Advertisement
০৬ মে ২০২৪

প্লাস্টিক পুড়ছে কারখানায়, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

ওজন পরীক্ষার পরে ওই সব বস্তা-বোঝাই প্লাস্টিকের সামগ্রী পৌঁছে যায় কারখানার ভিতরের গুদামে গুদামে। সেখানে বাছাইপর্ব শেষে ভাঙা প্লাস্টিক সামগ্রী এ বার পোড়ানোর পালা। অভিযোগ, কাঁকুড়গাছির ৯০, মানিকতলা মেন রোডের কারখানায় এ ভাবেই দিনের পর দিন প্লাস্টিক পোড়ানোর কাজ চলে।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

লম্বা লাইন বড় রাস্তার ফুটপাত হয়ে ঢুকে যায় কারখানার ভিতরে। প্রত্যেকের মাথায় বিশাল বিশাল বস্তা বাঁধা। কারখানার ভিতরে ওজন মাপার যন্ত্রের কাছে বস্তা নামিয়ে দিয়ে তবে মুক্তি।

ওজন পরীক্ষার পরে ওই সব বস্তা-বোঝাই প্লাস্টিকের সামগ্রী পৌঁছে যায় কারখানার ভিতরের গুদামে গুদামে। সেখানে বাছাইপর্ব শেষে ভাঙা প্লাস্টিক সামগ্রী এ বার পোড়ানোর পালা। অভিযোগ, কাঁকুড়গাছির ৯০, মানিকতলা মেন রোডের কারখানায় এ ভাবেই দিনের পর দিন প্লাস্টিক পোড়ানোর কাজ চলে। কারখানাটি জনবসতির মধ্যে হওয়া সত্ত্বেও প্লাস্টিক পোড়ানোর ধোঁয়া নিয়ে প্রশাসনের কোনও মাথাব্যথা নেই। স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ— দায় চাপাতে চলছে চাপান-উতোর। কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডু বলছেন, ‘‘ওই কারখানা থেকে যে দূষণ ছড়ায়, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুরসভাকে তা জানিয়েছিলাম। কাজ হয়নি।’’ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের আবার দাবি, ‘‘ওই কারখানা নিয়ে কোনও চিঠিই আমাদের কাছে আসেনি।’’

এর মধ্যেই গত বুধবার রাতে ওই কারখানায় ঢুকে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। কারখানার ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, ভাঙচুরের পাশাপাশি ওই কারখানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। লুট করা হয়েছে টাকাও। বিভিন্ন সময়ে ‘তোলা’ চেয়ে না পাওয়াতেই এই হামলা বলে ব্যবসায়ী সমিতির দাবি। এ নিয়ে শনিবার তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।

কারখানা সংলগ্ন বস্তির বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই কারখানায় প্লাস্টিক পোড়ানো হয়। বুধবার রাতে তা করতে গিয়েই সেখানে আগুন ধরে গিয়েছে। ওই আগুনে লাগোয়া বস্তি সম্পূর্ণ পুড়ে যেতে পারত। সেই রাগ থেকেই কারখানায় ভাঙচুর করা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। এক বস্তিবাসীর কথায়, ‘‘কাউন্সিলরকে বলেও সুরাহা হয় না। কাউন্সিলর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে দেখান। কাউকে কিছু বলেও কিছু হয়নি দেখে প্রতিবেশীরা ক্ষুব্ধ।’’ পুলিশ অবশ্য কারখানায় হামলার ঘটনায় এক বস্তির বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার রাতে ধৃতকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে মানিকতলা থানায় বিক্ষোভও দেখান ওই বস্তির বাসিন্দারা।

তবে পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তের পরে তাঁরা প্রায় নিশ্চিত যে, কারখানার ভিতরে কিছু পোড়ানোয় আগুন লাগে।

ফলে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, স্থানীয়েরা বারবার অভিযোগ জানালেও জনবসতি এলাকায় প্লাস্টিক পোড়ানো বন্ধ হয়নি কেন? কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘বরো কমিটিতে আমি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কাজ না হলে কী করব?’’ এই বলেই কি দায় ঝেড়ে ফেলা সম্ভব? কাউন্সিলরের দাবি, তিনি কলকাতা পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সে ভাবে কিছু করা হয়নি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) প্রবীণ ত্রিপাঠী বলছেন, ‘‘বুধবার রাতের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দূষণ দেখার জন্য বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতর আছে। প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশও তাঁদের দেখার অনুরোধ জানাতে পারে।’’

পুলিশ কি অনুরোধ জানিয়েছিল? উত্তর নেই পুলিশকর্তার কাছেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Factory Protest Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE