Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Dhakuria Fire

পুড়েছে সব বই, আশায় ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে চলেছে তিন পড়ুয়া

ঢাকুরিয়া স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনের ধারের বস্তিতে বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায় প্রায় ১০টি ঘর। ওই ঘরগুলির মধ্যেই দু’টি ঘর ছিল কুসুম এবং সুমিতা-বিশ্বজিৎদের।

ঢাকুরিয়া স্টেশন রেল স্টেশন সংলগ্ন বস্তিতে পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে বই খুঁজতে ব্যস্ত একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কুসুম সরদার।

ঢাকুরিয়া স্টেশন রেল স্টেশন সংলগ্ন বস্তিতে পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে বই খুঁজতে ব্যস্ত একাদশ শ্রেণির ছাত্রী কুসুম সরদার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫৮
Share: Save:

আগুন লাগার পরে পেরিয়ে গিয়েছে এক দিন। এখনও ওই ধ্বংসস্তূপে কি কোনও বই অক্ষত আছে? এমনই আশা নিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বই খুঁজছিল কুসুম সর্দার, সুমিতা নস্কর ও বিশ্বজিৎ নস্করেরা। বিধ্বংসী আগুনে মাটিতে মিশে গিয়েছে তাদের ঘর। অনেক খুঁজে প্রাপ্তি বলতে হাতা, খুন্তি, বাটি আর বইয়ের কয়েকটি পোড়া পাতা। আধপোড়া সেই পাতা হাতে তখন চোখে জল কুসুমের। বাকি তিন জনের মধ্যে সব থেকে বড় সে। সবে দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠেছে। তার উঁচু ক্লাসের বন্ধুদের থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বই জোগাড় করে পড়াশোনাও শুরু করে দিয়েছিল কুসুম। কিন্তু এ বার উপায়!

ঢাকুরিয়া স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনের ধারের বস্তিতে বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায় প্রায় ১০টি ঘর। ওই ঘরগুলির মধ্যেই দু’টি ঘর ছিল কুসুম এবং সুমিতা-বিশ্বজিৎদের।

কুসুম এ দিন বলে, ‘‘ওই সময়ে ঘরে ছিলাম না। যখনই জানতে পেরেছি, তাড়াতাড়ি এসে ঘরের জিনিসপত্র বার করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের বইগুলো বার করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ভিতরে তখন দাউ দাউ করে সব জ্বলছিল। তাই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে মা কিছু জিনিস বার করার সময়ে আমার মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বার করেছিল।’’ কুসুম বলে চলে, ‘‘দ্বাদশে ওঠার পরে এক বছরও সময় পাওয়া যায় না, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলে আসে। আবার বই কেনার ক্ষমতাও নেই। কী ভাবে বই জোগাড় করে পড়াশোনা করব? কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

কুসুমদের বস্তির কার্যত ঘাড়ের উপর দিয়ে কয়েক মিনিট অন্তর ছোটে লোকাল ট্রেন। ঘরের যেখানে সে পড়াশোনা করে, তার থেকে পাঁচ-দশ ফুট দূরত্বে ট্রেন যায়। পড়াশোনার সময়ে ট্রেনের শব্দ, হেডলাইটের জোরালো আলো, কিছুই তার মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। কিন্তু এ বার কী হবে কুসুমের!

অন্য দিকে, সুমিতা নস্কর পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে এবং তার ভাই বিশ্বজিৎ সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তাদের প্রথম পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই শুরু হওয়ার কথা। তারা স্কুল থেকে বই পায়। কিন্তু সেই বই পুড়ে গিয়েছে। এ বার সেই বই আবার পাবে কি? এই চিন্তায় দুই ভাইবোন। সুমিতা বলে, ‘‘বাড়ির সব মূল্যবান জিনিসের সঙ্গে আমাদের সব বই পুড়ে গিয়েছে। জানি না, এত কম সময়ের মধ্যে স্কুল থেকে আবার বই পাব কি না।’’

অগ্নিকাণ্ডে যাঁদের ঘর পুড়েছে, তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় একটি ক্লাব। সেখানেই আপাতত পরিবারের সঙ্গে আছে কুসুম, সুমিতা, বিশ্বজিৎরা। কিন্তু বার বার সেই ক্লাব থেকে রেললাইন টপকে ভস্মীভূত ঘরে চলে আসছে তারা। তিন কিশোর-কিশোরী হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছে পোড়া ধ্বংসস্তূপ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhakuria Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE