Advertisement
E-Paper

কলেজে পুলিশি সক্রিয়তা এত পরে কেন?

হামলার এক দিন পরে পুলিশি ভূমিকা নিয়ে সরব হয়ে বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুন্ডুও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০৩:১১
সরব: মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে মিছিলে বিদ্যাসাগর কলেজের শিক্ষক, পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

সরব: মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে মিছিলে বিদ্যাসাগর কলেজের শিক্ষক, পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ভিআইপি-কে নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত পুলিশ কেন কলেজের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হল, সেই প্রশ্ন উঠেছিল নানা মহল থেকেই। হামলার এক দিন পরে পুলিশি ভূমিকা নিয়ে সরব হয়ে বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুন্ডুও বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘পুলিশ কেন আরও সক্রিয় হল না? হামলার আশঙ্কা রয়েছে বুঝেও কেন বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে বাড়তি নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হল না!’’

মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরে বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে পুলিশি সক্রিয়তা দেখে অনেকের প্রশ্ন, কেন এই তৎপরতা ঘটনার দিনেই দেখায়নি পুলিশ? বৃহস্পতিবার দেখা যায়, যে গেটের সামনে গোলমাল হয়েছিল, সেখানে কার্যত মাছি গলতে দিচ্ছে না পুলিশ। জটলা দেখলেই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। ১৭ বিধান সরণির ওই কলেজ ভবনে প্রবেশ করতে গেলেই পুলিশ জানিয়ে দিচ্ছে, পুরনো ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে অনুমতি নিতে হবে।

মঙ্গলবার রাতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের রোড শো থেকেই বিদ্যাসাগর কলেজের বিধান সরণি ক্যাম্পাসে ঢুকে হামলা চালিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই পুলিশি ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেরই প্রশ্ন, পুলিশের কাছে কি সম্ভাব্য ঝামেলার কোনও খবরই ছিল না? অধ্যক্ষ গৌতমবাবু এ দিন বলেন, ‘‘১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। ইন্টারনেটের তার ছিঁড়ে দেওয়ায় পরিষেবা অকেজো হয়ে গিয়েছে। পুলিশের আরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল।’’

লালবাজারের কর্তারা অবশ্য এ সব নিয়ে নতুন করে মন্তব্য করতে চাননি। উল্টে হামলার সময়কার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দিতে না পারায় বিদ্যাসাগর কলেজের জন্যই তদন্তে সমস্যা হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, যেখানে মূর্তি বসানো ছিল, সেই ঘরে তিনটি সিসি ক্যামেরা ছিল। কলেজের ওই ভবন থেকে পাশের শঙ্কর ঘোষ লেনের ভবনে যাওয়ার পথেও রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা। অথচ যান্ত্রিক খামতি থাকায় ক্যামেরাগুলিকে কাজে লাগানো যায়নি বলে কলেজ জানিয়েছে। কলেজের একাংশ এ-ও বলে, সিসি ক্যামেরা যে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত, তার হার্ড ডিস্ক পুলিশের কাছে জমা রয়েছে।

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, কলেজের এক শিক্ষক কয়েক মাস আগে তাঁর গাড়ি ভাঙা হয়েছে বলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। ছাত্রনেতারা বলেন, কলেজ ভবনের চাঙড় ভেঙে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধ্যক্ষ তাদের দ্বারস্থ হলে তদন্তে নেমে যে কম্পিউটারের সঙ্গে ক্যামেরাগুলি যুক্ত ছিল, তার হার্ড ডিস্ক সংগ্রহ করে পুলিশ। লালবাজারের সাইবার শাখা হয়ে তা গিয়েছিল বেঙ্গালুরুতে বিশেষজ্ঞের দফতরে। পরে সেই হার্ড ডিস্ক কলেজকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠছে, তদন্তের জন্য সংগৃহীত হার্ড ডিস্কটির পরিবর্তে নতুন হার্ড ডিস্ক লাগিয়ে কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরা সক্রিয় করলেন না? কলেজের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গরমের ছুটির পরে ক্যামেরাগুলি সক্রিয় করার পরিকল্পনা হয়েছিল। তার মধ্যেই এই ঘটনা।’’

ক্যাম্পাসের রক্ষী শান্তিরঞ্জন মোহান্তিও এ দিন বলেন, ‘‘ক্যামেরা চালু থাকলে ভাল হত। চোখের সামনে দেখলাম, বিজেপির লোকেরা কলেজে ঢুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বাইরে আগুন দেখে আমি মেন সুইচ নামিয়ে আলো বন্ধ করে দিই।’’ আলো নিভিয়ে দেওয়া নিয়েও তো প্রশ্ন উঠছে? শান্তিরঞ্জনের দাবি, ‘‘শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন যাতে কলেজে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্যই তো মেন সুইচ বন্ধ করেছিলাম।’’ অধ্যক্ষ গৌতমবাবু বলেন, ‘‘দ্রুত সিসি ক্যামেরাগুলি সক্রিয় করার ব্যবস্থা হচ্ছে। শান্তিরঞ্জন আলো নিভিয়ে কলেজকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’’

চাপানউতোরের মধ্যেই পুলিশে নতুন একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ১৪ মে হামলার দিনটিকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে এ দিন কলেজ থেকে একটি মিছিল বার হয়। তাতে কর্তৃপক্ষ এবং পড়ুয়াদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তনীরাও। এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সেখানকার উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি মনে করেন, ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট ঠিক মতো বন্ধ না হলে লাইব্রেরি, আশুতোষ মিউজিয়াম, একাধিক মূর্তির উপরেও হামলা হতে পারত। তাঁর কথায়, ‘‘বিদ্যাসাগরের উপরে হামলা আদতে ভারতের ইতিহাসে কালো দাগ।’’

Kolkata Rally Vidyasagar College Vandalization অমিত শাহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় Mamata Banerjee BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy