Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Trinamool

মুকুলের ‘অভিসন্ধি’ বুঝতে পারেননি সব্যসাচী, দাবি ববির, তৃণমূলের বাইরে বন্ধুত্ব না করার নিদান

তিন দিন ধরে চলতে থাকা জল্পনা তুঙ্গে পৌঁছেছিল রবিবার সকালে। উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, বিধাননগরের জন্য নতুন মেয়র বাছা হবে।

সব্যসাচী দত্ত এবং ফিরহাদ হাকিম।

সব্যসাচী দত্ত এবং ফিরহাদ হাকিম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ২০:৩৬
Share: Save:

তিন দিন ধরে চলতে থাকা জল্পনা তুঙ্গে পৌঁছেছিল রবিবার সকালে। উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, বিধাননগরের জন্য নতুন মেয়র বাছা হবে। কিন্তু যে বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল, সেই বৈঠক শেষ হতেই বদলে গেল ছবি। ‘অভিসন্ধি’ বুঝতে না পেরে মুকুল রায়কে নিজের বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছিলেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত— বললেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা তৃণমূলের পুরদলের নেতা ফিরহাদ হাকিম। তৃণমূলের বাইরের কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তা না করার নিদানও দিয়ে দিলেন ফিরহাদ।

বিধাননগর পৌর নিগমের ৩৯ জন তৃণমূল কাউন্সিলরকে রবিবার ডাকা হয়েছিল শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে। দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে মেয়র সব্যসাচী দত্তের একেবারে উল্টো মেরুতে থাকা নেতা তথা বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুর ক্লাব শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ে বৈঠক ডাকাকে ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছিলেন অনেকেই। বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে নিজের বাড়িতে আপ্যায়ন করার মূল্য চোকাতেই হবে সব্যসাচীকে, সরতে হবে মেয়র পদ থেকে— নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের অনেকেই। জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন যে, এই বৈঠকে আলোচনা করে পরবর্তী মেয়রের নাম স্থির করা হবে। কিন্তু বৈঠক শেষে জ্যোতিপ্রিয়, সব্যসাচী ও সুজিতকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে ফিরহাদ হাকিম বুঝিয়ে দিলেন, মেয়র পদ থেকে আপাতত সরানো হচ্ছে না সব্যসাচী দত্তকে।

ফিরহাদ এ দিন দাবি করেন, তৃণমূলের অন্দরে সন্দেহের পরিবেশ তৈরি করতেই মুকুল রায় শুক্রবার রাতে সল্টলেকে সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ফিরহাদ বলেন যে, ‘‘মুকুল রায়ের অভিসন্ধি বুঝতে পারেননি সব্যসাচী দত্ত।’’ লুচি-আলুর দম খাওয়ার নাম করে তিনি বাড়িতে ঢুকবেন এবং বাইরে মিডিয়া দাঁড় করিয়ে রাখবেন, এমনটা সব্যসাচী বুঝতে পারেননি বলে ফিরহাদ দাবি করেন।সব্যসাচীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের সুযোগ নিয়েই মুকুল এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। তার পরেই ফিরহাদের বার্তা— তৃণমূলের বাইরের কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা আত্মীয়তা এড়িয়ে চলতে হবে। পুরমন্ত্রীর নিদান— ‘‘তৃণমূলের মধ্যেই বন্ধুত্ব, তৃণমূলের মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া, আত্মীয়তা।’’ তৃণমূল বিশ্বাস রাখে গাঁধীবাদে, সুভাষবাদে, বিজেপি তাতে বিশ্বাস রাখে না— বলেন ফিরহাদ। গাঁধীর হত্যাকারীদের মতাদর্শে বিজেপি বিশ্বাস রাখে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সেই কারণে বিজেপির লোকজনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখা চলবে না বলে ফিরহাদ হাকিম এ দিন হুঁশিয়ারি দেন। তিনি জানান, ‘‘সব্যসাচী দত্ত স্বীকার করেছেন যে, তিনি একটা ভুল করে ফেলেছেন।’’

আরও পড়ুন, ‘লুচি-আলুর দম খেতে’ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের বাড়িতে হঠাৎ মুকুল রায়!

