সম্পদদেবী বৈদ
জ্বর, বমি কিংবা গায়ে ব্যথা নয়। হঠাৎ শরীরে অস্বস্তি, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া। তার পরে খিঁচুনি, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। পরিণতি— মৃত্যু। নেপথ্যে সেই ডেঙ্গি!
বৃহস্পতিবার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাষট্টি বছরের সম্পদদেবী বৈদ। কয়েক দিন ধরে জ্বর কিংবা বমি, অথবা গায়ে র্যাশ বেরোনো— এমন কোনও উপসর্গ দেখা দেয়নি তাঁর। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হয়। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, সেই রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার মারা যান প্রৌঢ়া। এই ঘটনার পরে নতুন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বহু মানুষের মনে। এ-ও কি তা হলে ডেঙ্গির নয়া চেহারা?
চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল সম্পদদেবীর। শুক্রবার অমিতাভবাবু জানান, রোগীর হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল। তার পরে ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হল। কিছু ক্ষণ পরে রোগীর আরও এক বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তখনই তিনি মারা যান। কিন্তু কেন এমন হল হঠাৎ? অমিতাভবাবু জানান, যে কোনও সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেই অনেক সময় সংক্রমণের উপসর্গ দেখা যায় না। আক্রান্তের শরীরে জীবাণু বাসা বাঁধলেও, বাইরে থেকে দেখে মনে হয় সব ঠিক আছে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘সাব ক্লিনিক্যাল’ বলা হয়। ডেঙ্গিতেও সেটা হয়। সম্পদদেবীর ক্ষেত্রে সাব ক্লিনিক্যাল স্তর থেকে লাফিয়ে ‘ডেঙ্গি শক সিনড্রোম’ হয়। অর্থাৎ, হঠাৎ জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে। সম্পদদেবী জীবাণুর সংক্রমণে ভুগলেও আগে কিছুই বুঝতে পারেননি। জীবাণু হঠাৎ তেড়েফুঁড়ে একাধিক অঙ্গে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। যার জেরে তাঁর হৃদযন্ত্র বিকল হয়।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন এ বছর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তের দেহে ডেঙ্গির জীবাণু দ্রুত প্রভাব ছড়াচ্ছে। তাই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর দেহে উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগে বড় বিপদ ঘটে যাচ্ছে। যদিও অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘সাব ক্লিনিক্যাল অবস্থা থেকে লাফিয়ে ডেঙ্গি শক সিনড্রোম-এ পরিণত হওয়ার ঘটনা খুব বেশি দেখা যায় না। তাই অতিরিক্ত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’
চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে সব সময় জ্বর হতেই হবে, এমন ধারণা নিয়ে বসে থাকলে কিন্তু ভুল হবে। তাঁদের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে শরীরে অস্বস্তি হলে, মুখ ফুলে গেলে, প্রস্রাব কম হলে কিংবা শরীরের তাপমাত্রা না বাড়লেও দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে এনএস ১ পজিটিভ কিংবা আইজিএম পজিটিভ হল কিনা, সেটা নিয়ে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। ডেঙ্গি আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং নতুন রূপে দেখা দিচ্ছে। তাই ‘ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন’ অর্থাৎ রোগীকে সামনাসামনি দেখে এবং উপসর্গ শুনে যদি কোন চিকিৎসকের ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে সন্দেহ হয় তাহলে দ্রুত ফ্লুইড দেওয়া শুরু করা হোক। কারণ, রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরে অনেক সময় চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
ছদ্মবেশী ডেঙ্গি কিন্তু শুধু বয়স্কদের শরীরে হানা দেয় না। হানা দেয় যে কোনও বয়সীদের। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন শিশুরোগ চিকিৎসকেরা। সব ক্ষেত্রে জ্বর আসতে হবে তা নয়। অনেক সময় শরীরের তাপমাত্রা বেশি উঠছে না। কিন্তু শিশুকে দেখে মনে হচ্ছে কোনওরকম শারীরিক অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। তা হলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত বলে পরামর্শ দিচ্ছেন শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘ডেঙ্গি সংক্রমণের ক্ষেত্রে টানা নজরদারি এবং ফ্লুইড খুব জরুরি। জ্বর আসেনি, তাই নিশ্চিন্ত থাকা যায়, এমন মনে করলে ভুল হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy