বোমার খোঁজে পুলিশ-কুকুরের তল্লাশি। বৃহস্পতিবার, নবান্নে। — নিজস্ব চিত্র
এ বারের হুমকি ফোন না হয় ভুয়ো ছিল। কিন্তু সত্যি হামলা হলে তা সামাল দেওয়ার মতো যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে তো নবান্নে? পুলিশেরই একাংশ বলছে, সেখানে সুরক্ষার হাল যথেষ্ট নয়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, নবান্নের সুরক্ষা আরও আঁটোসাঁটো করতে চেয়ে কলকাতা পুলিশ বছরখানেক আগে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছিল। তার প্রায় কোনওটাই কার্যকর হয়নি।
সূত্রের খবর, সে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, নবান্নে ভিআইপি এবং অন্য নেতা-মন্ত্রীদের আনাগোনা উড়ালপুলের ঢালের এক দিক থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। সেখান থেকে বোমা, গুলিও ছুড়তে পারে কেউ। তাই ফাইবার বা টিনের পাতের ভিউ ক্যাচার রাখা জরুরি। ভিআইপি বা মুখ্যমন্ত্রীর ঢোকার দশ মিনিট আগে থেকে সদর ফটকের কাছাকাছি পুলিশের একটি কুইক রেসপন্স টিমের গাড়ি রাখতে বলা হয়েছিল ওই প্রস্তাবে।
নবান্নের কাছে উড়ালপুলের ঢালে পথ নির্দেশক ফলকের থাম বেয়ে নেমে ভিআইপি প্রবেশপথের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যায়। ওই থামটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা উচিত বলেও বলা হয়েছিল সে প্রস্তাবে। পাশাপাশি, তার ডান ও বাঁ দিক ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরার আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। নবান্নের সদর ফটকে কোনও গাড়ি যাতে বেপরোয়া গতিতে ঢুকে পড়ে বিপদ ঘটাতে না পারে, সেই জন্য স্বয়ংক্রিয় বাধা বা থামের মতো কিছু বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাতে কোনও গাড়ি ঢোকার আগে বাধা পাবে। কিন্তু তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
২০১৩-র অক্টোবরে রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর মহাকরণ থেকে সরে আসে নবান্নে। যা আসলে ছিল রেডিমেড গারমেন্ট-এর হাব। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা হলেও গোড়া থেকেই নবান্নের নিরাপত্তার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের হাতে।
এই রাজ্যে এক জন নিরাপত্তা অধিকর্তা আছেন, তাঁর অধীনে স্পেশ্যাল সিকিওরিটি ইউনিটও রয়েছে। রাজ্যের বর্তমান নিরাপত্তা অধিকর্তা বীরেন্দ্র। তবে এসএসইউ সূত্রের খবর, তারা শুধু ভিআইপি নিরাপত্তা দেখে, নবান্নের চৌহদ্দির সুরক্ষা দেখা তাদের কাজ নয়। সেটা কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ ও রাজ্য পুলিশের আইবি-র দায়িত্ব। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের (আইবি) উপদেষ্টা ওমপ্রকাশ গুপ্ত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘নবান্নে নিরাপত্তার কী কী ফাঁকফোকর রয়েছে, তা আমরা সবিস্তার জানিয়েছিলাম।’’ তা কাটিয়ে উঠতে নানা প্রস্তাবও দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ।
পাঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটির পরে জঙ্গিরা দেশের যে কোনও শহরের প্রশাসনিক সদর দফতর ও ভিআইপি-দের উপরে হামলা চালাতে পারে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বারবার সতর্ক করছেন। তবে তার আগেই জঙ্গি হানার মোকাবিলা ও ভিআইপি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনীর কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়।
কলকাতা পুলিশের চার জন কমান্ডো, কমব্যাট ব্যাটালিয়নের ১২ জন এবং র্যাফ, রিজার্ভ ফোর্সের আরও ৩০-৩৫ জন নবান্নে মোতায়েন থাকে। কিন্তু এক-একটি বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বেতারে যোগাযোগ থাকলেও এক বাহিনীর সঙ্গে অন্যের বেতার যোগাযোগ নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে এটা শুরু করতে বলা হয়েছিল।
সেখানে বলা হয়েছে, প্রায় রোজই কয়েক জন মন্ত্রী, বিধায়কের সঙ্গে তাঁদের দেহরক্ষীরা কালাশনিকভ বা ইনস্যাস রাইফেল নিয়ে নবান্নের বিভিন্ন তলায় যান। কলকাতা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনীর বক্তব্য, এটা বন্ধ করতে হবে। দেহরক্ষীদের জন্য একতলায় একটি নির্দিষ্ট ঘর বরাদ্দ করা হোক। নয় তো কোনও দুষ্কৃতী ভেক ধরে ঢুকে পড়ে বিপদ ঘটাতে পারে।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (সিকিওরিটি) দীপনারায়ণ গোস্বামী অবশ্য বলেন, ‘‘মন্ত্রী-বিধায়কের নিরাপত্তারক্ষীরা তো পুলিশই। তাঁরা তো একে অপরকে চেনেন। সুরক্ষার প্রস্তাবগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, নবান্নে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন কাজে যান। সেটা ভেবেই ভারসাম্য থাকা দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy