বাজেয়াপ্ত: খাদ্য সামগ্রীর সঙ্গে রয়েছে বরফও। নিজস্ব চিত্র
খাবারে ভেজাল রুখতে অভিযান ছিল পুরসভার। কিন্তু নিউ মার্কেট এলাকার একাধিক শরবতের দোকানে গিয়ে তাঁদের চোখ কপালে ওঠে। ডাঁই করা বরফের টুকরো ভেঙে দেওয়া হচ্ছে শরবতে। এ তো খাবারের বরফ নয়। মাছ, মাংস এবং মৃতদেহ সংরক্ষণের বরফ। তা হলে শরবতে তা দেওয়া হচ্ছে কেন? চেপে ধরতেই অভিযানে যাওয়া পুরকর্মীরা জানতে পারেন, এই বরফ দিয়ে বানানো শরবতই তাঁরা রোজ বিক্রি করেন। অভিযোগ আগেও ছিল, কিন্তু হাতেনাতে যে তা ধরা পড়ে যাবে, এমনটাও ভাবতে পারেননি পুরকর্মীরা। তার উপের আবার ধরা পড়ে যাওয়া এক দোকানদারই জানিয়ে দেন, কারা পাইকারি হারে বিক্রি করে সেই বরফ। এর পরেই পুরসভার টিম গিয়ে ধরে ওই বরফের কারবারিকে।
বুধবার ধর্মতলা চত্বরে খাবারে ভেজাল বন্ধে অভিযান চালায় পুরসভা। সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ-সহ পুরসভার ফুড ইনস্পেক্টর এবং পুলিশ। পুরসভা সূত্রের খবর, কাটা ফল থেকে চাউমিন, বিরিয়ানি-সহ মুখরোচক নানা খাবারে যে ভাবে ভেজাল মেশানোর কারবার চলেছে, তা ভয়ঙ্কর। শুধু ফুটপাথে নয়, রাস্তার পাশে থাকা সাজানো-গোছানো দোকানেও মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে খাবারে। অতীনবাবু জানান, এর আগে সচেতনার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। আর নয়, এ বার যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ নিউ মার্কেট থেকে ধর্মতলা চত্বরে অভিযান চালায় পুরসভা। অতীনবাবু জানান, লিন্ডসে স্ট্রিটের কাছে ১৬টি দোকানের খাবার পরীক্ষা করে দেখেন ইনস্পেক্টর। এর মধ্যে ১১টি দোকানে ভেজাল দেওয়ার নুমনা মিলেছে। একাধিক শরবতের দোকানে দেখা গিয়েছে সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা (যা খাবারের জন্য নয়) বরফ দিয়ে শরবত বানানো হচ্ছে। শরবতের দোকানে অভিযান চালানোর সময়ে এক দোকানদার বলেই বসেন, ‘‘যাঁরা ওই বরফ বিক্রি করছেন তাঁদেরকেও ধরুন। কেন তাঁরা বিক্রি করছেন?’’ এর পরেই পুরসভার দল বরফ সরবরাহকারী ব্যবসায়ীর নাম, ঠিকানা জেনে সেখানে ধাওয়া করেন। পুর প্রশাসনের এক অফিসার জানান, ওই ব্যবসায়ীর বেশ কয়েক টন বরফ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাদ যায়নি কাটা ফল বিক্রির দোকানও। এমনকী, নিউ মার্কেটের ভিতরে বিস্কুট গুঁড়োতেও ভেজাল মিলেছে। প্রায় হাল্লার দলের কায়দায় এ দিন অনেক খাবার তুলে নষ্ট করে দিয়েছে পুরসভার দল।
অতীনবাবু জানান, এই সব খাবারের মধ্যে কী ধরনের ভেজাল মেশানো হচ্ছে, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে পুরসভার পরীক্ষাগারে। মানুষের শরীরে পক্ষে বিপজ্জনক এমন কিছু থাকলে সংশ্লিষ্ট দোকানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে শহর জুড়ে ভেজাল অভিযান চলবে বলে জানান তিনি। এর জন্য কলকাতার প্রতিটি বরোর চেয়ারম্যানদের নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার পুরভবনে বৈঠক করবেন অতীনবাবু। নিজ নিজ এলাকায় ভেজাল রুখতে তৎপর হওয়ার কথাও বলা হবে তাঁদের।
তবে পুরসভা যতই তৎপর হোক না কেন, খাবারে ভেজাল মেশানোর কারবার সহজে বন্ধ করা সম্ভব কি? তার জবাব মিলল পুরসভার দল অভিযান শেষ করতেই। একই জায়গায় কিছু ক্ষণেই শুরু হয়ে গেল ভেজাল খাবার বিক্রির কারবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy