Advertisement
১৭ মে ২০২৪

পুকুর ‘সংস্কার’, পাড়ায় ধস

এক ব্যক্তির নির্দেশে তাঁর সম্পত্তির একটি পুকুর সংস্কার করে সুইমিং পুল তৈরি শুরু করেছিলেন এক যুবক। পাড়া-পড়শিও বাধা দেননি। কাজ শুরুর পরে পুরসভাকে চিঠিতে জানানো হয়েছিল পুকুরের পাঁক পরিষ্কার হচ্ছে। ফলে আপত্তি তোলেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। জানত না পুলিশও। কিন্তু রাস্তায় ফাটল ধরতে থাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। শেষমেশ মন্ত্রী, পুলিশ, পুরকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছনোয় আসল কথা জানাজানি হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৪
Share: Save:

এক ব্যক্তির নির্দেশে তাঁর সম্পত্তির একটি পুকুর সংস্কার করে সুইমিং পুল তৈরি শুরু করেছিলেন এক যুবক। পাড়া-পড়শিও বাধা দেননি। কাজ শুরুর পরে পুরসভাকে চিঠিতে জানানো হয়েছিল পুকুরের পাঁক পরিষ্কার হচ্ছে। ফলে আপত্তি তোলেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। জানত না পুলিশও। কিন্তু রাস্তায় ফাটল ধরতে থাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। শেষমেশ মন্ত্রী, পুলিশ, পুরকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছনোয় আসল কথা জানাজানি হয়। কলকাতা পুরসভার ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে বৈষ্ণবঘাটা বাই লেনের ঘটনা। জনসাধারণের সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে শনিবার রাতে ইন্দ্রনীল মজুমদার নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়েরা জানান, মঙ্গলবার পাড়ায় এসে ইন্দ্রনীল জানান, পুকুরের জল ছেঁচে পরিষ্কার করে সুইমিং পুল করা হবে। পুকুরের মালিকের অনুমতি নিয়ে আসায় কেউ বাধা দেননি। দুই শ্রমিককে নিয়ে কাজ শুরু করেন ওই যুবক। তার পরপরই রাস্তায় ফাটল ধরতে থাকে। অভিযোগ, তখন কাজ থামাতে বললেও তা কানে তোলেননি ইন্দ্রনীল। রাস্তায় ক্রমাগত ফাটল বাড়তে থাকলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সবাই। এ দিকে, পুকুরের পাশের মাটি ও গাছও কাটতে থাকেন ওই যুবক। পুকুরের পাশের আবাসনের একতলায় দেখা দেয় ফাটল। অনেকখানি বসে যায় রাস্তা। এর পরেই বিপদ বুঝে কাজ বন্ধ করে দেন ইন্দ্রনীল।

পাড়ার লোকেরা স্থানীয় কাউন্সিলর ও বরো চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শনিবার রাতে পুলিশ নিয়ে যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদে সুইমিং পুল তৈরির কথা জানাজানি হলে দেখা যায়, পুরসভা বা পুলিশের অনুমতিই নেওয়া হয়নি। এর পরেই ইন্দ্রনীলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রবিবার গিয়ে দেখা যায়, অর্ধেকেরও বেশি রাস্তা বসেছে। পুকুরে আধডোবা কিছু গাছ। কোনওমতে পাশ দিয়ে যাতায়াত করছেন বাসিন্দারা। ভ্যানে চাপিয়ে পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শালগাছের গুঁড়ি। খোয়া এবং বালির বস্তা ফেলেও রাস্তা মেরামতি চলছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাটি ধসে গিয়ে পানীয় জল পেতেও অসুবিধা হচ্ছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, পুকুরটি গড়িয়া স্টেশন রোডের বাসিন্দা শৈলেন চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির। ইন্দ্রনীলকে তিনিই পাঠান। মজে যাওয়া পুকুরটি সংস্কার করে সুইমিং পুল করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। তবে শুধু সংস্কারের কথাই পুরসভাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল বলে দাবি পুর-কতৃর্পক্ষের।

স্থানীয় কাউন্সিলরও কি জানতেন না? কাউন্সিলর অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছেলেটি আমার কাছে আসেনি। স্থানীয়দের থেকে জেনেছিলাম পাঁক পরিষ্কার হচ্ছে। নিজের সম্পত্তি পরিষ্কার করলে তো কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু জনসাধারণের ক্ষতি হতে পারে, এমন কাজে অবশ্যই সাবধান হওয়া উচিত ছিল।’’

ধস নামল কী করে? এক পুর-ইঞ্জিনিয়ার জানাচ্ছেন, পুকুর কাটার বৈজ্ঞানিক নিয়ম মানেনি ইন্দ্রনীল। এই কাজে শালের গুঁড়ি বা কংক্রিটের দেওয়ালের প্রতিরোধ-প্রাচীর তৈরি করতে হয়। তা না হলে জল কমে গিয়ে পার্শ্বচাপ কমে মাটি ধসে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে বলে দাবি ওই ইঞ্জিনিয়ারের।

স্থানীয় বাসিন্দা ননীগোপাল বণিক, দুর্গাদাস রায়ের কথায়, ‘‘ঠিক সময়ে কাজ বন্ধ না করালে আরও বড় বিপদ হতে পারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE