Advertisement
১৮ মে ২০২৪
হরিদেবপুর

ফের মার প্রতিবাদীকে, ধৃত ৩

মত্ত এক দল যুবকের আচরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফের মার খেলেন প্রতিবাদীরাই। শনিবার ভোরে হরিদেবপুরের এই ঘটনায় তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জয়দেব ঘোড়ুই, বিশ্বজিৎ বর এবং বাবাই মণ্ডল নামে ওই তিন জন ওই এলাকারই বাসিন্দা।

ভাঙচুরের পরে। শনিবার, অরবিন্দনগরে। — নিজস্ব চিত্র।

ভাঙচুরের পরে। শনিবার, অরবিন্দনগরে। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩১
Share: Save:

মত্ত এক দল যুবকের আচরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ফের মার খেলেন প্রতিবাদীরাই। শনিবার ভোরে হরিদেবপুরের এই ঘটনায় তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জয়দেব ঘোড়ুই, বিশ্বজিৎ বর এবং বাবাই মণ্ডল নামে ওই তিন জন ওই এলাকারই বাসিন্দা। ঘটনায় অভিযুক্ত আরও দুই যুবক পাপাই ঘোড়ুই ও বাপ্পা ডাকুয়া পলাতক।

প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদীর উপরে অত্যাচারের ঘটনা এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর দুয়েক আগে চোলাই-জুয়ার প্রতিবাদ করায় খুন হতে হয়েছিল উত্তর চব্বিশ পরগনার বামনগাছির যুবক সৌরভ চৌধুরীকে।

পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার ভোর পৌনে চারটে নাগাদ হাওড়া স্টেশন যাওয়ার জন্য হরিদেবপুরের অরবিন্দনগরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ বৈকুণ্ঠ জানা, তাঁর পুত্র নবীন জানা-সহ আরও পাঁচ আত্মীয়। আদতে মেদিনীপুরের বাসিন্দা বৈকুণ্ঠবাবুরা অরবিন্দনগরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। কালীপুজো উপলক্ষে এ দিন ভোরে তাঁরা মেদিনীপুরের বাড়ি যাওয়ার জন্য বার হন। অভিযোগ, মাঝরাস্তায় হঠাৎ মত্ত অবস্থায় ৫ যুবক তাঁদের পথ আটকায়। নবীনবাবুর কথায়, ‘‘কোনও কারণ ছাড়াই পথ আটকে ওই যুবকেরা বলতে থাকে, তোরা কে? এত রাতে কোথায় যাবি?’’ অভিযোগ, এর পরেই দু’পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে হাতাহাতি শুরু হয়। ওই বৃদ্ধ ও তাঁর ছেলে ছাড়াও তাঁদের সঙ্গে থাকা আত্মীয়দের মারধর করা হয়। বৈকুণ্ঠবাবু জানান, ওই সময়ে তিনি মোবাইলে অরবিন্দনগরের ওই বাড়ির মালিক গোরাচাঁদ ভুঁইয়াকে গোটা ঘটনাটি জানাতেই ছুটে আসেন তিনি। গোরাচাঁদবাবুকে দেখে চলে যায় ওই মত্ত যুবকেরা।

ভোর চারটে নাগাদ ভাড়াটেদের নিয়ে গোরাচাঁদবাবু বাড়ি ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরেই ওই মত্ত যুবকেরা ফের তাঁর বাড়ির সামনে এসে গালিগালাজ শুরু করে বলে অভিযোগ। ইট, কাঠের বাটাম দিয়ে তারা গোরাচাঁদবাবুর বাড়ির দরজা ভেঙে ফেলে। উন্মত্ত ওই যুবকেরা বাড়ির মধ্যে ঢুকে জানলার কাচ ভেঙে দেয়। গোরাচাঁদবাবুর মেয়ে পায়েল ভুঁইয়াকে লক্ষ্য করেও গালিগালাজ দিতে শুরু করে ওই যুবকেরা। এমনকী তাকে খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পেশায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মচারী গোরাচাঁদবাবুর কথায়, ‘‘ভাঙচুরের সময়ে আমরা ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। ওরা যে ভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছিল, ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’

ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ আতঙ্কিত পায়েল লালবাজারে ১০০ ডায়ালে ফোন করে পুলিশকে গোটা ঘটনাটি জানান। গোরাচাঁদবাবুর অভিযোগ, ‘‘খবর দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে পুলিশ আসে। এমনকী বাড়ি ভাঙচুরের পরে শনিবার সকালে বাড়িতে পুলিশ পিকেটও বসেনি।’’ এই ঘটনায় শনিবার সকালে গোরাচাঁদবাবু ও তাঁর মেয়ে পায়েল হরিদেবপুর থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ দায়ের করেন। একটি বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ও অন্যটি পায়েলকে গালিগালাজ ও খুনের হুমকির মামলা।

ডিসি (সাউথ-ওয়েস্ট) মিরাজ খালিদ বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে পুলিশের দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশ পিকেট প্রসঙ্গে ডিসি’র মন্তব্য, ‘‘বাড়ির লোকেরা পুলিশ পিকেট বসানোর কথা বলেননি।’’

শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল গিয়ে দেখা গেল, গোটা বাড়িতে ইটের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে। ইটের আঘাতে ভেঙে পড়ে রয়েছে জানালার কাচ। বাড়ির বিছানা থেকে শুরু করে ফ্রিজের উপর— সর্বত্র ছিল ইটের টুকরো। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, জয়দেব ঘোড়ুইকে এর আগেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এলাকাবাসীরা জানান, অতীতে জয়দেব ও তার সঙ্গীরা তিন বার মত্ত অবস্থায় এলাকাবাসীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল। মত্ত অবস্থায় বছর খানেক আগে জয়দেব গ্রেফতার হলেও জামিন পেয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police lynch
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE