বাগমারি সেতুর নীচে খালের ধার বরাবর বসবাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়েছিল গত মঙ্গলবার। তার দু’দিন পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, শহরের বিভিন্ন সেতু এবং উড়ালপুলের নীচে থাকা দখলকারীদের সরাতে হবে। সেই বৈঠকের পরে কেটে গিয়েছে আরও তিন দিন। রবিবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, একাধিক সেতু এবং উড়ালপুল ঘুরে দেখা গেল ছবিটা বদলায়নি এতটুকুও। কোথাও বিপজ্জনক ভাবে চলছে গেরস্থালি, কোথাও স্থায়ী নির্মাণ করে ব্যবসা।
মানিকতলা থানার পাশেই ক্যানাল ওয়েস্ট রোডের ধারে বাগমারি সেতু। ১৯২৬ সালে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (কেআইটি) সেতুটি তৈরি করেছিল। এ দিন গিয়ে দেখা গেল, খালের দু’ধারে প্রায় শ’খানেক পরিবারের বাস। ৯০ বছরেরও বেশি পুরনো এই সেতুর দু’পাশ থেকে আগাছা বেরিয়েছে। একটু বৃষ্টিতেই জল চুঁইয়ে পড়ে। এমন বিপজ্জনক ভাবে বসবাস কেন? স্থানীয় এক বৃদ্ধা বললেন, ‘‘কয়েক দশক ধরে এখানে রয়েছি। দু’দিন আগে পুলিশ আমাদের সরে যেতে বলেছে। কিন্তু কোথায় যাব?’’
বিজন সেতু বা শিয়ালদহ উড়ালপুলের নীচে স্থায়ী নির্মাণ করে চলছে ব্যবসা। শিয়ালদহ উড়ালপুলের নীচে শিশির মার্কেটে স্টল ও হকার মিলিয়ে ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। প্রতিদিন ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করেন কয়েক লক্ষ অফিসযাত্রী। ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘কয়েক পুরুষ ধরে এখানে ব্যবসা করছি। তাড়িয়ে দিলে যাব কোথায়?’’ বিজন সেতুর নীচেও পুরো এলাকা জুড়ে বাজার। জায়গায় জায়গায় চাঙড় ভেঙে গিয়েছে। তার মধ্যেই রোজকার কারবার।
দখলকারীরা রীতিমতো সংসার পেতে বসেছেন গড়িয়াহাট বা ঢাকুরিয়া উড়ালপুলের নীচেও। আগুন জ্বালিয়ে অবাধে চলছে রান্না। এ দিন গড়িয়াহাটে গিয়ে দেখা গেল, উড়ালপুলের নীচে কেউ ঘুমোচ্ছেন, কেউ আবার খাট পেতে গল্পে মশগুল। অথচ সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে গড়িয়াহাট থানা।
বিজন সেতুর নীচে যে ভাবে স্থায়ী নির্মাণ গড়ে ব্যবসা চলছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে আমাদের প্রতিটি সেতু ও উড়ালপুলের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে উড়ালপুলের নীচে স্থায়ী নির্মাণ বা বসবাস বরদাস্ত করা যায় না।’’ প্রশাসন আগে ব্যবস্থা নেয়নি কেন? সুব্রতবাবুর জবাব, ‘‘মানবিকতার খাতিরে এত দিন ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া, এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার, স্থানীয় মানুষজন, সেতুর তদারকি সংস্থা—সকলকে এটা ভাবতে হবে।’’
বিজন সেতুর নীচেই সিএসটিসি-র একটি ছোট গুমটি আছে। এক পরিবহণকর্মীর কথায়, ‘‘মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর থেকেই আতঙ্কে কাজ করছি।’’
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেল, ১৯৭৮ সালে এই সেতু তৈরির পর থেকে ধীরে ধীরে তদানীন্তন সরকারের তরফে স্থায়ী নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সুব্রতবাবুর অভিযোগ, ‘‘শিয়ালদহ উড়ালপুল বা বিজন সেতু, দু’টি ক্ষেত্রেই স্থায়ী নির্মাণ করে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বাম আমলে। তার খেসারত এখন আমাদের দিতে হচ্ছে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? সেতুগুলির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা কেএমডিএ-র সিইও সঞ্জয় বনসল বলেন, ‘‘শহরের সব সেতু ও উড়ালপুলের নীচে কোথায়, কত লোক থাকছেন বা ব্যবসা করছেন, সে সম্পর্কে রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। এই সপ্তাহেই সেই রিপোর্ট কলকাতা পুরসভা ও পুলিশকে পাঠানো হবে। সেতুর নীচে কেউ বসবাস বা ব্যবসা করলে আমরা তাঁদের সরাতে পারি না। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পুরসভা ও পুলিশের।’’
দখলকারীদের সরাতে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে? যুগ্ম নগরপাল (সদর) সুপ্রতিম সরকার ফোন ধরেননি। এসএমএসের উত্তর আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy