Advertisement
E-Paper

চকচকে আপেল খান? তৈরি রাখুন স্বাস্থ্যবিমাও

খাস কলকাতা বা শহরতলিতে রমরমিয়ে বিকোচ্ছে ‘ক্লাস ওয়ান’ আপেল। খদ্দের এক বার হাতে নিয়েই খুশ। দু’বার ভাবছেন না। ভাল জিনিস— তাই দামটা একটু বেশি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ১৬:১২
আশুতোষ ইনস্টিটিউটের সামনে সাজিয়ে গুছিয়ে এ রকম আপেলই বিক্রি হচ্ছিল। সেই আপেল ঘষে পরীক্ষা করছেন পুরকর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।

আশুতোষ ইনস্টিটিউটের সামনে সাজিয়ে গুছিয়ে এ রকম আপেলই বিক্রি হচ্ছিল। সেই আপেল ঘষে পরীক্ষা করছেন পুরকর্মীরা।—নিজস্ব চিত্র।

লাল চকচকে আপেল। দেখলেই লোভ লাগে। এতটাই চকচকে যে, ভাল করে দেখলে আপেলের গায়ে মুখ দেখা যায়।

খাস কলকাতা বা শহরতলিতে রমরমিয়ে বিকোচ্ছে ‘ক্লাস ওয়ান’ আপেল। খদ্দের এক বার হাতে নিয়েই খুশ। দু’বার ভাবছেন না। ভাল জিনিস— তাই দামটা একটু বেশি। কোনও ব্যাপারির দাবি কাশ্মীরের বাগান থেকে নিয়ে আসা, কেউ আবার বলছেন চিন থেকে আমদানি করা আপেল।

কিন্তু, সেই আপেল দীর্ঘ দিন খেলে স্বাস্থ্য রক্ষার বদলে আপনাকে সটান যেতে হতে পারে হাসপাতালে! কারণ যে চকচকে জেল্লা দেখে আপনি টাটকা ভেবে আপেল কিনছেন, সেই জেল্লা আদৌ আপেলের নয়, ওটা প্যারাফিনের। গাড়ি থেকে জুতো বা চামড়া যে কোনও জিনিসে পালিশ করতে যে প্যারাফিন ব্যবহার করা হয়, তা দিয়েই পালিশ করা হচ্ছে আপেল। আর আমরা সেটাই সেরা আপেল ভেবে নিশ্চিন্ত মনে খাচ্ছি।

দেখুন ভিডিয়ো...

মঙ্গলবার উত্তর কলকাতার দমদম রোডে কুমার আশুতোষ ইনস্টিটিউটের সামনে সাজিয়ে গুছিয়ে এ রকম আপেলই বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু, কয়েক জন ক্রেতার একটু সন্দেহ হয়। তাঁদেরই এক জন নিছক সন্দেহের বশেই ফলের ঝুড়ির গায়ে একটা আপেল হালকা করে ঘষেন। আর তাতেই পর্দা ফাঁস। আপেলের গা থেকে একটা সাদা আস্তরণ উঠে আসে। সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতাকে চেপে ধরেন তাঁরা। খবর দেওয়া হয় স্থানীয় কাউন্সিলরকেও। কলকাতা পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গৌতম হালদার পুরসভার স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুরক্ষা দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন।

আরও পড়ুন
নতুন ভাড়া চালু হতেই নয়া হয়রানি

আপেলের গায়ে লেগে থাকা সাদা আস্তরণ দেখে পুর আধিকারিকরা বুঝতে পারেন, ফলগুলির গায়ে মোম দিয়ে পালিশ করা হয়েছে। তারা আরও নিশ্চিত হতে আপেল জল দিয়ে ধুয়ে দেখেন। দেখা যায় মোম উঠে যাওয়া অংশে জল লাগছে কিন্তু মোম থাকা অংশে জল থাকছে না। পুর আধিকারিকদের সামনে বিক্রেতারাও তখন স্বীকার করেন মোম লাগিয়ে পালিশ করার কথা।

গৌতম হালদারই খবর দেন সিঁথি থানায়। থানার আধিকারিকরা তল্লাশি করে ওই এলাকায় দু’টি ফলের দোকানে একই রকম মোম পালিশ আপেল খুঁজে পান। ফল বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তাঁরা দুই দোকানদারকে আটক করেছে। গৌতম বলেন, “গোটা ঘটনা আমি মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষকে জানিয়েছি। কারণ, এই আপেল যে শুধু এখানে বিক্রি হচ্ছে এমন নয়, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তেই এ রকম মোম মাখানো ফল বিক্রি হচ্ছে। তাই বিপদটা অনেক বড়।

কিন্তু, বিপদটা কী?

চিকিৎসকরা বলছেন এই আপেল দীর্ঘদিন ধরে খেলে হাসপাতালে যাওয়া অনিবার্য। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “মোম বলতে আসলে পেট্রোপণ্য প্যারাফিন ব্যবহার করা হয়। মানুষের অন্ত্র এবং পাকস্থলীর জন্য প্যারাফিন অত্যন্ত ক্ষতিকর। অন্ত্রে প্যারাফিনের আস্তরণ জমলে বিষক্রিয়া যেমন হতে পারে, তেমনি শ্বাসকষ্ট বা হজমের সমস্যার মতো নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।” ওই চিকিৎসক আরও সাবধান করে বলছেন, ‘‘ডায়াবিটিক এবং যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাঁদের পক্ষে প্রাণঘাতীও হতে পারে এই মোম-আপেল।’’

আরও পড়ুন
টাকা হাতাতেই পরিকল্পনা করে প্রৌঢ়াকে খুন

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় ওই দুই বিক্রেতা জানিয়েছেন, তাঁরা এই আপেল মধ্য কলকাতার মেছুয়ার পাইকারি ফলবাজার থেকে কিনেছিলেন। সেই সূত্র অনুযায়ী তদন্তকারীরা মেছুয়ার সেই বিক্রেতাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই ফলপট্টির একাধিক ব্যবসায়ী এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। এই ফলপট্টিতেই আপেল আসার পর মোম দিয়ে পালিশ করা হয়।

Paraffin apple KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy