Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Dhakuria School

স্কুলে শিশুনিগ্রহ, ভাঙচুর-বিক্ষোভে রণক্ষেত্র ঢাকুরিয়া

পাঁচ বছরের এক শিশুকে যৌন হেনস্থার অভিযোগকে ঘিরে মঙ্গলবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুল চত্বর।

 স্থানীয় মানুষ এবং অভিভাবকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি।

স্থানীয় মানুষ এবং অভিভাবকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

পাঁচ বছরের এক শিশুকে যৌন হেনস্থার অভিযোগকে ঘিরে মঙ্গলবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুল চত্বর। এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান উত্তেজিত অভিভাবকেরা। স্কুলে ভাঙচুর হয়। মার খান শিক্ষিকারা। এমনকি ঢাকুরিয়া স্টেশনেও তাঁদের উপরে চড়াও হয় এক দল বিক্ষোভকারী। আক্রান্ত হয় পুলিশও। তাদের লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। আহত হন ৮ পুলিশকর্মী। পুলিশের পাল্টা লাঠির আঘাতে মাথা ফাটে এক অভিভাবকের। পরে চার অভিভাবককে গ্রেফতার করা হয়।

যে ঘটনা ঘিরে এত কিছু, সেটি ২৬ সেপ্টেম্বরের। ওই স্কুলের প্রাক্‌ প্রাথমিকের শিশু শ্রেণির এক ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, সে দিন স্কুলের মধ্যেই তাকে যৌন নির্যাতন করেন দীপক কর্মকার নামে এক শিক্ষক। এ দিন সকালে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, ‘‘ওই দিন বিজেপির ডাকা বন্‌ধ থাকলেও স্কুল খোলা ছিল। স্কুল থেকে ফেরার পর মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। জানায় তার গোপনাঙ্গে ব্যথা হচ্ছে।” ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছিল ও খুব ভয় পেয়েছে। আমরা ওকে এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। চিকিৎসককে সে জানায়, স্কুলের মধ্যে ১০ নম্বর ঘরে দীপক স্যর তার সঙ্গে অসভ্যতা করেছে।’’

ছাত্রীটির বাবা-মায়ের দাবি, তাঁদের পরিবারে এক জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় এত দিন তাঁরা এ নিয়ে কিছু করতে পারেননি। এ দিন সকালে তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনও গুরুত্ব দেননি। এর পরে তাঁরা লেক থানায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আহত অভিভাবক।

কিন্তু অন্য অভিভাবকেরা ঘটনাটি জানলেন কখন? স্কুলে হামলাই বা হল কেন? ছাত্রীটির বাবা-মায়ের বক্তব্য, তাঁরা থানা থেকে ফিরে দেখেন, স্কুলের সামনে উত্তেজিত জনতার ভিড়। যদিও বিক্ষোভকারীদের একাংশ বলেন, সোমবারই বিষয়টি তাঁদের জানিয়েছিল ছাত্রীটির পরিবার।

এ দিনের গোলমালের পিছনে শুধু উত্তেজিত অভিভাবকরা নন, বহিরাগতেরাও আছে বলে প্রশাসনের দাবি। পুলিশের মতে, অভিভাবকদের সঙ্গে পঞ্চাননতলা ও বাবুবাগান বস্তির বাসিন্দারা মিলে হামলা চালান। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে সংগঠিত আক্রমণ। কেন, তদন্ত করে দেখা হবে। ছাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের।’’

আরও পড়ুন: প্ল্যাটফর্মে শিক্ষিকাকে মার, বাঁচাল চার ছাত্রী

চলতি বছরের গোড়ায় দেশপ্রিয় পার্কের কাছে কারমেল প্রাইমারি স্কুলে এবং বেহালার এম পি বিড়লা স্কুলেও যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে গোলমাল হয়েছিল। দু’টি ক্ষেত্রেও বহিরাগতেরা উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু কোথাওই স্কুলের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরে হামলা হয়নি।

বাসিন্দাদের হাতে শিক্ষিকার নিগ্রহ।

ছাত্রীটির পরিবারের অভিযোগ, শুধু যৌন নির্যাতন নয়, কাউকে কিছু বললে শিশুটিকে খুন করার হুমকিও দিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। একাধিক উত্তেজিত অভিভাবক এ দিন দাবি করেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আগেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু স্কুল কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তবে

প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘১০ নম্বর ঘরে সিসি ক্যামেরা নেই। কিন্তু ওই ঘরে সাড়ে ন’টা পর্যন্ত অন্য একটি স্কুলের ক্লাস চলে। আর আমাদের স্কুলের প্রাক্‌ প্রাথমিক স্তরের ছুটি হয় সাড়ে আটটায়। ছাত্রীটির পরিবার আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগও করেনি। যা-ই হোক, স্কুলশিক্ষা দফতর তদন্ত করছে।’’

অভিযুক্ত শিক্ষককে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে স্কুলে চড়াও হন বিক্ষোভকারীরা। প্রথমে পুলিশ কম থাকায় স্কুলের ভিতরে ঢুকে পড়েন তাঁরা। কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করেন। ভাঙা হয় স্কুলের বাইরে থাকা একটি মোটরবাইকও। পুলিশ উত্তেজিত জনতাকে বার করে স্কুলের মূল দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন ওই কোলাপ্‌সিবল গেট ভেঙে ফেলার চেষ্টা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট বৃষ্টি। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘লেক এবং গড়িয়াহাট থানার দুই ওসি-সহ ৮ জন পুলিশ জখম হয়েছেন।’’ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায়। মাথা ফাটে এক মহিলা বিক্ষোভকারীর। জখম হন আরও দু’জন। এর পরে র‌্যাফ নামে। তাতেও গোলমাল থামেনি। শিক্ষিকারা স্কুল থেকে বেরোতে গেলে চড়াও হন বিক্ষোভকারীরা। স্কুলের কাছে ও ঢাকুরিয়া স্টেশনে তাঁদের মারধর করা হয়। ছিঁড়ে দেওয়া হয় পোশাক।

এক বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।

এর মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষককে অন্য একটি গেট দিয়ে বার করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ের কাছে ডিসি (এসইডি) অফিসে। পরে কড়েয়া থানায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে স্কুল ভাঙচুর ও দুই শিক্ষিকাকে হেনস্থার অভিযোগ করেছেন। পুলিশকে মারধর ও উত্তেজনা তৈরির জন্য পৃথক মামলা রুজু করেছে লেক থানার পুলিশ।

স্কুল শিক্ষা দফতরের একটি দল পরে স্কুলে যায়। তাদের কাছে অভিভাবকদের একাংশের দাবি, স্কুলে পুরুষ শিক্ষক রাখা চলবে না।

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী, নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhakuria School Sexual Assault Agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE