Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
New Market

New Market: দু’পক্ষের ‘মতবিরোধে’ স্থগিত নিউ মার্কেটের সংস্কার

সংস্কারের পদ্ধতি নিয়ে পুরসভার হেরিটেজ কমিটি এবং সংস্কারের কাজে নিযুক্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলের মধ্যে ‘মতবিরোধ’ এই অচলাবস্থার কারণ।

নিউ মার্কেটের পুরোনো কমপ্লেক্সের সংস্কারের জন্য চলছে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট’-এর কাজ।

নিউ মার্কেটের পুরোনো কমপ্লেক্সের সংস্কারের জন্য চলছে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট’-এর কাজ। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:১১
Share: Save:

প্রকল্পের কাজ শুরু হতে না হতেই দু’পক্ষের ‘মতবিরোধের’ কারণে অচলাবস্থা তৈরি হল নিউ মার্কেট সংস্কারের কাজে। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, সংস্কারের পদ্ধতি নিয়ে পুরসভার হেরিটেজ কমিটি এবং সংস্কারের কাজে নিযুক্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলের মধ্যে ‘মতবিরোধ’ এই অচলাবস্থার কারণ।

গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ দল নিউ মার্কেটের পুরনো হেরিটেজ কমপ্লেক্স (যার নাম এস এস হগ মার্কেট) সংস্কারের রূপরেখা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি উপস্থাপনা (প্রেজ়েন্টেশন) দিয়েছিল। তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ও বিশেষজ্ঞ দলকে জমা দিতে বলে পুর হেরিটেজ কমিটি। তারা আরও বলে, এই বাজার ‘গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ’ তালিকাভুক্ত হওয়ায় যে নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে বাজারের কাঠামো তৈরি হয়েছিল, প্রধানত সেই সামগ্রীই সংস্কারের সময়ে ব্যবহার করা সঙ্গত হবে।

এর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ কমিটির জমা দেওয়া চূড়ান্ত রিপোর্টটি তৃতীয় পক্ষের একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়ার কথাও বলে পুর হেরিটেজ কমিটি। আভিধানিক ভাষায় যাকে বলা হয় ‘থার্ড পার্টি ভেটিং’। এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয়ে সম্মতি দিতে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনে লিখিত ভাবে আবেদনও জানানো হতে পারে বলে হেরিটেজ কমিটি সূত্রের খবর।

অতর্কিতে কাঠামোর অংশ ভেঙে পড়া আটকাতে দেওয়া রয়েছে ঠেকনা।

অতর্কিতে কাঠামোর অংশ ভেঙে পড়া আটকাতে দেওয়া রয়েছে ঠেকনা।

হেরিটেজ কমিটির সদস্য, খড়্গপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ‘আর্কিটেকচার অ্যান্ড রিজিয়োনাল প্ল্যানিং’-এর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তথা হেরিটেজ বিশেষজ্ঞ সঙ্ঘমিত্রা বসু এবং হেরিটেজ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি গুহ এ বিষয়ে জানাচ্ছেন, বর্তমান নির্মাণ পদ্ধতিতে বড় কোনও প্রকল্পের ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশেষজ্ঞ সংস্থার মতামত নেওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। হিমাদ্রিবাবুর কথায়, ‘‘এর অর্থ এই নয় যে, বিশেষজ্ঞ সংস্থার বা সংস্কারের কাজে নিযুক্ত কোনও পক্ষের মতামতকে উপেক্ষা করা হল অথবা তাদের প্রস্তাবিত
নকশা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হল। বরং কাঠামোর স্থায়িত্ব আরও বহু বছর বজায় রাখার জন্য তৃতীয় কোনও সংস্থার মতামত নেওয়াটা জরুরি। এতে সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাও বজায় থাকে।’’

কিন্তু সংস্কারের কাজে নিযুক্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞ দলের আবার বক্তব্য, প্রায় দেড়শো বছর আগে এই বাজার তৈরির সময়ে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী সংস্কারের কাজে কতটা ব্যবহার করা যাবে, না কি তার সঙ্গে আধুনিক নির্মাণ সামগ্রীও ব্যবহার করা হবে, সেটা বিবেচনা সাপেক্ষ। তা ছাড়া, বাজারের প্রায় ৩০ ফুট উঁচু দেওয়ালকে ঠেকনা (সাপোর্ট) দেওয়ার জন্য পার্শ্ব দেওয়াল (ক্রস ওয়াল) নেই। একক ভাবে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেওয়ালের কাঠামোর অবস্থা বেশ খারাপ। তার সঙ্গে বাজারে নির্দিষ্ট সময় অন্তর হওয়া মেরামতির কাজ এবং মূল কাঠামোর সম্প্রসারণে নির্মাণ-শৈলীর নিয়ম মানা হয়নি। যার ফলে মূল কাঠামো আরও ভঙ্গুরপ্রবণ হয়ে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দলের প্রোফেসর গোকুল মণ্ডল এবং ভিজ়িটিং প্রোফেসর বিশ্বজিৎ সোম জানাচ্ছেন, নিউ মার্কেট তৈরির সময়ে ‘ফ্ল্যাট রুফ’ বা এখনকার মতো ছাদ তৈরির রীতি ছিল না। কারণ, তার জন্য কংক্রিট, বিম, টাইলসের প্রয়োজন হয়। কংক্রিট না থাকায় চুন-সুরকি দিয়েই তখন বাজারের কাঠামোর ছাদ তৈরি হয়েছিল। সেই ছাদেরই বিভিন্ন অংশ সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল। কাঠামো পরীক্ষায় আরও ধরা পড়েছে, বাজারের ভিতরে ঢালাই লোহার স্তম্ভগুলির (কাস্ট আয়রন কলাম) মধ্যে জ্যামিতিক অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। ফলে, সেই স্তম্ভগুলি আর কত দিন ছাদের ওজন ধরে রাখতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে বাজারের নির্মাণগত অ্যাসেসমেন্ট এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্টও পুরসভার বাজার দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কাঠামো সংস্কারের প্রধান কাজ শুরু হবে চূড়ান্ত রিপোর্ট অনুমোদনের পরে। সেই রিপোর্ট তৈরি করার কাজ চলছে। ওই রিপোর্ট যাতে বাস্তবসম্মত হয়, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।’’

প্রসঙ্গত, পাঁচ মাস আগে মহাসমারোহে শতাব্দীপ্রাচীন নিউ মার্কেট সংস্কারের কথা ঘোষণা করেছিল পুরসভা। বাজার ঘুরে বিশেষজ্ঞেরা দ্রুত সংস্কারের সুপারিশও করেছিলেন, যা আপাতত স্থগিত। কলকাতা পুরসভার বাজার দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা বিদায়ী পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য আমিরুদ্দিন ববির কথায়, ‘‘বাজারের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা মেরামতির কাজের জন্য ইতিমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। চূড়ান্ত কাজও শুরু হবে।’’

যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, কাজ শুরু তো হবে ঠিকই। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই ‘শুভ ক্ষণ’ আসবে কবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE