Advertisement
০৪ মে ২০২৪
internet

শিক্ষিকার নেট-নিগ্রহে সমালোচনা শিক্ষামহলে

নেট-নিগ্রহের ‘শিকার’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা মেরুনা মুর্মু শনিবার বলেন, ‘‘ছাত্রীটির আচরণ ছেলেমানুষি কাণ্ড বলে ভাবতে পারছি না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:০৮
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়ায় জাত তুলে এক শিক্ষিকাকে অপমান এবং পরে সংগঠিত নেট-নিগ্রহের অভিযোগে ক্ষুব্ধ সারস্বত জগৎ। নেট-নিগ্রহের ‘শিকার’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা মেরুনা মুর্মু শনিবার বলেন, ‘‘ছাত্রীটির আচরণ ছেলেমানুষি কাণ্ড বলে ভাবতে পারছি না। অনেকেই আমার পাশে রয়েছেন। আবার সংগঠিত ভাবে নেটে আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কী পদক্ষেপ করা যায়, দরকারে তা ভাবব।’’

অভিযুক্ত ছাত্রী বেথুন কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া। ওই কলেজের স্টুডেন্টস কমিটি এবং বাংলা বিভাগের প্রধান সুমিতা মুখোপাধ্যায় অবশ্য তাঁর আচরণের নিন্দা করেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে ছাত্রীটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করার ব্যাপারে কোনও আশ্বাস মেলেনি।

মেরুনার অভিযোগ, দিন তিনেক আগে নেটে তাঁকে ‘হেনস্থা’ করেন বেথুন কলেজের বাংলা বিভাগের ওই ছাত্রী। মেরুনার সাঁওতাল, আদিবাসী পরিচয় নিয়ে কটাক্ষ করে ফেসবুকে বলা হয়, তিনি অযোগ্য হয়েও চাকরি করছেন। তাঁর এক পরিচিতের পোস্টে মেরুনা মন্তব্য করেছিলেন, এখনকার পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত সিমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়া উচিত নয়। তার জেরেই ওই ছাত্রী তাঁকে লাগাতার অপমানসূচক কথা বলতে থাকেন বলে অভিযোগ। এর পরে খোদ বেথুন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান তাঁদের ছাত্রীর আচরণের নিন্দা করে ফেসবুকে লেখেন। সেখানেও ওই ছাত্রী এবং আরও বেশ কয়েক জন অপমানজনক মন্তব্য করতে থাকেন। বাধ্য হয়ে বিভাগীয় প্রধান তাঁর পোস্টটি মুছে দেন।

আরও পড়ুন: ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল, অসুস্থের ভরসা অনাত্মীয়েরাই

ঘটনাটির নিন্দায় সরব বেথুনের ছাত্রী কমিটির সম্পাদক সুবর্ণা মুস্তারি বলেন, ‘‘কয়েক মিনিটের মধ্যে কলেজের শিক্ষিকার পোস্টে হাজারো মন্তব্য পড়তে থাকে, যা সংগঠিত নেট-নিগ্রহ বাহিনী ছাড়া সম্ভব নয়।’’

বেথুনের ছাত্রীদের তরফে সুবর্ণা বলেন, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, কলেজের এক ছাত্রী দেশের জাতপাত ও বৈষম্যের ছবিটা চেনেন না। সংরক্ষণ কেন দরকার, তা-ও তাঁর মাথায় ঢোকে না। দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ তথাকথিত ‘নিচু’ জাত, কিন্তু প্রথম সারির চাকরিতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব এখনও সামান্য।’’

আরও পড়ুন: পাশে পুলিশ ও চিকিৎসকেরা, বাড়ি ফিরলেন মা এবং শিশু

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। সব রকম ভাবে মেরুনার পাশে রয়েছি এবং থাকব।’’ যাদবপুরের ইতিহাস বিভাগের মেরুনার সহকর্মীরাও ঘটনার নিন্দা করে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। বেথুন কলেজের অধ্যক্ষা কৃষ্ণা রায় এ দিন জানান, তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর অভিভাবকের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের খুবই গা-ছাড়া ভাব। অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর বিষয়ে বিভাগের শিক্ষিকাদের এবং তাঁর সহপাঠীদের মতামত জানা হবে। এর পরে তাঁকে ডেকে কথা বলে কী করণীয় ঠিক করা হবে।’’ দলিত অধিকার রক্ষা কর্মী শরদিন্দু উদ্দীপন মনে করাচ্ছেন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী কেরকেট্টা নামে এক শিক্ষিকাও সম্প্রতি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ দেশে তফসিলি জাতি ও আদিবাসী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন রয়েছে। সেই আইন কিন্তু সচরাচর প্রয়োগই হয় না। এ ক্ষেত্রে কী হয়, সেটাই দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Internet Humiliation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE