Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বন্ধ হওয়া অ্যাকাউন্টে জমা পড়ল ৮০ কোটি টাকা!

মহিমবাবুর ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৮০ কোটি টাকা! অথচ সেই টাকা খরচ করা তো দূর অস্ত্‌, আতঙ্কেই শিরদাঁড়া বেয়ে হিমেল স্রোত নামছে তাঁর। পরিস্থিতি এমনই যে দিনরাত থানা ও ব্যাঙ্কের চক্কর কাটছেন তিনি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৭
Share: Save:

‘ভূতের’ টাকা ট্যাঁকে এসে পড়েছে তাঁর! সেই চিন্তাতেই ঘুম উড়েছে বেহালার মহিম হালদারের।

মহিমবাবুর ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে প্রায় ৮০ কোটি টাকা! অথচ সেই টাকা খরচ করা তো দূর অস্ত্‌, আতঙ্কেই শিরদাঁড়া বেয়ে হিমেল স্রোত নামছে তাঁর। পরিস্থিতি এমনই যে দিনরাত থানা ও ব্যাঙ্কের চক্কর কাটছেন তিনি।

ব্যাপারটা কী?

পুলিশ সূত্রের খবর, পেশায় ইন্টেরিয়র ডেকরেটর মহিমবাবু একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। কিন্তু পরিচয়পত্রের ত্রুটি থাকায় অ্যাকাউন্টটি সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেয় ব্যাঙ্ক। দিন কয়েক আগে মহিমবাবু টের পান, দফায় দফায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা জমা প়়ড়েছে ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া’ ওই অ্যাকাউন্টেই। কে রেখেছে সেই টাকা? তার কোনও হদিস নেই। ব্যাঙ্কের তরফেও সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ। অগত্যা হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, টাকা পাচারের জন্য কোনও অপরাধী চক্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ঘটনায় গ্রেফতারির খবর নেই।

মহিমবাবু জানান, সম্প্রতি তিনি অ্যাকাউন্ট খুলতে চেয়ে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে আর্জি জানান। ২৬ অগস্ট সখেরবাজার শাখা থেকে এক ব্যাঙ্ককর্মী তাঁর বাড়িতে এসে নথিপত্র, ছবি, সই নিয়ে যান। আবেদনকারী হিসেবে নতুন অ্যাকাউন্টে জমা করার জন্য তাঁর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ৩৫ হাজার টাকার চেকও জমা দেন মহিমবাবু। ২৯ অগস্ট নতুন অ্যাকাউন্টে সেই টাকা জমাও পড়ে। তিনি একটি এটিএম কার্ড ও ‘পিন’ পান। তিনি জানান, কয়েক দিন পরে ওই ব্যাঙ্ক থেকেই ফোন করে জানানো হয়, নথিপত্রে কিছু ত্রুটি রয়েছে। তাই ব্যাঙ্কের নিয়মানুযায়ী অ্যাকাউন্ট সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে লিখিত ভাবে কিছু জানানো হয়নি। চেকটি যে অ্যাকাউন্ট থেকে কাটা হয়েছিল, সেখানেই চেকে উল্লেখ করা টাকার অঙ্ক ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। বুধবার ৩৫ হাজার টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠানো হয়। প্রশ্ন উঠেছে, অ্যাকাউন্ট না খোলা গেলে চেক কেন ভাঙানো হবে? সে ক্ষেত্রে চেক গ্রাহকের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা।

আরও পড়ুন:মেট্রো সুড়ঙ্গে এ বার মিলবে বিএসএনএল

মহিমবাবুর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সাতসকালে তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ ঢোকে। তাতে বলা হয় বেসরকারি ব্যাঙ্কে খোলা নতুন অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা প়ড়েছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই একের পর এক মেসেজ ঢুকতে থাকে। প্রায় ৪০০টি মেসেজ ঢোকে। ‘‘সব মিলিয়ে জমা পড়া টাকার পরিমাণ ৮০ কোটি!’’ বলছেন মহিমবাবু।

মহিমবাবু জানান বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা বাজতেই তড়িঘড়ি মহিমবাবু সখেরবাজারের ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে হাজির হন। কিন্তু দুপুর ২টো পর্যন্ত বসিয়ে রাখলেও কেউ তাঁর কথা শোনার জন্য ছিলেন না বলে অভিযোগ। পরে বিষয়টি শুনে এক ব্যাঙ্ককর্মী তাঁর এটিএম কার্ড ও পিন নষ্ট করে দেন। এর পরেই হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ জানান মহিমবাবু।

ব্যাঙ্ক-জালিয়াতি দমনে বিশেষজ্ঞ গোয়েন্দা অফিসারেরা বলছেন, কালো টাকা পাচারের কৌশল হিসেবে এই ধরনের কায়দা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে মহিমবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ও সই দুষ্কৃতীদের কাছে পাচার হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনায় ব্যাঙ্ককর্মীদের একাংশ জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ। যদিও শুক্রবার ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের সখেরবাজার শাখায় যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, কোনও প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই এমন ঘটনা ঘটেছে। ব্যাঙ্কের হয়ে যে সংস্থা জনসংযোগ করে, তারা ই-মেল মারফত জানিয়েছে, গ্রাহকের তথ্য নিরাপদ রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bank account
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE