সল্টলেকে এক ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে গাড়ি চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে রীতিমতো ধন্দে পুলিশ। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ এবং পুলিশি তদন্তে পাওয়া তথ্যে অনেক ক্ষেত্রেই কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না। বস্তত কী কারণে ওই ঘটনা, এখনও তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পায়নি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ৪ মে দুপুরে এইচ-এ ব্লক সংলগ্ন ব্রডওয়ের ধারে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সল্টলেকের বি এল ব্লকের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, এক ব্যক্তি এসে তাঁর কাছে এফ ডি ব্লক কোথায় জিজ্ঞাসা করেন। ওই ব্যবসায়ী ঠিকানা বলতে গেলে গাড়ির উল্টো দিক থেকে অন্য এক জন জোর করে ঢুকে পড়েন। যিনি ঠিকানা জিজ্ঞাসা করছিলেন, তিনিও জোর করে গাড়িতে উঠে পড়েন। এর পর ব্যবসায়ীকে বলা হয় গাড়ি চালিয়ে যেতে। গাড়ি চালিয়ে ওই দু’জন ব্যবসায়ীকে নিয়ে যান আসানসোলে। সেখানে এক জায়গায় ওই ব্যবসায়ীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে তিনি সল্টলেকে বাড়ি ফিরে আসেন। ইতিমধ্যে ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের তরফে সল্টলেকের পূর্ব থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
৬ মে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় ভয় দেখিয়ে গাড়ি চুরির অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশি পদক্ষেপে আসানসোলের দক্ষিণ থানা এলাকায় একটি রাস্তার ধারে সেই গাড়িটি পাওয়া যায়।
কিন্তু ঘটনার তদন্তে নেমে একাধিক অসঙ্গতি পেয়েছে পুলিশ। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ধন্দও রয়েছে। প্রথমত, সল্টলেক থেকে বেরোনোর পথে একাধিক জায়গায় সিসিটিভি রয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখে এখনও তেমন অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, কেন এইচ-এ ব্লকের কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী তা পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। যদিও ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি গাছের তলায় খানিকটা জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে সেই বক্তব্য খুব বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেই প্রাথমিক তদন্তে মত তদন্তকারীদের। তৃতীয়ত, দুষ্কৃতীরা গাড়ি চুরির উদ্দেশ্য থাকলে রাস্তার ধারে এ ভাবে গাড়ি ফেলে রাখত কি না, তা নিয়েও সংশয়ে পুলিশ। যদি জোর করে ব্যবসায়ীকে নিয়ে যাওয়ার হত, তবে মুক্তিপণ বা অন্য কোনও মোটিভ তদন্তে উঠে আসত। এখনও তেমন কোনও সূত্র পায়নি বলেই জানিয়েছে পুলিশ।
রয়েছে আরও কিছু অসঙ্গতি। গাড়ি সল্টলেকে থেকে আসানসোলে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ীর মোবাইলের কল কেন ডাইভার্ট করা হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সল্টলেক থেকে আসানসোলে যাওয়ার পথে দু’বার গাড়িতে তেল ভরা হয়েছিল। সেই টাকাও অপহরণকারীরা দিয়েছিল বলে ব্যবসায়ী পুলিশকে জানিয়েছেন। এমনকী গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার সময়েও দুষ্কৃতীরা ব্যবসায়ীকে ৩০০ টাকা দিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। এমন তথ্যের পিছনেও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পাচ্ছে না পুলিশ।
ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কারও কোনও ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে ব্যবসায়ী পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। তাই ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ আছে বলেই মনে করছে পুলিশ। গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘অভিযোগের সারবত্তা কতটা তা সব দিক থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। যার উত্তর খোঁজা হচ্ছে।’’