Advertisement
E-Paper

টাকা সাদা করতে রোগীকে সাহায্যের ‘টোপ’

বিরল উইলসন রোগে আক্রান্ত একমাত্র মেয়ে। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে দশ বছর ধরে হন্যে হয়ে ঘুরছেন দমদমের বাসিন্দা এক দম্পতি। কিন্তু হঠাৎই গত কয়েক দিনে ‘খয়রাতির’ বর্ষণে স্তম্ভিত তাঁরা।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৫

বিরল উইলসন রোগে আক্রান্ত একমাত্র মেয়ে। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে দশ বছর ধরে হন্যে হয়ে ঘুরছেন দমদমের বাসিন্দা এক দম্পতি। কিন্তু হঠাৎই গত কয়েক দিনে ‘খয়রাতির’ বর্ষণে স্তম্ভিত তাঁরা। চিকিৎসার জন্য ‘মুক্ত হস্তে’ লক্ষ লক্ষ টাকা দান করতে দম্পতিকে ফোন করছেন অনেকেই। তবে সেই দানের পিছনে আসল উদ্দেশ্য ঘুর পথে কালো টাকা সাদা করে নেওয়া।

ছ’বছর কোমায় আচ্ছন্ন ছিলেন ওই তরুণী। তিন বছর আগে জ্ঞান ফিরেছে। আপাতত সারা দিন শুয়েই থাকেন, অনুভূতি প্রকাশের এক মাত্র পথ কান্না। তিনি যাতে আর কোমাচ্ছন্ন না হন তাই একটি বিশেষ বিদেশি ওষুধ প্রয়োজন বলেই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন।

দমদমের হরকালী কলোনির একটি আবাসনে এক কামরার ঘরে বাস পরিবারটির। ছাপাখানার সামান্য ব্যবসার টাকায় কোনও মতে সংসার চলে। ঘরের কোনায় রাখা ফ্রিজে শুধুই তরুণীর জন্য ওষুধ রাখা। টানাটানির সংসারে রোজের ২০০ টাকা করে ফিজিওথেরাপির খরচটুকুও জোগাড় করতে পারা যাচ্ছে না। ফলে চিকিৎসার খরচকে ঘিরে চরম টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবুও টাকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেই দাঁতে দাঁত চেপে মেয়ের চিকিৎসা জন্য ‘সাদা’ টাকার পথ চাইছেন ওই দম্পতি। পশ্চিমবঙ্গে এই রোগের গুটি কয়েক রোগী রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ওই তরুণী এক জন। বছর কয়েক আগে রোগের খবর প্রকাশ্যে এলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকেই তাঁর চিকিৎসার জন্য অনুদান আসে পরিবারের কাছে। তরুণীর নামে যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, শুভানুধ্যায়ীরা সেখানে টাকা জমা দেন। তরুণীর বাবার কথায়, ‘‘৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে হঠাৎই কেউ দু’লক্ষ, কেউ তিন লক্ষ করে টাকা দিতে চাইছেন। তাঁরা চাইছেন মেয়ের অ্যাকাউন্টে কালো টাকা ফেলে সাদা করতে। আমরা রাজি নই।’’

ওই দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুধু টেলিফোনে নয়, ব্যবসাস্থলেও অনেকেই তাঁদের প্রস্তাব দিচ্ছেন মেয়ের অ্যাকাউন্টে কালো টাকা ঢুকিয়ে সাদা করার। যার তাঁরা ঘোর বিরোধী। সেখানে কথা বলার সময়ও এমনই একটি টেলিফোন আসতে দেখা গেল। যা প্রত্যাখ্যান করলেন তরুণীর মা।

কেন্দ্রীয় সরকার ৫০০-১০০০-এর নোট বাতিল করার পরে নানা জায়গাতেই কালো টাকা সাদা করার চক্র সক্রিয় হয়েছে। কলকাতাতেই পুলিশের হাতে কয়েক লক্ষ টাকার বাতিল নোট ধরা পড়েছে। তাই ওই দম্পতিকে মেয়ের চিকিৎসার খরচ জুগিয়ে কালো টাকা সাদা করার টোপ দুর্বৃত্তায়নের হিমশৈল চূড়া বলেই মনে করছেন অনেকে।

তরুণীর মা বলেন, ‘‘উইলসন ডিজিজ আক্রান্তদের সংগঠনের সহায়তায় প্রয়োজনীয় বিদেশি ওষুধ বাজারের তুলনায় অর্ধেক দামে পাই। প্রতি চার মাসের ওষুধের জন্যই লাগে ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা। আর্থিক সঙ্কটের কথা জানিয়ে ওষুধ সংস্থার কাছে চিঠি লিখেছিলাম। ওরা গত অক্টোবরে বিনা মূল্যে চার মাসের ওষুধ পাঠিয়েছে। কিন্তু এর পরে কী হবে সেটাই ভাবছি।’’

patient black money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy