Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গদির ‘সেতু’ গড়ে আগুন থেকে রক্ষা

ফেলে দেওয়া জিনিস বহু ক্ষেত্রেই কাজে লেগে যায়। কিন্তু তেমন কিছু যে মানুষের প্রাণও বাঁচাতে পারে, তার সাক্ষী রইল বুধবার ভোরে, ট্র্যাঙ্গুলার পার্কে চারতলা একটি বাড়ির অগ্নিকাণ্ড। আটকে পড়া মানুষদের কাছে সেখানে ত্রাতা হয়ে উঠল একটি পরিত্যক্ত সোফার ছেঁড়া গদি।

এই ছাদ থেকে পালিয়েই রক্ষা। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

এই ছাদ থেকে পালিয়েই রক্ষা। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

ফেলে দেওয়া জিনিস বহু ক্ষেত্রেই কাজে লেগে যায়। কিন্তু তেমন কিছু যে মানুষের প্রাণও বাঁচাতে পারে, তার সাক্ষী রইল বুধবার ভোরে, ট্র্যাঙ্গুলার পার্কে চারতলা একটি বাড়ির অগ্নিকাণ্ড। আটকে পড়া মানুষদের কাছে সেখানে ত্রাতা হয়ে উঠল একটি পরিত্যক্ত সোফার ছেঁড়া গদি।

আগুন লেগেছিল যে বাড়িতে, তার ছাদেই পড়ে ছিল ওই গদি। ওই বাড়ির লোকজন তখন ছাদে উঠে চিৎকার করছেন। দোতলায় লাগা আগুন ততক্ষণে ছুঁয়েছে তিনতলা। ছাদে উঠে যাওয়া মানুষদের ভয়, আগুন গ্রাস করতে পারে তাঁদেরও।

চিৎকার শুনে নিজেদের বাড়ির ছাদে উঠে আসেন প্রায় লাগোয়া পাশের বাড়ির বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁরা কী ভাবে উদ্ধার করবেন বিপন্ন প্রতিবেশীদের? হঠাৎই এক জনের চোখে পড়ে, আগুন লেগে যাওয়া বাড়িটির ছাদে পড়ে আছে একটি ছেঁড়া সোফার গদি। সেটিই দুই বাড়ির ছাদের পাঁচিলের উপরে আড়াআড়ি ভাবে বিছিয়ে একটি প্রান্ত এ বাড়িতে এক জন, অন্য প্রান্ত ও বাড়িতে আর এক জন শক্ত করে ধরেন। দু’টি বাড়িই চারতলা ও সমান উচ্চতার। ফলে, ওই ভাবে গদিটি পাততে কোনও অসুবিধা হয়নি বলেই বাসিন্দাদের বক্তব্য।

শেষমেশ ওই গদির ‘সেতুর’ উপর দিয়েই সাত বাসিন্দা এক-এক করে গুটি গুটি হেঁটে তাঁদের বাড়ির ছাদ থেকে পাশের নিরাপদ বাড়ির ছাদে পৌঁছন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন এক মহিলাও, যিনি দু’মাসের শিশুকে বুকে করে ওই ভাবে যান।

যে বাড়িতে আগুন লেগেছিল, সেটির ঠিকানা ১৬৬এ, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ। বাড়ির মালিক গোপাল কিসওয়ানি জানান, আগুন লাগার সময়ে সবাই ঘুমোচ্ছিলেন। চিৎকার শুনে কয়েক জনের ঘুম ভাঙে। বিপদ বুঝে সকলে ছাদে যান।

গোপালবাবুর কথায়, ‘‘পাশের বাড়ির লোকজন না থাকলে কী যে হতো! আমাদের ছাদে ওই গদি না থাকলে হয়তো কেউই বাঁচতাম না।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম, গদির মাঝখানে যেন কেউ ভর না দেয়। একটু পাশ দিয়ে হাঁটে। না হলে গদি ঝুলে পড়তে পারত।’’ সাত জন গদির উপর দিয়ে গেলেও গোপালবাবু এক লাফে পৌঁছে যান।

আগুনের কবলে পড়া বাড়ির বাসিন্দারা এই কায়দায় রক্ষা পাওয়ার কিছু আগেই অবশ্য দমকল পৌঁছে যায়। তবে তাদের সাহায্য এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়নি। ছ’টি ইঞ্জিন ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকলের অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুন।

দমকল সূত্রে খবর, এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওই বহুতলের দোতলার একটি ঘরে প্রথমে আগুন লাগে। তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে তিনতলায়। চারতলা ওই বাড়ির প্রথম তিনটি তল একটি বেসরকারি অফিসকে ভাড়া দেওয়া। চারতলায় মালিক সপরিবার থাকেন।

মঙ্গলবার রাতে দোতলার একটি ঘরে কাজ করছিলেন কয়েক জন কর্মী। আচমকা ধোঁয়া দেখে তাঁরা চিৎকার শুরু করেন। তিনতলার একটি ঘরে তখন ছিলেন ওই অফিসেরই কর্মী তপন সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে উঠে দেখি, দোতলার ঘর থেকে আগুন বেরোচ্ছে। আমি বারান্দায় এসে সাহায্যের জন্য চেঁচাই। তার পরে দেওয়াল বেয়ে নীচে নেমে পড়ি।’’

দমকল এসে মই দিয়ে ছাদে উঠে দরজা ভেঙে ঢোকে। দমকলের দাবি, বাড়িটির অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র কাজ করেনি। এ ব্যাপারে মালিক গোপালবাবু বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি বছর আটেক আগে পুরসভা ও দমকলের সব নিয়ম মেনেই তৈরি হয়েছে। অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র, বিদ্যুতের লাইন— কোথাও কোনও গোলমাল থাকার কথা নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

highrise triangular park fire sofa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE