Advertisement
E-Paper

ঝামেলা রুখতে গিয়ে প্রহৃত পুলিশ

যৌন নিগ্রহের তদন্ত করা তো দূর, ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের ঘটনায় মঙ্গলবার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গিয়েই হিমশিম খেল কলকাতা পুলিশ।

হিমশিম:  পুলিশের লাঠি কেড়ে মার বিক্ষোভকারীদের। মঙ্গলবার, ঢাকুরিয়ায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

হিমশিম: পুলিশের লাঠি কেড়ে মার বিক্ষোভকারীদের। মঙ্গলবার, ঢাকুরিয়ায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২৬
Share
Save

যৌন নিগ্রহের তদন্ত করা তো দূর, ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের ঘটনায় মঙ্গলবার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গিয়েই হিমশিম খেল কলকাতা পুলিশ। বিক্ষোভকারী অভিভাবকদের ইটের ঘায়ে মাথা ফাটল দুই থানার ওসি-সহ চার জন পুলিশকর্মীর। এলোপাথাড়ি চড়-ঘুসির পাশাপাশি পোশাকও টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হল পুলিশের। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে লাঠি চালায় পুলিশও। তবে এত কিছুর পরেও দিনের শেষে পুলিশের দক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের অনেকে।

কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ছোট ছোট কাজিয়া বড্ড বেশি হিংস্র হয়ে যাচ্ছে। কেউ কারও কথা ঠান্ডা মাথায় শুনছে না। পুলিশ বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতেই তখন সময় চলে যাচ্ছে। আসল তদন্ত কিছুই হচ্ছে না।’’ কলকাতার আর এক প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার অবশ্য পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় একেবারেই অবাক হচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের যা কাজ নয়, সেটা করলে মানুষের রাগ তো বাড়বেই। তার ফলে পুলিশ যে মার খাবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমি এতে আর অবাক হই না। এ জিনিস হচ্ছে। আগামী দিনে আরও হবে।’’

ঢাকুরিয়ার ওই স্কুলে পাঁচ বছরের এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে এ দিন। ছাত্রীর পরিবারের দাবি, গত ২৬ সেপ্টেম্বর স্কুলের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে এক শিক্ষক তার যৌন নিগ্রহ করেছেন বলে সে জানিয়েছে। ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতেই এ দিন স্কুলে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের মারধরের পাশাপাশি স্কুলে ভাঙচুরও চালানো হয়। পুলিশ বাধা দিতে গেলে অভিভাবকদের সঙ্গে তাদের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করেন। ইটের ঘায়ে আহত হন গড়িয়াহাট থানার ওসি সুমিত দাশগুপ্ত এবং রবীন্দ্র সরোবর থানার ওসি জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়। টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীর উর্দিও। পুলিশের হেলমেট ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দিতেও দেখা যায়। এক পুলিশকর্মীকে দেখা যায়, পড়ে গিয়ে ভারসাম্য রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তার মধ্যেই উড়ে আসছে কিল-ঘুসি। পরে ডিসি (এসইডি) কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ দিনের ঘটনায় পুলিশের মনোবলে ফের এক বার বড় রকমের ধাক্কা লাগল বলে মনে করছেন বাহিনীর একটা বড় অংশ। প্রাক্তন পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘পুলিশকে শাসক দলের কথা মতো কাজ করতে হচ্ছে। এ এক মারাত্মক প্রবণতা। মানুষের মনে হচ্ছে, কোনও পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে পুলিশ তদন্তই করতে পারবে না। তাই যত রাগ গিয়ে পড়ছে পুলিশের উপরেই! পরিস্থিতি আরও খারাপ হলেও অবাক হব না।’’ তা হলে উপায়?

আরও পড়ুন: স্কুলে শিশুনিগ্রহ, ভাঙচুর-বিক্ষোভে রণক্ষেত্র ঢাকুরিয়া

তুষারবাবুর মতে, ‘‘সরকার নিজের কাজ করিয়ে নিচ্ছে। সরকারের কাছে ওই সব পুলিশকর্মীর ভাবমূর্তি ভাল থাকছে। কিন্তু মানুষের কাছে সেই ভাবমূর্তি কী হচ্ছে, এখন সেটা ভাবা প্রয়োজন।’’ যদিও কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে। কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলানো হয়েছে।’’

Dhakuria School Police Beating

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}