Advertisement
E-Paper

Sohor ki Bolche: কর্তব্য পালনের পথ সুগম করে কি পারস্পরিক বন্ধুত্বই

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ জানান, এক বয়স্ক চিকিৎসক তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসক সম্মেলনে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২২ ০৭:৪০
কথা: আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত ‘শহর কী বলছে’ শীর্ষক আলোচনাসভায় (বাঁ দিক থেকে) শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,

কথা: আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত ‘শহর কী বলছে’ শীর্ষক আলোচনাসভায় (বাঁ দিক থেকে) শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, তিলোত্তমা মজুমদার ও শ্রুতি রায় মুহুরি। নিজস্ব চিত্র

ছেলেরা হঠাৎ ঠিক করলেন, বাবা-মাকে আর একসঙ্গে রাখা যাবে না। কারণ, মায়ের ক্যানসার ধরা পড়েছে। তার আগে পর্যন্ত ছেলেদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে থাকতেন বাবা-মা। ছেলেদের যুক্তি, দু’জনের দায়িত্ব নেওয়া এই মুহূর্তে কষ্টকর। দিন কাটতে থাকে, কিন্তু বয়স্ক দম্পতির মন ভাল থাকে না। হাজার অনুরোধ সত্ত্বেও স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না বৃদ্ধকে। শেষ পর্যন্ত পরিচিত আইনজীবীকে ধরে মামলা করলেন সোদপুরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ। স্ত্রীর অসুখের কথা জানিয়ে আদালতে আর্জি জানালেন, শেষের ক’টা দিন স্ত্রীর কাছেই থাকতে দেওয়া হোক তাঁকে।

আদালত বৃদ্ধের পক্ষেই রায় দিল। শেষের ক’টা দিন ওই বয়স্ক দম্পতি ছিলেন ঘর ভাড়া নিয়ে। কী থেকে বৃদ্ধের এই লড়াই? কর্তব্য, না কি পারস্পরিক বন্ধুত্ব?

‘বিয়ের কর্তব্য শুরু হলেই পারস্পরিক বন্ধুত্ব হারিয়ে যায়?’— বুধবার আনন্দবাজার পত্রিকা আয়োজিত ‘শহর কী বলছে’ শীর্ষক আলোচনায় এই প্রশ্নই রাখা হয়েছিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সামনে। ডিরোজ়িয়ো হলের ওই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন লেখক তিলোত্তমা মজুমদার, আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এবং চলচ্চিত্র পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন শ্রুতি রায় মুহুরি। সেখানেই উঠে আসে সোদপুরের ওই দম্পতির ‘কাহিনি’। নানা অভিজ্ঞতার দাঁড়িপাল্লায় আলোচনা চললেও একটা বিষয়ে সকলেই একমত, পারস্পরিক বন্ধুত্বই আরও ভাল করে কর্তব্য পালনের পথ করে দেয়। দুটোর মধ্যে সামঞ্জস্য রাখাই আদর্শ বৈবাহিক সম্পর্ক বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।

আলোচনার শুরুতেই আজ, শুক্রবার মুক্তি পাওয়া নিজের সিনেমা ‘বেলাশুরু’র উদাহরণ টেনে শিবপ্রসাদ বলেন, ‘‘আসলে এমন একটা সম্পর্ক দরকার, যেটা শেষ অবধি হাতটা ধরে রাখে।’’ করোনার সময়ের উদাহরণ টেনে তিনি দাবি করেন, ‘‘সন্তানেরা বিদেশে রয়েছেন, এমন বহু বয়স্ক দম্পতিকেই একে অপরের ভরসায় কঠিন সময়ে লড়াই চালাতে হয়েছে। এমনও দেখেছি, করোনায় আক্রান্ত স্ত্রী শুধুমাত্র হাতটা ছাড়তে চাইছেন না বলে তাঁর সঙ্গে করোনা জ়োনে ঢুকে পড়ার মনস্থির করে নিয়েছেন বৃদ্ধ।’’ সুজয়প্রসাদ বলেন, ‘‘পারস্পরিক বন্ধুত্বই আরও ভাল করে কর্তব্য পালনের ভিত গড়ে দেয়।’’

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ জানান, এক বয়স্ক চিকিৎসক তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসক সম্মেলনে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। তার মধ্যেই তাঁদের পুত্রবধূ ৪৯৮এ ধারায় (বধূ নির্যাতন) মামলা করেন। বিমানবন্দরে নামার পরেই ওই প্রবীণ দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। সংশোধনাগারের নিয়ম অনুযায়ী বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে পাঠানো হয় পুরুষ ও মহিলাদের সেলে। দেখা যায়, বৃদ্ধ কিছুতেই বসছেন না। খাওয়াদাওয়াও করতে চাইছেন না। সংশোধনাগারের ওয়েলফেয়ার অফিসার জানতে চাওয়ায় বৃদ্ধ বলেছিলেন, ‘‘আমার স্ত্রীর হাঁটু ও কোমরে ব্যথা। আমি জানি ও মাটিতে বসতে পারবে না। আপনি আমায় নিশ্চিত করে জানান, সে ঠিক আছে, তা হলেই আমি বসব!’’ প্রেক্ষাগৃহে হাততালির ঝড় ওঠে যখন জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘সেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষার শেষ হয়েছিল, স্ত্রী বসতে পেরেছেন, সে বিষয়ে বৃদ্ধ নিশ্চিত হওয়ার পরে।’’

সমর্থনের হাততালি ওঠে যখন তিলোত্তমা বলেন, ‘‘আমি চাই মন মুক্ত হোক। যদি দাম্পত্য সুন্দর হয়, ছোটখাটো কারণে তা ভেঙে না ফেলে তাকে জড়িয়ে জীবনকে সুন্দর করাই উচিত। আর তা যদি না হয়, তা হলে নিজেকে ক্ষতবিক্ষত না করে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার মতো খোলা মন ও সামাজিক পরিস্থিতি থাক।’’

Presidency University shibaprasad mukhopadhyay conference
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy