Advertisement
১১ মে ২০২৪

সর্ষে কিনছেন, ইলিশ মাছও দিয়ে দেব সঙ্গে?

সে যে যাই বলুন, বৃহস্পতিবার দুপুরেই সাতটির মধ্যে পাঁচটি ইলিশই বিক্রি হয়ে গিয়েছে পাঁচশো টাকা কেজিতে। শ্যামল বলছেন, ‘‘বাজারে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাতশো থেকে আটশো টাকা কেজি। আমরা দিচ্ছি পাঁচশোয়। না নেওয়ার তো কোনও কারণ নেই।’’

রইল বাকি দুই। বৃহস্পতিবার দমদমের সাতগাছি বটতলার মুদির দোকানে। নিজস্ব চিত্র

রইল বাকি দুই। বৃহস্পতিবার দমদমের সাতগাছি বটতলার মুদির দোকানে। নিজস্ব চিত্র

গৌরব বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২২
Share: Save:

ভিড়ে ঠাসা মুদির দোকানটায় ঢুকে কিঞ্চিৎ হোঁচট খাচ্ছেন অনেকেই।

দোকানের সামনে ঝুলছে চিপসের প্যাকেট। যেমন ঝোলে। ফ্রিজের উপরে রাখা পাউরুটির স্তূপ। যেমন থাকে। দোকান ও আশপাশে নজর রাখছে সিসিটিভি। যেমন রাখে।

কিন্তু ফ্রিজারের ভিতরে কমলা রঙের প্লেটে সাজানো ওগুলো কী?

হাতের কাজ থামিয়ে দোকানের মালিক শ্যামল পাল একগাল হেসে ফ্রিজারের ঢাকনাটা সরান— ‘‘এ বার দেখুন তো, চিনতে পারছেন কি না!’’

মুহূর্তে ভিড়ের মধ্যে তরঙ্গ খেলে যায়। বিশ্বাসবাবু আকাশ থেকে পড়েন, ‘এ তো ইলিশ হে!’ বোসগিন্নি চমকে ওঠেন, ‘ওখান থেকে বাপু আমায় কিছু দেবে না। আজ বেস্পতিবার, নিরামিষ।’ আর সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে দত্তবাবু টিপ্পনী কাটেন, ‘অহন তাইলে মুদির দোকানেও ইলিশ মিলব! এইডা দ্যাখাই বাকি ছিল!’ গলা খাঁকারি দিয়ে সিড়িঙ্গে গোছের একটি লোক বলে ওঠে, ‘ও তো বাসি!’

সে যে যাই বলুন, বৃহস্পতিবার দুপুরেই সাতটির মধ্যে পাঁচটি ইলিশই বিক্রি হয়ে গিয়েছে পাঁচশো টাকা কেজিতে। শ্যামল বলছেন, ‘‘বাজারে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাতশো থেকে আটশো টাকা কেজি। আমরা দিচ্ছি পাঁচশোয়। না নেওয়ার তো কোনও কারণ নেই।’’ এখন কেউ সর্ষে কিনলেই হাসতে-হাসতে রবীন বলছেন, ‘‘ভাপা ইলিশ হবে নাকি? আজ দুপুরের জন্য দেব একটা?’’

আরও পড়ুন:আধারের কামাল, মায়ের কোলে ফিরল ছেলে

আনাজের বাজার সেরে ফেরার পথে ইলিশ দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন গোরক্ষবাসীর সুদেব সাহাও। তার পরে উল্টেপাল্টে দেখে, পেট-পিঠ টিপে একটা কিনেও ফেলেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘বাজারের থেকে বেশ সস্তা। এখন দেখি, স্বাদ কেমন হয়!’’

দমদমের সাতগাছি বটতলায় ওই মুদির দোকান। কোনও কর্মচারী নেই।দুই ভাই রবীন পাল ও শ্যামল পাল নিজেরাই সব সামলান। কী ভাবে ব্যবসা করতে হয় ওঁরা জানেন। পাড়ার লোকে বলে, ‘‘ও দোকানে তো আলপিন টু এলিফ্যান্ট সবই পাওয়া যায়!’’

হাতিটা বাড়াবাড়ি শোনালেও গেরস্তালির কুচকাওয়াজে যা-যা প্রয়োজন তার প্রায় সবই মজুত রাখেন শ্যামল-রবীন। রাখেন বাচ্চাদের খেলনা-টেলনাও। পুজোর সময়ে তো নাড়ু-মুড়কির পাশাপাশি শাড়ি-কুর্তিও রেখেছিলেন। রীতিমতো হিট। হাতঘড়ি, ব্যাগ, আইসক্রিম সুপারহিট। আলু, পেয়াঁজ, লেবু, লঙ্কা তো রোজই বিকোয়। সম্প্রতি লিস্টে যোগ হয়েছে গাজর, বিন, ক্যাপসিকাম। অর্থাৎ ফ্রায়েড রাইস রাঁধতে হলে সাত দোকান ঘোরার আর দরকার নেই। সোজা চলে যাও শ্যামলের ডেরায়। চাইলে কাগজের থালা-বাটি-গেলাসও মিলবে।

তা বলে ইলিশ?

আসলে, মাস দু’য়েক আগে ইলিশ যখন বাজারে ঢের সস্তায় মিলছিল, তখনই এই ভাবনাটা মাথায় আসে মানিকজোড়ের। শ্যামল বলছেন, ‘‘দাদার সঙ্গে কথা বলে সাতটা ইলিশ কিনে যত্ন করে ফ্রিজে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, বিক্রি না হলে নিজেরাই খেয়ে নেব। ইশ! আরও কয়েকটা যদি তুলে রাখতাম!’’

হোক হিমশীতল, ফ্রিজারে কি এক বার মুচকি হাসল রুপোলি শস্য?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Grocery Shopkeeper Mustard Dumdum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE