ঘরে ফেরা। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে
খানিকটা জোর করেই তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল শববাহী গাড়ি দু’টির সামনে। সাদা চাদরে আপাদমস্তক মোড়া দু’টি দেহ। একটি বাবার, অন্যটি মায়ের। কোনও মতে একবার সেদিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল নবম শ্রেণির ছাত্র অভীক চৌধুরী।
কটকে গাড়ি দুর্ঘটনার মৃত বাগুইআটির সাহাপাড়ার চৌধুরী পরিবারের একমাত্র ছেলে অভীক ওরফে সোনু শুক্রবার বিকেলে জানতে পেরেছে দুর্ঘটনায় বাবা অমিত চৌধুরী ও মা শুভ্রা চৌধুরীর মৃত্যুসংবাদ। বৃহস্পতিবার জাজপুরে ওই দুর্ঘটনায় অন্য গাড়িটিতে থাকায় বেঁচে যায় অভীক। সাহাপাড়ার আর এক বাসিন্দা মৃত সমীর দত্তর ছেলে রূপও ছিল ওই গাড়িতে। দুর্ঘটনার পরে প্রতিবেশীদের কয়েক জন গিয়ে শুক্রবার কটক থেকে ট্রেনে অভীক আর রূপকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।
শুক্রবার সাতসকালেই মৃতদেহগুলির ময়না-তদন্ত হয়ে গিয়েছিল কটকের সরকারি হাসপাতালে। দুপুরের মধ্যে ওড়িশা সরকার খড়গপুরে দেহগুলি তুলে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে। জঙ্গলমহল থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুল্যান্সে করে বিকেলে সাহাপাড়ায় নিয়ে আসা হয় ওই ছয় পর্যটকের মৃতদেহ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলার প্রলয় সাহা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন সকাল থেকে সকলের কাছে শুধু বাবা-মায়ের খবর জানতে চেয়েছে অভীক। সন্ধ্যায় বাবা-মা দু’জনের মৃত্যু সংবাদ আসে তার কাছে।
সারা দিন ধরে মৃতদেহগুলি আনার অপেক্ষা করেছেন ওই পাড়ার বাসিন্দারাও। দুর্ঘটনার ভয়াবহতার পাশাপাশি তাঁদের বেশির ভাগই আলোচনা করছিলেন অভীকের ভবিষ্যৎ নিয়ে। অভীকের বাবা অমিতবাবু ভারত পেট্রোলিয়ামের উচ্চপদস্থ কর্মী ছিলেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মৃত্যুর পরে তাঁদের একমাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ কী হবে তা ভেবেই হা-হুতাশ করছেন পাড়া-প্রতিবেশী সকলে।
সাহাপাড়ার বাসিন্দারা জানালেন, গত বছরও পুরী বেড়াতে গিয়েছিল পাড়ার ওই দলটি। সে বারও গাড়ি করে ফেরার পথে একটি বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে কোনও মতে বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁরা। এ বার আর শেষরক্ষা হল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy