Advertisement
E-Paper

সাবেক পুজোর নানা আচার অনুষ্ঠান

হাতে মাত্র ক’টা দিন। ভাদ্রের অলস দুপুরেও তাই ব্যস্ততার শেষ নেই শোভাবাজার রাজবাড়ির গৃহিণী আরতি দেবের। এই সাতাশিতেও পুজোর কাজে তাঁর উৎসাহের কমতি নেই। লবঙ্গ, জায়ফল ইত্যাদি গুঁড়িয়ে ‘মা দুগ্গা’-র ‘আচমনীয়’ ঠিকঠাক তৈরি হল কি না, পলতে পাকানোই বা কত দূর, কিংবা প্রতিমার রঙের কাজ কতটা এগলো এ সবের তদারকিতেই ব্যস্ত তিনি।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৩
পুজোর অনুষঙ্গ। নরসিংহচন্দ্র দাঁয়ের বাড়ি।  ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

পুজোর অনুষঙ্গ। নরসিংহচন্দ্র দাঁয়ের বাড়ি। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

হাতে মাত্র ক’টা দিন। ভাদ্রের অলস দুপুরেও তাই ব্যস্ততার শেষ নেই শোভাবাজার রাজবাড়ির গৃহিণী আরতি দেবের। এই সাতাশিতেও পুজোর কাজে তাঁর উৎসাহের কমতি নেই। লবঙ্গ, জায়ফল ইত্যাদি গুঁড়িয়ে ‘মা দুগ্গা’-র ‘আচমনীয়’ ঠিকঠাক তৈরি হল কি না, পলতে পাকানোই বা কত দূর, কিংবা প্রতিমার রঙের কাজ কতটা এগলো এ সবের তদারকিতেই ব্যস্ত তিনি। নানা সাবেক আচার-অনুষ্ঠান তাঁদের পুজোয়। ঐতিহ্যের সঙ্গে যার অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক।

শোভাবাজার রাজপরিবারের বড়-তরফের অন্যতম ট্রাস্টি আরতি দেবী জানালেন, পুজোয় আজও পুরোহিতের বাড়ি থেকে ষষ্ঠীর দিন ঢাক ঢোল বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে রাজবাড়িতে নিয়ে আসা হয় পুজোর ‘শ্রী’। হারিয়ে যাওয়া বাবু কালচার সামান্য হলেও টিকে আছে এখানে। পুজোর ক’দিন বাড়ির বাইরে বসে আতরওয়ালা। সপ্তমী থেকে হোমকুণ্ড জ্বলে নবমী পর্যন্ত। পুজোয় মোট ন’টি বলি হয়। নবমীতে ছাঁচি কুমড়ো, আখের পাশাপাশি বলি হয় এক জোড়া মাগুর মাছও। শোনা যায়, এক বার একটি বলির পাঁঠা রাজা রাধাকান্ত দেবের পায়ের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পণ্ডিতরা বার বার বলির পাঁঠা ফিরিয়ে দিতে বললেও আশ্রিত সেই পাঁঠাটিকে ফিরিয়ে দেননি রাধাকান্ত। তাই বিকল্প হিসেবে শুরু হয় মাগুর মাছ বলি।

শুধু শোভাবাজারই নয়, অনেক বাড়িতেই এমন অনেক ছোটখাটো আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে। যা পুজোগুলিকে স্বতন্ত্র করে তোলে। যেমন, দর্জিপাড়ার রাজকৃষ্ণ মিত্রের বাড়িতে সরস্বতী পুজোর পর থেকে আচার তৈরি আর বড়ি দেওয়ার পর্ব শুরু হয়। তৈরি হয় তেঁতুল, আম ও কুলের আচার। থাকে ভাজা বড়ি, ঝোলের বড়ি, পালংশাকের বড়ি ইত্যাদি নানা রকমের বড়ি। এই পরিবারের মেয়ে অনসূয়া বিশ্বাস বলছিলেন, “চাল ও ফলের নৈবেদ্যর সঙ্গে থাকে খিচুড়ির নৈবেদ্য। তাতে থাকে চাল ও মুগের ডাল। পুজোর আগেই মুগের ডালে ঘি মাখিয়ে ভাল করে রোদে দেওয়া হয়। একটি বড় থালায় চূড়া করে চালের উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় মুগের ডাল। এর চার পাশে থাকে নানা রকম কাঁচা আনাজ ও পাঁপড়। দেওয়া হয় বিভিন্ন রকমের কাঁচা মশলাও। থাকে মিছরি, মাখনের নৈবেদ্য, পানের খিলি। পান পাতার শিরা দিয়ে তৈরি খিলি দেখতে অনেকটা ঝাড়বাতির মতো বলে একে বলে ঝাড়খিলি। ফুলের পাপড়ির আকারে সাজিয়ে দেওয়া হয় নানা রকমের পান মশলা। বিশেষ উল্লেখযোগ্য সন্ধিপুজোয় ১০৮টি পদ্মের পরিবর্তে নিবেদন করা হয় ১০৮টি অপরাজিতা ফুল। পুজোর অর্ঘ্য বাছারও বিশেষ, নিয়ম রয়েছে এ বাড়িতে। ধানের খোসা ছাড়িয়ে বেছে নেওয়া হয়, অক্ষত চালের দানা। সেই অক্ষত চালই ব্যবহার হয় দেবীর অর্ঘ্যে।

মুক্তারাম বাবুস্ট্রিটের রামচাঁদ শীলের বাড়ির প্রতিমাকে আজও পরানো হয় বেনারসি শাড়ি, হাতে থাকে রুপোর অস্ত্র। বৈষ্ণব পরিবার বলে বলিপ্রথা নেই। সন্ধিপুজোয় বলিদানের মুহূর্তে তাই নিরবতা পালন করা হয়। এই পরিবারের বিমানবিহারী শীল বলছিলেন, “অষ্টমী পুজোর পরে গাভীকে স্নান করিয়ে এনে পুজো করা হয়। ষষ্ঠীর দিন বাড়ির মেয়ে-বউরা চুল ধুতে ব্যবহার করেন সুগন্ধী ‘মাথাঘসা’। আর পুজোর দিনগুলিতে তাঁরা চুল বাঁধেন লাল ঘুনসির ফিতে দিয়ে। পরেন নথ ও পায়ের মল”।

পটলডাঙার বসুমল্লিক পরিবারের পুজোয় মহাস্নানে আজও ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন তীর্থের জল। বাড়ির নবপত্রিকা গঙ্গার ঘাটে স্নানে যায় না। স্নানপর্ব পুজোর দালানেই সারা হয় জানালেন এই পরিবারের অশোকেন্দ্র বসুমল্লিক।

অন্য দিকে, জোড়াসাঁকোর নরসিংহ চন্দ্র দাঁ-র বাড়িতে পুরনো প্রথা মেনে আজও বন্দুক ও কামান দাগা হয়। এই পরিবারের সন্দীপকুমার দাঁ বলছিলেন মাত্র ১৭ ইঞ্চি লম্বা এই কামানটি তৈরি করেছিল ‘উইনচেস্টার রিপিটিং আর্মস’ কোম্পানি। পারিবারিক বন্দুকের ব্যবসা বলেই আজও নবপত্রিকা স্নান এবং বিসর্জনের সময় পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রতিমার সঙ্গে থাকেন চার জন সশস্ত্র প্রহরী। দশমীর দিন বাড়ি থেকে প্রতিমা বেরনোর আগে যখন সাতপাক ঘোরানো হয় তখন বন্দুক দাগা হয়।

bivutisundor bhattacharjya ancient pujo akeshe batase pujo kolkata news online kolkata news durga puja festival old puja some ceremony
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy