Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দু’ঘণ্টার বর্ষণেই নাস্তানাবুদ শহর

শহরের বিভিন্ন রাস্তায় থমকে যায় যান চলাচল। দুর্ভোগে পড়েন অফিসফেরতা মানুষ। আটকে পড়ে স্কুলপড়ুয়ারাও।

ভোগান্তি: ধর্মতলায় বাস-ট্যাক্সির অপেক্ষায় যাত্রীরা (বাঁ দিকে)।  ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ভোগান্তি: ধর্মতলায় বাস-ট্যাক্সির অপেক্ষায় যাত্রীরা (বাঁ দিকে)। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩১
Share: Save:

বন্ধ ব্যস্ত উড়ালপুল, মিছিল আর দু’ঘণ্টা একনাগাড়ে বৃষ্টি। এই ত্রিফলা আক্রমণের জেরে শুক্রবার জট পাকিয়ে যায় গোটা শহর। বাজ পড়ে মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনার পাশাপাশি বৃষ্টির জেরে শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে।

বৃষ্টি-যানজট

‘নায়ক’ হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু এ দিনের বৃষ্টি ‘খলনায়ক’ হয়ে গেল শহরবাসীর কাছে। টানা দু’ঘণ্টার বর্ষণে বিকেল থেকে জলে ডুবে যায় শহরের বহু রাস্তা। উত্তরের বরাহনগর থেকে দক্ষিণের বন্দর, কিংবা পার্ক সার্কাস থেকে নিউ আলিপুর-বেহালা, সর্বত্র একই হয়রানির ছবি। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় থমকে যায় যান চলাচল। দুর্ভোগে পড়েন অফিসফেরতা মানুষ। আটকে পড়ে স্কুলপড়ুয়ারাও। রাত পর্যন্ত বহু এলাকাই ভোগান্তি থেকে নিস্তার পায়নি। বৃষ্টির জল জমে কোথাও গাড়ি চলেছে শামুকের গতিতে, কোথাও আবার জমা জলে পুরোপুরি আটকে গিয়েছে গাড়ির চাকা।

লালবাজার জানিয়েছে, শহরের প্রায় সব বড় রাস্তাতেই জল জমে গিয়েছিল এ দিনের বৃষ্টিতে। যার জেরে এন্টালি, ঠনঠনিয়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, পার্ক স্ট্রিট, এ জে সি বসু রোড, শরৎ বসু রোড, পার্ক সার্কাস, আলিপুর রোড, সাহাপুর রোড, শেক্সপিয়ার সরণি, এম জি রোডে গাড়ির গতি গিয়েছিল থমকে। বন্দর এলাকার সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোড, হাইড রোডের অবস্থাও ছিল তথৈবচ। লেক গার্ডেন্স, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, বি বা দী বাগ-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিকেলের পর থেকে উধাও হয়ে যায় বাস। ফলে কাজ থেকে বাড়ি ফিরতে সাধারণ মানুষকে প্রবল ভোগান্তি পড়তে হয়। যে ক’টি বাস চলেছে, সেগুলিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। প্রবল বৃষ্টিতে এ দিন ডুবে যায় শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের একাধিক অংশ। এসএসকেএমের ফার্মাসি ও প্রসূতি বিভাগে প্রায় হাঁটু সমান জল জমে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু ওষুধ। সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, “অতি ভারী বৃষ্টির জন্য এই অবস্থা। নিকাশি নালা উপচে যাওয়ায় বিপত্তি হয়েছিল। রাতের মধ্যে জল নামানো সম্ভব হয়েছে।” জল জমে যায় আলিপুর আদালত চত্বরেও। নিউ আলিপুরের একটি পেট্রোল পাম্প এবং নিউ বালিগঞ্জে স্টেট ব্যাঙ্কের একটি শাখাতেও জল ঢুকে যায়। পুরসভার পার্ক ও উদ্যান দফতরের এক আধিকারিক জানান, ম্যাডক্স স্কোয়ারের পালিত রোড ও সুরেশ সরকার স্ট্রিটে গাছ পড়েছে। অন্য দিকে, বৃষ্টিতে জল জমার হাত থেকে রেহাই পায়নি সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকও। সেখানকার বেশ কিছু রাস্তায় এ দিন জল জমে যায়। জল জমেছিল সল্টলেকের অন্যত্রও। যার জেরে উল্টোডাঙা থেকে করুণাময়ী আসতে ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হেঁকেছেন অটোচালকেরা। শুধু অটো নয়, কলকাতা ও সল্টলেকে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলিও এ দিন ইচ্ছেমতো চড়া হারে ভাড়া হেঁকেছে বলে অভিযোগ।

ট্র্যাফিক পুলিশ জানিয়েছে, বৃষ্টির জেরে এ জে সি বসু রোড এবং মা উড়ালপুলে গাড়ির গতি বাধা পায়। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কনভয়ও নির্ধারিত রাস্তা পাল্টে অন্য রাস্তা ধরে।

জল জমে গিয়েছিল কলকাতা পুর ভবনের প্রবেশদ্বারের একাধিক পথেও। বৃষ্টির পরেই দ্রুত কন্ট্রোল রুম খোলা হয় পুরসভায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুহুর্মুহু ফোন আসতে থাকে সেখানে। কেউ জানতে চান, কোথায় বাজ পড়েছে? কেউ নির্দিষ্ট এলাকার নাম করে জানতে চান, সেখানে কত জল জমেছে। এরই মধ্যে কিছু ক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে অন্ধকার হয়ে যায় পুর ভবন।

অস্বাস্থ্যকর: জলের মধ্যেই বসে নার্সরা। শুক্রবার, এসএসকেএমের প্রসূতি বিভাগে। —নিজস্ব চিত্র

উড়ালপুল বন্ধ

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ শিয়ালদহের বিদ্যাপতি সেতু। যার জেরে শুক্রবার যানজটে দুর্ভোগের আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। এ দিন দুপুর পর্যন্ত ওই উড়ালপুল বন্ধের জন্য যানজট তেমন আকার না নিলেও যান চলাচলের গতি বাধা পায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলুটোলা স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট-সহ উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায়। দুপুরের দিকে দেখা যায়, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ধর্মতলামুখী গাড়ির লাইন পৌঁছে গিয়েছে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত। একই অবস্থা দেখা গিয়েছে সিআইটি রোড এবং এ জে সি বসু রোডেও। কনভেন্ট রোডে বিকেলের পরে অবস্থা ছিল ভয়াবহ। পুলিশের দাবি, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এ দিন বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে হকারদের বসতে দেওয়া হয়নি। সেতুর যে অংশে ভার বহনের পরীক্ষা হচ্ছে, তার নীচে শিশির মার্কেটের কিছু স্থায়ী দোকান এ দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল।

মিছিল

এ দিন দুপুরে গাড়ির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের একটি মিছিল। ওই মিছিলটি মৌলালি থেকে ধর্মতলায় আসার পথে এস এন ব্যানার্জি রোড-সহ কয়েকটি রাস্তা প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। একই ভাবে একটি ধর্মীয় সংগঠনের মিছিল দফায় দফায় শ্রদ্ধানন্দ পার্কে পৌঁছনোয় নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, এস এন ব্যানার্জি রোড ও কলেজ স্ট্রিটে গাড়ির গতি কমে যায়। বিকেলের দিকে পার্ক সার্কাস থেকে আরও একটি ধর্মীয় সংগঠনের মিছিল বেরোয়। তবে যান চলাচলের ক্ষেত্রে তার আলাদা করে কোনও প্রভাব পড়েনি। কারণ, তত ক্ষণে গোটা শহরকে একাই তছনছ করে দিয়েছে বৃষ্টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Traffic Water Logging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE