Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Vidyasagar College Vandalization

সিসি ক্যামেরা খারাপ, দুষ্কৃতী চিনতে সমস্যা

এ দিন বিকেলে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরা কলেজে আসেন। তাঁরা কলেজে যেখানে ভাঙচুর হয়েছিল সেই জায়গা ঘুরে দেখেন ও কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন।

ঘটনার পর বিদ্যাসাগর কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

ঘটনার পর বিদ্যাসাগর কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের মঙ্গলবারের রোড শো ঘিরে ভাঙচুরের পরে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল বিদ্যাসাগর কলেজ। অধ্যক্ষ গৌতম কুন্ডু বলেন, ‘‘বিজেপির যে মিছিল থেকে আমাদের কলেজে হামলা হল, তাতে ছিলেন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। যাঁরা ওই মিছিল করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে এক পড়ুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে আমরাও অভিযোগ দায়ের করেছি।’’

রোড শো ঘিরে গোলমালের জেরে একদল দুষ্কৃতী বিদ্যাসাগর কলেজে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করে। কিন্তু সেই দুষ্কৃতীরা কারা, তা চিহ্নিত করতে গিয়ে শুরুতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পুলিশকে। কারণ, কিছু দিন ধরেই কলেজের সিসি ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। কলেজের শিক্ষকেরাই বিষয়টি এ দিন স্বীকার করে নেন। তাঁরা জানান, কিছু দিন ধরেই কলেজের নজর- ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক খারাপ থাকায় রেকর্ডিং বন্ধ। ফলে মঙ্গলবারের ওই তাণ্ডবের ঘটনা সিসি

ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। যার জন্য পুলিশ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ— দু’তরফের কাছেই ভিডিয়ো ফুটেজ বলতে এখন ভরসা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ছবি।

যে অফিস-ঘরে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল ঘটনার সময়ে সেখানেই ছিলেন কলেজের কেয়ারটেকার শান্তিরঞ্জন মোহান্তি। তিনি বলেন, ‘‘সিসিটিভি ঠিক থাকলে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে সুবিধা হত। অফিস ঘরের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। একটা আধলা ইট আমার গায়ে এসে পড়ে। এর পরেই কয়েকটা লোক দরজা ভেঙে লাঠি নিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে। কাচ ভাঙতে থাকে, চেয়ার

টেবিল উল্টে ফেলে। তার পরে বিদ্যাসাগরের মূর্তি তুলে বাইরে নিয়ে যায়।’’ শান্তিবাবু জানান, তাঁরা ভয়ে ওই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে পাশের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফলে দুষ্কৃতীদের ভাল করে দেখা সম্ভব হয়নি।

মঙ্গলবারের ওই তাণ্ডবলীলার পরে কলেজকে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো নিয়ে কয়েক জন শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বুধবার দুপুরে বৈঠক করেন গৌতমবাবু। ছিলেন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি ও প্রাক্তন শিক্ষক জীবন

মুখোপাধ্যায়। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘যারা এই তাণ্ডব চালাল তারা নিশ্চয় বাঙালি নয়। ওই গুন্ডারা ভিন্‌ রাজ্যের। তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করার আর্জি জানাচ্ছি পুলিশকে।’’

কলেজের প্রাতঃবিভাগের শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কলেজে ভাঙচুরের ঘটনার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। তাতে তাঁরা জানিয়েছেন যে কলেজে এই ঘটনার পরে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘ভরসন্ধ্যায় এই ভাবে কলেজের দরজা ভেঙে ঢুকে কেউ যদি ভাঙচুর চালায়, মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়, তা হলে নিরাপত্তা কোথায়? দুষ্কৃতীদের দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে।’’

বুধবার দিনভর বিদ্যাসাগর কলেজে চলেছে অবস্থান বিক্ষোভ। কলেজের সামনেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা অবস্থান বিক্ষোভ করেন। মুখে কালো কাপড় বেঁধে, কালো ব্যাজ পরে কলেজের সিঁড়ির সামনে বসেছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। ওই অবস্থান বিক্ষোভের মধ্যে অবশ্য বেশ কয়েক জন বহিরাগতদেরও দেখতে পাওয়া যায়। কলেজের টিএমসিপির সভাপতি শানু মাকাল বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগরের মূর্তি আমাদের দল থেকে তৈরি করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা শুধু প্রকৃত দোষীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’’

এ দিন বিকেলে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরা কলেজে আসেন। তাঁরা কলেজে যেখানে ভাঙচুর হয়েছিল সেই জায়গা ঘুরে দেখেন ও কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন। কলেজের অফিস ঘরের অবস্থার ভিডিয়োগ্রাফিও করেন তাঁরা। এ দিন কলেজে কয়েকটি পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষা অবশ্য ঠিকঠাক হয়েছে বলে জানান পরীক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার টিএমসিপি নেতা মণিশঙ্কর মণ্ডলের নেতৃত্বেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখান। তাতে বিজেপি সমর্থকেরাও মারমুখী হয়ে ওঠেন। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মণিশঙ্করের নেতৃত্বে ছাত্রছাত্রীরা ফের প্রতিবাদ অবস্থান করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE