Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কংগ্রেসের নবান্ন অভিযানে ভোগান্তি শহরবাসীর

রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জেরে ফের স্তব্ধ হল শহর। পুলিশের সামনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকল ধর্মতলার মতো শহরের প্রাণকেন্দ্র। যানজট-ভোগান্তি থেকে মঙ্গলবারেও রেহাই পেলেন না শহরবাসী। সৌজন্যে কংগ্রেসের ডাকা নবান্ন অভিযান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৪৪
Share: Save:

রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জেরে ফের স্তব্ধ হল শহর। পুলিশের সামনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকল ধর্মতলার মতো শহরের প্রাণকেন্দ্র। যানজট-ভোগান্তি থেকে মঙ্গলবারেও রেহাই পেলেন না শহরবাসী। সৌজন্যে কংগ্রেসের ডাকা নবান্ন অভিযান।

কাজের দিনে রাস্তা আটকে মিছিল-মিটিং করে সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় ফেলার জন্য বিভিন্ন সময়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলকে। গত সপ্তাহেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর কাজের দিনে মিছিল করার বিরুদ্ধে এক জনস্বার্থ মামলায় স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলিকে যুক্ত করার নির্দেশ দেন। তার কয়েক দিনের মধ্যেই একটি রাজনৈতিক দলের ডাকা বিক্ষোভের ফলে দীর্ঘ ক্ষণ অবরুদ্ধ থাকল শহরের একাংশ।

সবং-এর কলেজের মধ্যে ছাত্রহত্যা, কেতুগ্রামে ছাত্রী খুনের ঘটনা এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে এ দিন নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কংগ্রেসের ওই নবান্ন অভিযানকে আটকাতে এ দিন সকাল ১০টার পর থেকেই থেকেই রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ এবং ডাফরিন রোডে ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ। ফলে সকাল থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ওই দুই রাস্তায়। এর জেরে এস এন ব্যানার্জি রোড এবং জওহরলাল নেহরু রোড সমেত দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন রাস্তাও যানজটের কবলে পড়ে। অবস্থা সামাল দিতে ওই সময় ঘুরিয়ে দেওয়া হয় গাড়ির মুখ।

সকালের ওই অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়ে রানি রাসমণিতে কংগ্রেসের সভা শুরু হওয়ার পর। কংগ্রেসের সর্মথকদের আটকাতে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কিছু রাস্তা। রানি রাসমণি রোডে ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড-সহ জলকামান, কাঁদানে গ্যাস নিয়ে তৈরি ছিল পুলিশও। কিন্তু দুপুর ২টো নাগাদ রানি রাসমণি রোডের অস্থায়ী মঞ্চ থেকে অধীর হঠাৎই ঘোষণা করেন, “চলুন, রাস্তা অবরোধ করি।” এর পরেই কয়েক হাজার কংগ্রেস সমর্থক রানি রাসমণি থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং-এ পৌঁছে রাস্তা অবরোধ শুরু করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, এর জেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকল মধ্য কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলা এবং তার আশপাশের বিভিন্ন রাস্তা। দুপুরের ওই সমাবেশ এবং পরে ধর্মতলা অবরোধের ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে উত্তর এবং দক্ষিণমুখী যান চলাচল। স্তব্ধ হয়ে যায় এস এন ব্যানার্জি রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের এক দিকের যান চলাচল। এর ফলে এস এন ব্যানার্জি রোড, জওহরলাল নেহরু রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, জগদীশচন্দ্র বসু রোডের মতো বড় বড় রাস্তা উপরে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। সব রাস্তাতেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে যানবাহন।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে কয়েক ঘণ্টার ওই অবরোধের ফলে জওহরলাল নেহরু রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণি, এস এন ব্যনার্জি রোড, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত রুদ্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় আটকে থাকে অসংখ্য বাস, মিনিবাস, ট্রাম, ট্যাক্সি সমেত বেসরকারি গাড়ি।

লালবাজার সূত্রের খবর, কংগ্রেসের ওই অভিযানকে কেন্দ্র করে এ দিন সকাল থেকে কয়েক হাজার পুলিশকর্মীকে মধ্য কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় মোতায়ন করা হয়। সব চেয়ে বেশি সংখ্যায় পুলিশ মোতায়ন করা হয় ধর্মতলা এবং রানি রাসমণিতে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) আর শিবকুমার-সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা।

এত সংখ্যক পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কেন ঘণ্টা দেড়েক ধরে অবরুদ্ধ হয়ে থাকল শহরের প্রাণকেন্দ্র?

লালবাজার সূত্রের খবর, গত মাসে বামেদের নবান্ন অভিযান থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার প্রচুর সংখ্যায় পুলিশ নামানো হয়েছিল। নবান্নের প্রতিনিধির হাতে স্মারকলিপি দেওয়া হবে এটাই ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎই কংগ্রেস সমর্থকেরা রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের প্রাণকেন্দ্র অবরোধ হওয়ার খবর সময়মতো পৌঁছে দেওয়া হয় নবান্নতে। কিন্তু সেখান থেকে জোর করে অবরোধ তুলতে বারণ করে দেওয়া হয়।

এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আজকে আমরা সংখ্যায় বিক্ষোভকারীদের থেকে বেশি ছিলাম। এ ছাড়া জলকামান, বজ্র সমেত সব ব্যবস্থাই রাখা ছিল বিক্ষোভকারীদের সামলাতে। কিন্তু সেগুলি ব্যবহারের কোনও নির্দেশ ছিল না আমাদের কাছে।’’

লালবাজারের পুলিশকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, অবরোধকারীদের দাবি ছিল রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে ওই স্মারকলিপি নিতে হবে। কিন্তু তিনি শহরের বাইরে। তাই কাকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। পরে কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কলকাতার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) আর শিবকুমারের হাতে স্মারকলিপি দেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।

এ দিনের নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল নবান্নমুখী হাওড়ার বিভিন্ন রাস্তা। এর জেরে হাওড়ার বিভিন্ন রাস্তায় যানজটে পড়েন সাধারণ মানুষ। হাওড়া পুলিশ সূত্রের খবর, সাঁতরাগাছিতে বিক্ষোভকারীদের গাড়ি আটকে দেওয়ায় কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট হয়। অন্য দিকে, ফোরশোর রোড দিয়ে আসা নবান্নমুখী গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় জিটি রোড দিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna congress Bus Adhir Chowdhury Lalbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE