শহরে টোটোকে ব্রাত্য করে ইলেকট্রিক রিকশা বা ই-রিকশাকে আগেই আইনি সিলমোহর দিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। অভিযোগ, তার পরেও কলকাতা লাগোয়া হাওড়া শহরে টোটোর বাড়বাড়ন্ত রুখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ জেলা প্রশাসন ও হাওড়া পুরসভা। আর এই নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর।
জেলা প্রশাসনের অভিযোগ, শহরে টোটোর বদলে ই-রিকশা চলার সিদ্ধান্ত পাকা হয় গত বছরের মাঝামাঝি। এর পরেই গত বছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে হাওড়া পুরসভাকে শহরে কত টোটো চলে, তা চিহ্নিত করে টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিন) তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা আজও দিতে পারেনি পুরসভা। তাই টোটোকে ই-রিকশায় পরিবর্তনের কাজও শুরু করা যায়নি। বন্ধও হয়নি টোটো চলাচল। যদিও পুরসভার দাবি, প্রশাসন বলার পরেই টিন তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এ জন্য এখনও পর্যন্ত ৮ হাজার টোটোর আবেদনপত্র জমা পড়েছে। আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে। তার পরে টিন তৈরি হবে।
হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ লাটুয়া বলেন, ‘‘রাজ্য পরিবহণ দফতরের সিদ্ধান্ত মতো টোটোকে বদলে ই-রিকশা করা হবে। এ জন্য কত টোটো চলছে, তার হিসেব রাখতে সমস্ত টোটোকে টিন দেওয়া হবে। গ্রামাঞ্চলে সেই কাজ শেষ হয়েছে। এর পরে টোটোকে ই-রিকশায় পরিবর্তন করার কাজ শুরু হবে।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক জানান, এই কাজের জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতর থেকে দু’টি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা দু’টি ব্যাঙ্ক ঋণেরও ব্যবস্থা করে দেবে। কারণ দেখা যাচ্ছে, একটা টোটোকে ই-রিকশায় পরিবর্তন করতে গেলে ৮০ হাজার টাকা খরচ হবে। এই ৮০ হাজারের মধ্যে ব্যাঙ্ক ঋণ দেবে ৬০ হাজার টাকা। বাকি ২০ হাজার দিতে হবে টোটোর মালিককে। যে টোটোর মালিক এই শর্তে রাজি হবেন, তাঁদের আগে আসার ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন করানো হবে। তার পরে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। গ্রামঞ্চলে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। টোটোর মালিকদের জানানো হয়েছে যে, রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই ওই যান বড় রাস্তায় চলতে দেবে না। যেখানে অন্য পরিবহণ মেলে না, শুধু সেখানেই চালানো যাবে।
অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘পুরসভার সঙ্গে আমরা বারবার এ নিয়ে বসেছি যাতে টিন-এর কাজ শুরু করা যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুরসভা টিন তৈরি করে দিতে পারেনি। তাই শহরে টোটো বন্ধ করার কাজও এগোয়নি।’’ হাওড়ার পুর কমিশনার নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রশাসন বলার পরেই টিন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আমরা সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কাগজপত্র জমা দেব।’’
রিকশার থেকে দ্রুতগামী এবং পরিবেশবান্ধব এই যান শহরে চলাচলের জন্য ২০১৪ সালে প্রথম অনুমতি দেয় হাওড়া পুরসভা। এর পরেই শহরে টোটোর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে টোটোকে বাগে আনতে ফি জমা নিয়ে টোটোর রেজিস্ট্রেশন শুরু করে পুরসভা। কিন্তু যথেষ্ট পরিকাঠামোর অভাবে তা-ও মাঝপথে থমকে যায়।
পরবর্তীকালে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে হাওড়া সিটি পুলিশ টোটোর জন্য এলাকা ভিত্তিক স্টিকার চালু করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু তা-ও ব্যর্থ হয়।
নিত্যনতুন টোটোয় ভরে যায় গোটা শহর। পুলিশ সূত্রে খবর, বর্তমানে শহরে চলা টোটোর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। আর এত পরিমাণ টোটো বেড়ে যাওয়ায় হাওড়ার সঙ্কীর্ণ রাস্তায় যানবাহনের গতি ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। এ কথা মানছেন হাওড়া পুরসভার মেয়র থেকে পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে এই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তার পরে পুলিশ দায়িত্ব নেয়। এখন গোটা ব্যাপারটাই হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর দেখছে।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের ট্র্যাফিক দফতরের এক পদস্থ অফিসারের বক্তব্য, ‘‘২০১১ সালে হাওড়ায় পুলিশ কমিশনারেট হওয়ার পরে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজায় যানবাহনের গতি বেড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। আগে গন্তব্যে পৌঁছতে যেখানে আধ ঘণ্টা লাগত, বর্তমানে টোটোর ভিড়ের জন্য তা লাগছে এক ঘণ্টা।’’