Advertisement
০৩ মে ২০২৪
স্কুলে মিলল লার্ভা

সময়ে উদ্যোগী হতে ব্যর্থ বিধাননগর পুরসভা

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের যুক্তি দেখিয়ে রোগের আশঙ্কার কথা বলেছিলেন অভিভাবকেরা। স্কুল তাঁদের দাবি মানেনি। মশা মারার লোকজন নিয়ে স্কুলে হাজির হয়েছিলেন পুর-প্রতিনিধিও। অথচ তাঁকে স্কুলে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।

সল্টলেকের স্কুলে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা।

সল্টলেকের স্কুলে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা।

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের যুক্তি দেখিয়ে রোগের আশঙ্কার কথা বলেছিলেন অভিভাবকেরা। স্কুল তাঁদের দাবি মানেনি। মশা মারার লোকজন নিয়ে স্কুলে হাজির হয়েছিলেন পুর-প্রতিনিধিও। অথচ তাঁকে স্কুলে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। স্কুলের দরজা থেকেই ফিরে এসেছেন তিনি। অভিযোগ এমনটাই। আর মেয়রের সাফাই, স্কুল না চাইলে তাঁরা স্কুলের ভিতরে ঢুকে মশা তাড়ানোর কাজ করতে পারেন না।

সেই স্কুলেই জ্বরে ভুগে মৃত্যু হয়েছে দুই পড়ুয়ার। তাকে কেন্দ্র করে সোমবার স্কুলে অভিভাবকদের তুমুল বিক্ষোভের জেরে অবশ্য পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে রাতারাতি। স্কুলে অনায়াসেই ঢুকতে পেরেছেন পুরপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। পরিদর্শনে মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী লার্ভা। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বিধাননগরের তিন নম্বর সেক্টরের ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুল কর্তৃপক্ষও।

মেয়র সব্যসাচী দত্তের দাবি, বিধাননগর পুর-নিগম তৈরি হওয়ার পরে ওই স্কুলের তরফে সাফাইয়ের কোনও আবেদন জমা পড়েনি। তিনি বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ না চাইলে স্কুলের মধ্যে পুরকর্মীরা ঢুকতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ করা ছাড়া কোনও পথ নেই। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্য স্কুল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’’

প্রশ্ন উঠেছে, জল জমে মশা জন্মানোর মতো নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে কোথাও গিয়ে পুর-প্রশাসন কি প্রয়োজনে অধিকারবলে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারে না। কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং সল্টলেকের একাধিক প্রাক্তন পুর-প্রধানের মতে, সে অধিকার রয়েছে পুরসভার। শোভনবাবুর বক্তব্য, ‘‘পুর-আইনেই এই অধিকার পুরসভাগুলিকে দেওয়া আছে।’’ কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, ‘‘জরুরি অবস্থায় পুরসভা প্রথমে আবেদন জানাবে। প্রয়োজনে জনস্বার্থে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাজ করার অধিকার রয়েছে পুর-প্রশাসনের।’’ একই মত বিধাননগরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিশ্বজীবন মজুমদার-সহ একাধিক ব্যক্তিরও। আর সেখানেই ‘ব্যর্থতা’র নজির গড়েছে বিধাননগর পুর-নিগম।

অবশেষে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা হল ক্লাসঘরে। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

এ দিন ওই স্কুলের সামনে বিক্ষোভের জেরে উত্তেজনা ছড়ালে গেটের সামনে মোতায়েন করা হয় প্রচুর মহিলা পুলিশও। বিক্ষোভের জেরে দাবি মেনে স্কুল জীবাণুমুক্ত করা এবং সাফাইয়ের কাজের জন্য আগামী শুক্রবার পর্যন্ত পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সোমবার তেমন নির্দেশই স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে। পুর-নিগমেরও দাবি, ভারতীয় বিদ্যাভবন কর্তৃপক্ষ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। দ্রুত স্কুলের ভিতরে-বাইরে সাফাই এবং জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলবে।

রবিবার সকালে ওই স্কুলেরই চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া বিবস্বান গুহঠাকুরতা এবং পূর্বিতা হাজরা নামে প্রথম শ্রেণির এক পড়ুয়ার মৃত্যু হয় বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পূর্বিতার মৃত্যু ডেঙ্গির সংক্রমণেই হয়েছে বলে বিধাননগরের পুরনিগমের দাবি।

এ দিন সকাল থেকে দু’দফায় ওই স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখান প্রায় সাড়ে ছ’শো অভিভাবক। তাঁদের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের টনক না নড়াতেই জ্বরে ভুগতে হয়েছে ওই পড়ুয়াদের। দুই পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় স্কুলের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা কোনও শৌচাগার নেই। সাধারণ শৌচাগারও ব্যবহারের অনুপযুক্ত। গোটা স্কুলের চারপাশটাই নোংরা, নিয়মিত সাফাই হয় না। সে কারণে স্বাভাবিক ভাবেই অসুস্থতা ছড়ায়,’’ বলছেন এক অভিভাবক। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করার দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ আমল দেননি বলেই জানিয়েছেন অভিভাবকেরা।

এ দিন স্কুল সংক্রান্ত একগুচ্ছ দাবি নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন অভিভাবকেরা। সাফাই ও জীবাণুমুক্তকরণের পাশাপাশি তাঁদের আরও দাবি, মশা আটকাতে শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি জানালায় নেট লাগাতে হবে। মশা তাড়ানোর পর্যাপ্ত তরল ধূপও থাকতে হবে প্রতি ক্লাসে। নজর দিতে হবে পাখা জোরে ঘোরার বিষয়টিতেও। এর পাশাপাশি তাঁরা চার সদস্যের একটি অভিভাবক-দল তৈরির প্রস্তাবও জানিয়েছেন। যাঁদের কাজ হবে নিয়মিত স্কুলের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা।

যদিও স্কুলের অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির কথা মানতে চাননি অধ্যক্ষ রেখা বৈশ্য। তাঁর দাবি, স্কুলের বাইরে একটি ঘুগনির দোকানের কারণেই নোংরা হয়ে থাকে জায়গাটি। রেখাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে প্রায় ৩০ জন সাফাইকর্মী রয়েছেন। নিয়মিত পরিষ্কারও করা হয়। ইদানীং কিছু নির্মাণকাজ চলায় চারপাশে আবর্জনা জমেছে।’’

পরে এক দিকে অভিভাবকেরা, অন্য দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে দেখা করেন। তবে এ দিনই ওই স্কুলে পরিদর্শনে যান বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু, মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয়কুমার রায়, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি এবং পুর-নিগমের স্বাস্থ্য ও সাফাই দফতরের আধিকারিকেরা। প্রণয়বাবুর অভিযোগ, স্কুলের মধ্যে ফোয়ারা, একটি পাতকুয়ো, জেনারেটর কারের তলায় রাখা পাত্রে অসংখ্য ডেঙ্গির জীবাণুবাহী লার্ভা মিলেছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) জানান, শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে প্রতিটি স্কুলের কাছে জমা জল সরিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে সাফাইয়ের কাজ করার আবেদন পাঠানো হবে। স্কুল চাইলে পুর-কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salt Lake Municipality Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE