পানি-পথ: বৃষ্টিতে জলমগ্ন এলাকা। সেই জমা জল পেরিয়েই গন্তব্যের পথে। বৃহস্পতিবার, বেহালার পাড়ুইপাড়া রোড। ছবি: অরুণ লোধ
বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই জলমগ্ন বেহালার বেশ কিছু অঞ্চল। খলনায়ক সেই নিকাশি ব্যবস্থা।
অথচ পুরসভার সংযোজিত এলাকার নিকাশি ঢেলে সাজাতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের কয়েকশো কোটি টাকায় কলকাতা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্রুভমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (কেইআইআইপি) কাজ করেছে। তবু কেন নিকাশির এই অবস্থা? তা নিয়ে পুর মহলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে। ঠিক এক বছর আগে কলকাতার তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, নিকাশির কিছু কাজ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে না করায় জল জমার এই সমস্যা। এর পরেই এলাকা পরিদর্শন করে কাজে কোথায় গলদ রয়েছে, তার রিপোর্ট তিনি জমা দিতে বলেন মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহকে। তারকবাবু বৃহস্পতিবার জানান, ‘‘সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছিলাম।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, রিপোর্টে ছিল কোটি কোটি টাকা খরচ করে যে কাজ করেছে কেইআইআইপি, তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। গত বছর জুনে বেহালার জমা জলের পরিস্থিতি দেখে ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও।
এক বছর পরে বদলেছেন কলকাতার মেয়র, কিন্তু জল জমার ছবিটা বদলায়নি। ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের অক্সিটাউন, সরশুনা স্যাটেলাইট টাউনশিপ, ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের মালির মাঠ, রামনারায়ণপল্লি, বাসুদেবপুর, মসজিদপাড়া, পাড়ুইপাড়া এবং ১২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লি-সহ কিছু এলাকায় রাস্তা ছাপিয়ে জল ঢুকেছে ঘরে-দোকানে। ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএম নেত্রী রত্না রায়মজুমদার জানান, আপাতত পাম্প বসিয়ে বেগড় খালে জল ফেলা হচ্ছে। পুরসভার দাবি, সংযোজিত এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে তারা। দিন কয়েক আগে জেমস লং সরণির নীচ দিয়ে নতুন করে নিকাশির পাইপ বসানো হয়েছে। তাতে ১২৪-১২৫, ১৪২-১৪৪ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সুফল পাবেন বলে আশ্বাস পুর কর্তৃপক্ষের। তবে ১২৬-১২৯ ওয়ার্ডের জন্য পুরসভাকে জরুরি পদক্ষেপ করতে হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলরেরা।
লেক গার্ডেন্স এলাকায়। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে জোকায় ৭৬, মোমিনপুরে ৭৪, দমদমে ৫৩, পাটুলিতে ৫১, ধাপায় ৪৯, নিউ মার্কেটে ৪৮, সন্তোষপুরে ৪৬ এবং কাশীপুরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে উল্টোডাঙায় ২৫, মানিকতলায় ৩১, ঠনঠনিয়ায় ৩২ এবং বালিগঞ্জে ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হওয়া বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে দক্ষিণের লেক গার্ডেন্স-সহ বেশ কিছু এলাকা। দেশপ্রাণ শাসমল রোডে টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে গোড়ালি ডোবা জল জমে যায়। জলে ডুবে ছিল খিদিরপুরের রাস্তাও। উল্টোডাঙা, কাঁকুড়গাছি, ঠনঠনিয়া, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, স্ট্র্যান্ড রোডেও এ দিনের বৃষ্টিতে জল জমে যায়। যে কারণে সকাল থেকে ওই সব রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে যানজট হয়ে যায় বিভিন্ন জায়গায়। থমকে থমকে গাড়ি চলেছে এ জে সি বসু রোড বা মা উড়ালপুল দিয়ে। ফলে অফিসের জন্য বেরিয়ে নাকাল হয়েছেন যাত্রীদের বড় অংশ।
মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ জানান, উত্তরে জল জমার সমস্যা মূলত চার জায়গায়। তা চিহ্নিত করা গেলেও কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। সে সব কাটাতে খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ দিন আলিপুরের বেলভেডিয়ার রোড এবং লেক থানার সামনে গাছ ভেঙে পড়ে যায়। শহরের একাংশ যানজটে রুদ্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে দুপুর গড়িয়ে যায়। রাতেও উত্তর বন্দর থানার সামনে জল জমে থাকায় স্ট্র্যান্ড রোড সংলগ্ন সব রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy