁর মা রমা বাগচীর সঙ্গে সেই সঞ্চয়ের অর্থ ওই অর্থলগ্নি সংস্থায় গচ্ছিত রাখেন তিনি। পাপড়ির কথায়, ‘‘২৮ লক্ষ টাকা আটকে রয়েছে। মা বাড়ি বিক্রির পুরো টাকাটাই গচ্ছিত রেখেছিলেন সেখানে। একটি প্রকল্পের আওতায় প্রথম কয়েক মাস কিস্তিতে কিছু টাকা দিয়েছিল ওরা। তার পরে সংস্থা বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে সেই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছি। জানি না আদৌ টাকা ফেরত পাব কিনা। এই মুহূর্তে যা অবস্থা, তাতে বিয়ের টাকাটুকু জোগাড়ের চেষ্টা করতে নবান্ন থেকে কালীঘাট সর্বত্র ছুটেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি।’’

পাপড়ি জানান, কালীঘাট থেকে এক বার জেটিয়া থানায় ফোন করে দেওয়া হয়েছিল। তার পরে থানা থেকে মা-মেয়েকে ডেকে কথা বলা হয়। কিন্তু কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পাপড়ি বলেন, ‘‘আগরপাড়ায় ওই সংস্থার অফিস ছিল। এক সময়ে সেখানে আমাদের পাওনার হিসাব জমা দিয়ে দরখাস্ত করেছিলাম। সেই অফিস এখন বন্ধ। কলকাতা হাই কোর্টের এক বিচারপতি, যিনি ওই মামলা দেখছেন, তাঁর দফতরেও যোগাযোগ করেছি। সর্বত্র ঘুরছি, কিন্তু কোনও সুরাহা হচ্ছে না।’’

এক দশক আগে এ রাজ্যে ঘটে যাওয়া বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির শিকার হয়ে বহু মানুষ সর্বস্ব খুইয়েছিলেন। সেখানে গচ্ছিত রাখা টাকা কোনও দিন ফেরত পাবেন, তাতে সংসারের আর্থিক দুরবস্থা কাটবে— এই আশায় পাপড়িদের মতো বহু মানুষ আজও দিন গুনছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

old Cheat

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}