Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পড়ার অভ্যাস ফেরাতে স্কুলেই গল্প বলার ক্লাস

গল্প ও কল্পনাশক্তি যেন জীবন থেকে হারিয়ে না যায়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই শহরের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে জোরকদমে চলছে ‘গল্প বলার আসর’। তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে বিশেষ ক্লাসও।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৮
Share: Save:

বাঁধাধরা পাঠ্যক্রম থেকে বেশ খানিকটা সরে এসে এ এক অন্য জগৎ। গম্ভীর বাতাবরণ বদলে ফেলে ক্লাসরুম তখন যেন পরিণত হয়েছে মজার আসরে। সুকুমার রায়ের ‘অবাক জলপান’ শুনে মাঝেমধ্যেই হাসির রোল উঠছে ক্লাস জুড়ে। কারণ, ওই ক্লাসরুমে গল্প বলার আসর জমেছে। তবে গল্প শোনাচ্ছেন কোনও গল্পদাদু নন, সহপাঠীরাই।

গল্প ও কল্পনাশক্তি যেন জীবন থেকে হারিয়ে না যায়, সে দিকে লক্ষ্য রেখেই শহরের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে জোরকদমে চলছে ‘গল্প বলার আসর’। তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে বিশেষ ক্লাসও। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ারা দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন গল্প পড়ে, মুখস্থ করে নাটকীয় ভঙ্গিতে বর্ণনা করছে। আর গোটা পরিবেশের মজা লুটেপুটে নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

দক্ষিণ কলকাতার রামমোহন মিশন হাইস্কুলে নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এই বিশেষ ‘অ্যাক্টিভিটি’ ক্লাস। স্কুলের প্রিন্সিপাল সুজয় বিশ্বাস জানান, গল্প শোনা ও বলার সংস্কৃতিকে হারিয়ে যেতে দিলে চলবে না। এর জন্য অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষদেরই উদ্যোগী হতে হবে। তাই নভেম্বর মাস থেকে গল্পের আসর শুরু হয়েছে ওই স্কুলে। প্রতিটি পড়ুয়াকে বাংলা বা ইংরেজি যে কোনও গল্প পড়ে আসতে বলা হয়। ক্লাসে এসে সেগুলি নাটকীয় ভঙ্গিতে বর্ণনা করে তারা। কোথাও খামতি থাকলে সেগুলি শুধরে দিচ্ছেন শিক্ষিকারা। প্রিন্সিপাল বলেন, ‘‘এর ফলে বই পড়ার অভ্যাস বাড়বে। যেটা খুব প্রয়োজন।’’

দাদু বা ঠাকুরমাকে মধ্যমণি করে অনেকে মিলে গল্প শোনার দিন প্রায় শেষ। এই গল্পের আসর থেকেই জীবনের বহু অভিজ্ঞতা আগাম সঞ্চয় করে নিতে পারত খুদেরা। শিক্ষা মহলের মত, একই ভাবে পাঠ্যপুস্তক ছাড়া গল্পের বই পড়ার অভ্যাসও কমছে পড়ুয়াদের। এ বার এই প্রবণতাতেই রাশ টানতে চাইছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কুল। শ্রী শিক্ষায়তনের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য জানান, সংবাদপত্র পড়া এবং গল্প বলার আসর এই স্কুলেও চালু রয়েছে। সপ্তাহে বা মাসে একাধিক বার বাইরে থেকে বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা এসেও পড়ুয়াদের গল্প শুনিয়ে যান। ক্লাসের পড়াশোনার বাইরে গল্প পড়া ও শোনার উপরে বা়ড়তি জোর দেওয়া হয়।

স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতেও গল্প বলার অভ্যাস তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকার পোষিত গার্ডেনরিচের নুটবিহারী দাস গার্লস হাইস্কুলেও ক্যাম্প করে গল্প বলার আসরের আয়োজন করা হয়। কয়েক মাস আগে স্কুলশিক্ষা দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি জেলায় জেলায় পরিদর্শনে গিয়েছিল। তখনই পড়ুয়াদের গল্প বলা, পড়া ও শোনার অভ্যাস তৈরির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু জেলায় সেটা শুরু হলেও ক্লাসে তার অন্তর্ভুক্তি ঘটানোর নজির খুব কম বলেই দাবি স্কুলশিক্ষা দফতরের। সর্ব ক্ষেত্রে সেই উদ্যোগও খুব একটা নেই বলে মানছেন দফতরের কর্তারা। যদিও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল।

বিক্ষিপ্ত ভাবে শুরু হলেও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। আসলে আমাদের মধ্যে গল্পের খিদে এবং কৌতূহল এখনও রয়েছে। সেটা যদি ভাল ভাবে উপস্থাপনা করা যায়, তা হলে সেই কৌতূহল মিটবে। আর গল্প বলাটাও একটা শিল্প। সেটাও পড়ুয়ারা রপ্ত করতে পারলে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ভাল হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Special Activity Interest Study
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE