Advertisement
E-Paper

নষ্ট হচ্ছে সময়, বিরক্ত যাত্রী ও বাসমালিকেরা

যাত্রী-ভোগান্তি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে বাস চালানোই বন্ধ করে দিয়েছেন ৩৪বি রুটের বাসমালিকেরা। ডানলপ ও টালা সেতু হয়ে ধর্মতলা যাওয়ার পরিবর্তে এ দিন স্ট্যান্ডেই দিনভর দাঁড়িয়ে ছিল ওই রুটের প্রায় ৪০টি বাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩২
থমকে: স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ৩৪বি রুটের বাস। মঙ্গলবার, ডানলপ বিটি রোড এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

থমকে: স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ৩৪বি রুটের বাস। মঙ্গলবার, ডানলপ বিটি রোড এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

অন্তত আড়াই ঘণ্টা! গন্তব্যে পৌঁছতে গেলে উত্তর কলকাতা জুড়ে এটাই এখন সময় নষ্টের রোজনামচা। পুজোর ভিড় নয়, টালা সেতু বন্ধের জেরে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কাউকে এই দীর্ঘ সময় থাকতে হচ্ছে বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে। কারও আবার ফুটপাতে দাঁড়িয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে কোন পথে ঠিক বাসটা আসবে, বুঝতে না পেরে। টালা সেতুতে বাস ও ভারী যানবাহন বন্ধ থাকায় সব চাপ গিয়ে পড়ছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন বেলগাছিয়া সেতুতে। ব্যস্ত সময়ে তো বটেই, বিকেল পর্যন্ত সেখানেও হাঁসফাঁস অবস্থা।

যাত্রী-ভোগান্তি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে বাস চালানোই বন্ধ করে দিয়েছেন ৩৪বি রুটের বাসমালিকেরা। ডানলপ ও টালা সেতু হয়ে ধর্মতলা যাওয়ার পরিবর্তে এ দিন স্ট্যান্ডেই দিনভর দাঁড়িয়ে ছিল ওই রুটের প্রায় ৪০টি বাস। ওই রুটের বাসমালিক সংগঠনের সভাপতি ধনঞ্জয় রায় বললেন, ‘‘সেতুর জন্য আমাদের মেরে ফেলা হয়েছে। আগে গোপাললাল ঠাকুর রোড, টালা সেতু হয়ে ১২ কিলোমিটারের রুট ছিল আমাদের। তাতে তেলের খরচও ঠিকমতো উঠত কি না সন্দেহ। এখন সেটাই ঘুরিয়ে ৩০ কিলোমিটারের পথ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য রুট না দিলে আমরা বাস চালাব না।’’

প্রায় সব রুটেরই বাসচালকদের দাবি, আগের দু’ঘণ্টার রুট এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টায়। বি টি রোড ধরে কলকাতার দিকে আসা সব বাসই হয় চিড়িয়ামোড় দিয়ে নর্দার্ন অ্যাভিনিউ হয়ে, নয়তো পাইকপাড়া দিয়ে টালা পার্কের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেলগাছিয়া সেতু হয়ে আর জি কর হাসপাতালের সামনের জট পেরিয়ে বাসগুলির শ্যামবাজারের দিকে যাওয়ার কথা। তবে বেলগাছিয়া সেতুতে উঠেই থমকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। পাশের ক্যানাল ইস্ট বা ওয়েস্ট রোডে ঢুকেও রেহাই নেই। সেখানেও গাড়ির লম্বা লাইন! কোন পথে কোন বাস যাবে, সেই নির্দেশিকা না মেলায় এ দিনও চরম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের একটি বড় অংশের।

সিঁথির মোড়ে দাঁড়ানো ঝুমুর নস্কর বললেন, ‘‘ঘণ্টাখানেক হয়ে গেল, কলেজ স্ট্রিটের বাস পাচ্ছি না। আগে ৩৪বি ধরে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে নেমে কলেজ স্ট্রিটে যেতাম। সেই বাসও তো শুনছি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ভিআইপি রোড, ফুলবাগান, মৌলালি হয়ে ধর্মতলার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। তা হলে যাব কীসে?’’ একই রকম বিভ্রান্ত বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বাগবাজারে চিকিৎসা করাতে যাওয়া শ্যামল দত্ত। বললেন, ‘‘নর্দার্ন অ্যাভিনিউ দিয়ে আমাদের বাস ঘুরিয়ে দিয়েছে। না বুঝে নেমে পড়েছি। সঙ্গে বয়স্ক লোক দেখেও কোনও ট্যাক্সি দাঁড়াচ্ছে না। একটা দাঁড়িয়েছিল, ৫০০ টাকা চাইছে।’’

পরিস্থিতি বুঝে অটোচালকেরাও আকাশছোঁয়া ভাড়া হাঁকছেন বলে অভিযোগ। এক যাত্রীর দাবি, ডানলপ থেকে নোয়াপাড়া পর্যন্ত যেতে তাঁর থেকে ১৫০ টাকা চাওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে দমদম রোডেও ভাড়া বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। লালবাজারের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ অবশ্য জানিয়েছে, অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন ছিল রাস্তায়। বাড়তি ভাড়া নিয়েও থানাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।

৩০এ রুটের বাসচালক রাজু দাসের আবার দাবি, যাত্রীরা তাঁদের বাস ছাড়ার সময়ে আরও পৌনে দু’ঘণ্টা এগিয়ে দিতে বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমনিতে সকাল ৮টা ৪৫ থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে বি বা দী বাগ দিয়ে ধর্মতলা যায় আমাদের বাস। তার পর থেকে সোজা ধর্মতলা। যাত্রীরা বলছেন, অফিসে সময়ে পৌঁছনো যাচ্ছে না। ৮টা ৪৫-এর বদলে সকাল সাতটা থেকে বাস চালান। হয় নাকি? রুটটাই না এ বার তুলে দিতে হয়।’’

Traffic Bus Tala Bridge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy