E-Paper

অতীতে দুষ্কর্ম, তবু অবাধ যাতায়াত

অভিযোগ, শাসক দলের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকার ফলেই এসএসকেএম এবং আশেপাশের হাসপাতালেও অবাধ যাতায়াত ছিল তার। এমনকি দালাল চক্রের সঙ্গেও ওই যুবক যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৪৩

—প্রতীকী চিত্র।

এটাই প্রথম নয়। এসএসকেএমের শৌচাগারে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার অমিত মল্লিকের বিরুদ্ধে এমন দুষ্কর্মের অভিযোগ আগেও ছিল। বছর তিনেক আগে, করোনার সময়ে কলকাতা পুলিশ হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী ছিল অমিত। এক রোগিণীর এক্স-রে চলার সময়ে জোর করে সেখানে ঢুকে পড়ে অভব্য আচরণ করেছিল ওই যুবক। যে বেসরকারি সংস্থার অধীনে অমিত কাজ করত, তাদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন চিকিৎসকেরা। সেই সময় অমিতের চাকরি চলে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ে ওই যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়েছিল কি না, কিংবা তার বিরুদ্ধে আইনত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না তা স্পষ্ট করেননি পুলিশ কর্তারা। আর জি করের ঘটনার পরে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে যত প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হোক না কেন, আদতে পরিস্থিতি যে কিছুই বদলায়নি, ফের তা প্রমাণ হয়ে গেল বলে মনে করছেন অনেকেই।

অভিযোগ, শাসক দলের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকার ফলেই এসএসকেএম এবং আশেপাশের হাসপাতালেও অবাধ যাতায়াত ছিল তার। এমনকি দালাল চক্রের সঙ্গেও ওই যুবক যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। এসএসকেএমের ভিতরে অনেক গলি, নির্জন জায়গা রয়েছে। কিন্তু ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি (আইওপি) থেকে ওই নাবালিকাকে নিয়ে বেরিয়ে সেই সমস্ত জায়গায় না গিয়ে, ট্রমা কেয়ারের ভিতরে অমিত পৌঁছল কী ভাবে? সূত্রের খবর, দালাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে ট্রমা কেয়ার সহ আরও কিছু বিভাগে যাতায়াত ছিল ওই যুবকের। সেই জন্যই চেনা ট্রমা কেয়ারের ভিতরে সিটি স্ক্যান, এমআরআই ঘর সংলগ্ন শৌচাগার রয়েছে বলে জানত অমিত।

ট্রমা কেয়ারের ভিতরে শৌচাগারের সামনে বছর ১৪-র নাবালিকাকে এক যুবক নিয়ে যাচ্ছে দেখেও কারও কোনও সন্দেহ হল না কেন? তদন্তে স্পষ্ট, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো আকাশি রঙের পোশাক এবং মাথায় টুপি (চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যা পরেন) পরে ছিল অমিত। যে কারণে কেউ তাকে সন্দেহ করেননি। ঘটনার দিন অমিতের ব্যবহৃত ওই পোশাক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। কিন্তু ওই জামা-প্যান্ট ও টুপি কী ভাবে পেল অমিত? সূত্রের খবর, খোলা বাজারেই ওই ধরণের পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। তাহলে যে কেউ কি ওই পোশাক পরে হাসপাতালে যত্রতত্র ঘুরতে পারেন? এই বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব বা কার? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ কোনও তরফেই সদুত্তর মেলেনি।

জানা যাচ্ছে, আইওপি-র বহির্বিভাগ থেকে প্রায় দুশো মিটার দূরে ট্রমা কেয়ার পর্যন্ত নাবালিকাকে নিয়ে যাওয়া, তার পরে শৌচাগারে ঢোকা—পুরো ঘটনায় হাসপাতালের তরফে কারও কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। পুলিশের একটি অংশের দাবি, অমিত জেরায় দাবি করেছে, করোনা-কালে চাকরি চলে যাওয়ার পর সে কোথাও কাজ করছিল না। মাস কয়েক আগে একটি বেসরকারি সংস্থার অধীনে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তা রক্ষীর চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও মাঝেমধ্যেই এসএসকেএম হাসপাতালে আসত বলে জেরায় স্বীকার করেছে অমিত।

তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং পকসো আইনের ধারার সঙ্গে বিএনএসের ৩১৯ (পরিচয় ভাঁড়ানো) নম্বর ধারা যুক্ত করেছে পুলিশ। কারণ হিসেবে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, বুধবার মা এবং দাদুর সঙ্গে চিকিৎসার জন্য সাইকিয়াট্রি বিভাগে এসেছিল ওই নাবালিকা। দুপুর ১.৫৫ নাগাদ মেয়েকে দাদুর কাছে রেখে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন মা। সেখানেই চিকিৎসকদের মতো পোশাক পরে আসে অমিত। নিজেকে শিশুরোগ চিকিৎসক বলে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করার নাম করে দাদুর কাছ থেকে নাবালিকাকে নিয়ে যায় অভিযুক্ত। ট্রমা কেয়ারের শৌচাগারে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

‘আইওপি’ থেকে ট্রমা কেয়ার ছাড়াও অমিত ওই দিন আর কোথায় কোথায় গিয়েছিল, সেটিও হাসপাতালের অন্য সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখছেন তদন্তকারীরা। ট্রমা কেয়ারে কেন অমিতকে ঢুকতে কেউ বাধা দিলেন না, সেই বিষয়টি স্পষ্ট করতে সেখানে ওই দিন ডিউটিতে থাকা নিরাপত্তা রক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই দিন এক আত্মীয়ের চিকিৎসা করাতে সে হাসপাতালে এসেছিল। কোথাও যেন কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য ওই ধরণের পোশাক পরেছিল। তবে পুলিশের অনুমান, ধৃত যুবক হাসপাতালের দালাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে ওই ধরনের পোশাক ব্যবহার করত, যাতে কেউ সন্দেহ না করে এবং সহজে ধরা না পড়ে। পাশাপাশি ওই পোশাকে খুব সহজেই রোগীদের বিশ্বাস অর্জন করাও যায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSKM Hospital police investigation Rape case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy