Advertisement
০৭ মে ২০২৪

চোর অদক্ষ বলেই কি খুন, চিন্তায় পুলিশ

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এই সব ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা দরজার তালা ভেঙে, কোথাও জানলার জাল কোথাও গ্রিল কেটে বাড়িতে ঢুকেছিল। উদ্দেশ্য ছিল স্রেফ চুরি করা।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৪০
Share: Save:

সিঁধেল চোরদের ‘অদক্ষতা’ চিন্তায় ফেলেছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের।

দুষ্কৃতী অদক্ষ হলে বরং পুলিশের স্বস্তিতে থাকার কথা। কারণ, তা হলে অপরাধ হবে না কিংবা কমবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সিঁধেল চোরদের অদক্ষতার পরিণাম হচ্ছে আরও ভয়ঙ্কর— খুন। পুলিশের দুশ্চিন্তা সেখানেই।

সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে সিঁধেল চোরেদের হাতেই খুনগুলি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ১৮ জুন রাতে নেতাজিনগরে খুন হয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, ৬২ বছরের প্রৌঢ়া গৌরী সেন। আবার ২০১২-র ২১ অগস্ট চিৎপুরের বাসিন্দা, ফুলরেণু চৌধুরী নামে অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাঙ্ককর্মীকে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা।

কিন্তু চোরেদের অদক্ষতার কথা আসছে কেন?

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এই সব ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা দরজার তালা ভেঙে, কোথাও জানলার জাল কোথাও গ্রিল কেটে বাড়িতে ঢুকেছিল। উদ্দেশ্য ছিল স্রেফ চুরি করা। কিন্তু দু’টি জায়গাতেই দুই বৃদ্ধা জেগে যাওয়ায় তারা বাধা সরাতে ও সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করতে খুন করে। এখানেই তাদের অদক্ষতা।

কলকাতা পুলিশের এক পোড় খাওয়া অফিসার বলছেন, ‘‘অদক্ষতা মানে চুরি করার সময়ে বাড়ির লোক জেগে যাচ্ছেন। যার জন্য তাঁদের খুন হতে হচ্ছে। দক্ষ সিঁধেল চোর তার চুরি গৃহস্থকে টেরই পেতে দেবে না। তার কাজ হবে মাখনে ছুরি চালানোর মতো মসৃণ।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘দক্ষ সিঁধেল চোরের অপরাধ শুধু নগদ, গয়না-সহ দামি জিনিস লোপাটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।’’

মনোজ বসু তাঁর ‘নিশি কুটুম্ব’ উপন্যাসে যে সিঁধেল চোরেদের কথা বলেছেন, তারা সব যেন সাক্ষাৎ শিল্পী। সদ্য বিবাহিতার শরীর থেকে তারা সমস্ত গয়না খুলে নিত, মহিলা বুঝতেই পারতেন না সেটা চোরের কাজ। জানলার ঠিক নীচে বা মাটির দেওয়ালের অন্য কোনও জায়গায় তারা সিঁধ কেটে ঢুকত, সেখানেও শিল্পের ছোঁয়া। কেউ টের পেত না। সে যুগের মতো এখনকার পাকা বাড়ি বা বহুতলে সিঁধ কাটা যায় না। সেখানে দরজা-জানলা ভেঙে ঢুকে জিনিসপত্র লোপাট করাকেই সিঁধেল চুরি বলে।

জুন মাসে নেতাজিনগরে গৌরী সেনকে যারা খুন করেছিল, সেই দলটির ছ’জনই ধরা পড়েছে। তারা ধরা পড়ার পরে শহরে প্রায় এক ডজন সিঁধেল চুরির কিনারা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। কিন্তু ওই দুষ্কৃতীরা জানিয়েছে, নেতাজিনগরের আগে অন্য ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে তাদের অসুবিধা হয়নি। টাকা-গয়না নিয়ে তারা চুপিসারে সরে পড়তে পেরেছিল। কিন্তু গৌরীদেবী জেগে যাওয়ায় তারা তাঁকে খুন করতে ‘বাধ্য’ হয়। পাঁচ বছর আগে চিৎপুরে ফুলরেণু চৌধুরীকে খুনের ঘটনায় ধৃতেরা এখন জেলে। তারাও একই কথা জানিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘চুরির সময়ে গৃহস্থ জেগে গেলেই তাঁকে খুন করাটা অপরাধের ক্ষেত্রে নতুন প্রবণতা কি না, সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE