বিকাশ ভবনের সামনে এখনও বসে চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। শনিবার তা তৃতীয় দিনে পড়ল। বিকাশ ভবনের সামনের রাস্তায় তাঁরা বসে আছেন। বিকেলে করুণাময়ী পর্যন্ত একটি মিছিল করবেন। রাস্তায় বসে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার চাকরিহারাদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ করেছিল পুলিশ। অনেকেই মার খেয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন। সূত্রের খবর, সেই মার খাওয়া শিক্ষকদের স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীরা শনিবার সল্টলেকে আসবে। রাস্তায় বসে আন্দোলনকারীদের কয়েক জন তাদের পড়াবেন। এ ছাড়া, বিকেলে পুলিশের হাতে কলম এবং চকোলেট তুলে দেওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে।

বিকাশ ভবনের সামনে পুলিশি প্রহরা। শনিবার সকালে। —নিজস্ব চিত্র।
শনিবার এবং রবিবার ছুটির দিন, ফলে বিকাশ ভবন বন্ধ থাকে। তাই সপ্তাহান্তের এই দু’দিন নতুন করে জোরালো কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করেননি আন্দোলনকারীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরের পর প্রথমে তাঁরা বিকাশ ভবন থেকে করুণাময়ী পর্যন্ত মিছিলে হাঁটবেন। যাঁরা মার খেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই চিকিৎসার প্রয়োজনে বাড়ি চলে গিয়েছেন। তবে তাঁদের স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের ডাকা হয়েছে। অনেকেই আসবে। তাদের রাস্তায় বসে পড়াবেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা।
আরও পড়ুন:
আন্দোলনকারীদের মূল দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে চাকরি তাঁদের হারাতে হয়েছে, সসম্মানে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। তার জন্য নতুন করে আর কোনও পরীক্ষায় তাঁরা বসতে চান না। বৃহস্পতিবার এই দাবি নিয়ে চাকরিহারারা বিকাশ ভবন ঘেরাও করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে আশ্বাস না-দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা উঠবেন না। সকাল থেকে এই অবস্থান কর্মসূচিতে দফায় দফায় অশান্তি হয়। পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এক সময়ে তাঁদের একাংশ বিকাশ ভবনের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকেও পড়েছিলেন। পরে দড়ি দিয়ে সেই দরজা বাঁধা হয়। সন্ধ্যায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছোয়। বিকাশ ভবনের কর্মচারীদের ছুটির পরেও তাঁদের বেরোতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। পুলিশ লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের বিকাশ ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। অনেকে জখম হন। তবে অবস্থান তোলেননি তাঁরা। ওই ঘটনার পর শুক্রবার পুলিশের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে জানানো হয়, চাকরিহারাদের অনেক বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁরা সরেননি। অনেক কর্মী, আধিকারিক আটকে পড়েছিলেন। তাঁদের নিরাপদে বার করে আনার জন্য পুলিশকে ন্যূনতম বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে। শনিবার সকালে বিকাশ ভবনের সামনে থেকে চাকরিহারা রূপা কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা অবস্থান চালিয়ে যাব। আজ আমাদের দুটো কর্মসূচি আছে। যে পুলিশ আমাদের মারধর করেছে, আমরা তাদের চকোলেট আর পেন দেব। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের পড়াব।’’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল হয়ে গিয়েছে। চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। তাঁদের মধ্যে যে শিক্ষকেরা ‘দাগি’ (টেন্টেড) নন, তাঁদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে শীর্ষ আদালত। তাঁরা বেতনও পাবেন। তবে নতুন করে তাঁদের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে হবে। এর প্রতিবাদেই বিক্ষোভ চলছে। অন্য দিকে, যাঁরা ‘দাগি’, চাকরি বাতিলের পাশাপাশি তাঁদের বেতন ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাঁদের একাংশ এসএসসি দফতরের সামনে অবস্থানে বসেছেন। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে তাঁদের কর্মসূচি চলছে। অভিযোগ, এসএসসি দফতরের ভিতরে কমিশনের ১২ জন কর্মচারী আটকে আছেন। তাঁদের বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। বিক্ষোভকারীদের দাবি, কমিশনের চেয়ারম্যানকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং রিভিউ পিটিশনের কী অবস্থা, সে সম্পর্কে জানাতে হবে। এসএসসি দফতরের সামনে অবস্থানরত বিপ্লব বিবার বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, বৈঠক করেছি। কিন্তু আমাদের নিয়ে কী করা হবে, তা পরিষ্কার করছে না সরকার বা এসএসসি। আমাদের বেতন বা স্কুলে ফেরা নিয়েও কিছু বলা হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলন করছি।’’