গোটা বিতর্কটা কেন তৈরি হল, সে বিষয়ে সব্যসাচীকেও কথা বলতে বলেন ফিরহাদ। সব্যসাচী জানান যে, বড়মার শেষকৃত্য নিয়ে তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলেন, আড়াই রাত ঘুমোননি। শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন ঠাকুরনগর থেকে ফিরছিলেন, তখনই মুকুল রায়ের ফোন পান। সব্যসাচীর কথায়, ‘‘তিনি ফোন করে বললেন, অনেক দিন তোর সঙ্গে দেখা হয় না, তোর বাড়ি যাচ্ছি।’’ বিধাননগরের মেয়রের প্রশ্ন, ‘‘এই কথার পরে আমি কী বলব? বললাম, হ্যাঁ, এস।’’ সব্যসাচী জানান, দীর্ঘদিন একই দলে থাকার সুবাদে মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তাই মুকুল রায় তাঁর পরিবারের সকলকেই চেনেন। সেই সুবাদেই তাঁর বাড়ি গিয়ে তাঁর স্ত্রীয়ের কাছে মুকুল রায় লুচি-আলুর দম খেতে চেয়েছিলেন বলে সব্যসাচী জানান। তিনি বলেন, ‘‘লুচি-আলুর দম তো কারও বাড়িতে তৈরি করা থাকে না। সেটা তৈরি করতে যতটা সময় লাগে। সেটা খেয়েই উনি বেরিয়ে যান।’’ সব্যসাচীর দাবি, যে সময়টুকু মুকুল রায় তাঁর বাড়িতে ছিলেন, সে সময়ে ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। তাঁর সঙ্গে মুকুল রায়ের কথা হয় ওই ম্যাচ নিয়ে এবং নানুর-চমকাইতলা-কেশপুরের ঘটনা নিয়ে।

আরও পড়ুন, পশ্চিমবঙ্গে ৭ দফায় নির্বাচন, দেখে নিন কবে-কোথায় ভোট

বিধাননগরের মেয়র তথা রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক এ দিন স্পষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেন যে, মুকুল রায়কে তিনি ডাকেননি, মিডিয়াকেও তিনি খবর দেননি। সব্যসাচীক কথায়, ‘‘কোনও মিডিয়াকে আমি ডাকিনি। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে, আমি মিডিয়াকে খবর দিয়েছিলাম, তা হলে যা শাস্তি হয়, মাথা পেতে নেব।’’

রবিবার বিকেলে শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের এই সাংবাদিক বৈঠকের পরে সব্যসাচী দত্তকে নিয়ে তৈরি হওয়া যাবতীয় জল্পনা নস্যাৎ হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় আচমকা সব্যসাচীর বাড়িতে মুকুল রায় হাজির হওয়ার পরেই জল্পনাটা শুরু হয়েছিল। সব্যসাচী বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন এবং বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে কাকলী ঘোষ দস্তিদারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হচ্ছেন— জল্পনা এত দূর গড়িয়ে গিয়েছিল। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের নির্বাচনী প্রস্তুতি সংক্রান্ত বৈঠকে সব্যসাচী যোগ না দেওয়ায় সেই জল্পনা আরও বাড়ে। কিন্তু রবিবার সকালে তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন সব্যসাচীর বাড়ি যান এবং দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশেই দোলা গিয়েছিলেন বলে খবর। তার পরে দুপুর ৩টেয় শ্রীভূমিতে ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং সুজিত বসুর উপস্থিতিতে হওয়া বৈঠকে সব্যসাচী হাজির হন। বৈঠকে শেষে জানিয়ে দেন, তিনি তৃণমূলেই থাকছেন।

(কলকাতা শহরের রোজকার ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabyasachi Dutta TMC Trinamool Firhad Hakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE