Advertisement
E-Paper

ভিড় আর ভূরিভোজে জমজমাট বাজার

ক্যালেন্ডারের হিসেব মতো হাতে আর পাঁচ দিন। ভিড় এড়াতে চতুর্থী থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে বেরিয়ে পড়ার তাড়া। তাই দেবীর বোধনের জন্য উদগ্রীব শহরবাসী অন্তিম পর্বের বিকিকিনি সারতে হাজির হয়েছিল শহরের সমস্ত সাবেক বাজারগুলিতে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫০
শেষ রবিবারের নিউ মার্কেট। শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

শেষ রবিবারের নিউ মার্কেট। শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

ক্যালেন্ডারের হিসেব মতো হাতে আর পাঁচ দিন। ভিড় এড়াতে চতুর্থী থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে বেরিয়ে পড়ার তাড়া। তাই দেবীর বোধনের জন্য উদগ্রীব শহরবাসী অন্তিম পর্বের বিকিকিনি সারতে হাজির হয়েছিল শহরের সমস্ত সাবেক বাজারগুলিতে। হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট চত্বরে পুজোর আগের শেষ রবিবারের রীতিমতো ছিল উপচে পড়া ভিড়। পাশাপাশি ভিড় জমেছিল শহরের বিভিন্ন শপিং মলেও।

ভূরিভোজের পরেই পুজোর শেষ লগ্নের কেনাকাটার তাড়ায় ঘুচেছে সপ্তাহান্তের দিবানিদ্রাটুকুও। প্রখর রোদেও শেষ রবিবার যেন বেশ ক্লান্তিহীন। কেনাকাটার পর্ব শেষে একটি শপিং মলের ফুড কোর্টে পিৎজা খেতে খেতে আইটি ইঞ্জিনিয়ার সায়ন্তনী দত্ত বললেন, ‘‘অন্য সময়ে ফোনেই দরকারি জিনিস অর্ডার দিই। কিন্তু পুজোর সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে শপিং করার মজাই আলাদা।’’

লোরেটো কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ঋত্বিকা চক্রবর্তীর আবার পুজো মানেই বন্ধুদের সঙ্গে ফ্যাশনে টেক্কা দেওয়ার লড়াই। তাই লিস্ট যেন তাঁর ফুরাচ্ছে না। ছুটির দিন পেলেই কখনও বন্ধুদের সঙ্গে কখনও আবার মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে পড়েছেন। রবিবার সন্ধ্যায় ব্লু জিনস আর চেক শার্ট পরা এই অষ্টাদশী জিনস, টি শার্টে পূর্ণ তিন-চারটে সবুজ রঙের প্লাস্টিক হাতে ফুলবাগানের একটি শপিং মলের সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললেন, ‘‘ভিড় ঠেলে শপিং না করলে পুজো বলে মনেই হয় না!’’

এ বছরের পুজোর কেনাকাটা আবার একদম অন্য রকম আবিরের কাছে। ক্লাস ফোরের আবির বসু এ বছর প্রথম তার বাবার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে নিউ মার্কেটের একটি দোকান থেকে জুতো কিনেছে। প্রায় যুদ্ধ জয় করে পুঁচকের বক্তব্য, ‘‘বাব্বা! সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি। জুতো কিনতে এসে তো পায়ে ব্যথা হয়ে গেল।’’

দুপুরে নাতি আর তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে হাতিবাগানে শাড়ি কিনতে এসে ছিলেন শোভাবাজারের মিনতি চৌধুরী। হাঁটুর সমস্যার জন্য বেশি হাঁটতে পারেন না। গাড়ি থেকে নেমে নাতির বান্ধবীর হাত ধরে ঢুকে গেলেন এক শাড়ির দোকানে। সাদার উপরে বেগুনি পাড়ের একটি শাড়ি তাঁর মনে ধরল। সঙ্গে থাকা নাতনীর জন্যও পছন্দ করলেন সবুজ রঙের সিল্ক। গাড়িতে ওঠার আগে মিনতি দেবী বলেন, ‘‘আমায় পুজোর বাজার করাতে নিয়ে যাবে বলেই মুম্বই থেকে নাতি পুজোর আগেই চলে এল। ওর সঙ্গে না বেরোলে তো আমার পুজো শুরুই হয় না।’’

পুজোর বোনাস হাতে পেয়েই সোনারপুরের রাজীব কর্মকার সপরিবারের বেরিয়ে পড়েছেন পুজোর বাজার করতে। এ দিন দুপুরে গড়িয়াহাটের একটি দোকান থেকে মেয়ের জন্য ফ্রক কিনে বেরোনোর পরে বললেন, ‘‘সবার জন্য কিছু না কিছু কিনতে হবে। তাই হাতে সময় নিয়েই বেরিয়েছি।’’ বাবার থেকে গোলাপি রঙের ফ্রক পেয়ে বেজায় খুশি ছ’বছরের সুতপা। তার কথায়, ‘‘আমি তো ভাবলাম সব জামা শেষ না হয়ে যায়। কিন্তু আমার পছন্দের জামাটা যে এত তা়ড়াতাড়ি খুঁজে পাব ভাবতেই পারিনি।’’

বাঙালির জীবনের ক্যানভাস দুর্গাপুজো ছাড়া ম্রিয়মাণ। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভরা বাতাসেও আশ্বিনে থাকে শিউলি ফুলের গন্ধ। বিজ্ঞাপনের রঙিন হোর্ডিং ভুলিয়ে দেয় নিত্যদিনের যানজটের ভোগান্তি। তবে এই সব আনন্দ অধরা থেকে যায় পুজোর আগে ‘সওগত’ না পেলে। সেই সামান্য ‘সওগত’টুকু দেওয়া-নেওয়ার আশায় রবিবাসরীয় শহর মাতল পুজোর কেনাকাটায়।

Shopping Durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy