ভারতীয় জাদুঘর। —ফাইল চিত্র।
কর্নাটকের মাস্কি গ্রামে সোনা খুঁজতে গিয়েছিলেন বিলেতের ইঞ্জিনিয়ার। সে সময়েই চোখে প়ড়ে দেওয়ালে কী যেন হিজিবিজি লেখা! নিজে পুরালিপি প়ড়তে পারতেন না। কিন্তু এই দেওয়াল লিখনের কথা জানিয়েছিলেন তৎকালীন পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণকে। তাদের বিশেষজ্ঞরা
সেই লেখা পড়ে বুঝতে পারেন, পুরালেখটি অশোক নামে এক সম্রাটের এবং এত দিন ‘প্রিয়দর্শী’ নামে যে সম্রাটের শিলালিপি পাওয়া গিয়েছিল, ইনিই তিনি!
এ ভাবেই ১৯১৫ সালে অতীতের গর্ভ থেকে উঠে এসেছিলেন পাটলিপুত্রের সম্রাট অশোক। আফগানিস্তান থেকে কর্নাটক ছিল যার সাম্রাজ্য। সম্রাটকে এই ফিরে পাওয়ার গল্প ধরেই তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন এক দল বাঙালি। যার নেতৃত্বে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপিকা সুস্মিতা বসু মজুমদার। শুধু মাস্কি নয়, এখনও পর্যন্ত কর্নাটকের ৯টি জায়গায় অশোকের শিলালিপি মিলেছে। সে সবই উঠে এসেছে ক্যামেরায়। কাল, বুধবার ভারতীয় জাদুঘরে সেই তথ্যচিত্রের আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী।
জাদুঘরের এডুকেশন অফিসার সায়ন ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘১০২ বছর আগে সম্রাট অশোককে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। জাদুঘরের বয়স হল ২০৪ বছর। কাকতালীয় হলেও কোথাও যেন একটা সম্পর্ক রয়ে গিয়েছে।’’ বস্তুত, বাংলার সঙ্গে অশোকের ইতিহাসের যোগসূত্র দীর্ঘ দিনের। এই রাজ্যে বসেই ব্রাহ্মী হরফ প্রথম পড়তে পেরেছিলেন ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ জেমস প্রিন্সেপ। নির্মাতারা জানাচ্ছেন, এই তথ্যচিত্রের প্রকল্পের উৎসাহেও জড়িয়ে রয়েছেন এক প্রবাসী বাঙালি। তিনি কর্নাটকের আমলা অম্লানআদিত্য বিশ্বাস।
সুস্মিতাদেবী বলছিলেন, মাস্কি নিয়ে শুধু নয়, কর্নাটকে অশোকের শিলালিপি খুঁজে পাওয়ার অনেক গল্প। ভীমা নদীর পাড়ে এক মন্দিরে কয়েকশো বছরের পুরনো পাথরের বিগ্রহ ভেঙে গিয়েছিল। নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেদী-সহ পুরনো বিগ্রহটি বাইরে সরিয়ে আনা হয়। তখনই ইতিহাসবিদদের নজরে প়়ড়ে বেদীতে ব্রাহ্মী হরফে লেখা রয়েছে অশোকের বার্তা। শুধু পর্যটন বা ছবি নয়, কেন অশোক কর্নাটকে এত শিলালিপি স্থাপন করলেন, কেনই বা দাক্ষিণাত্যে ব্যবহারহীন পালি ভাষায় শিলালিপি লেখালেন তার ব্যাখ্যাও তথ্যচিত্রে দিয়েছেন রণবীর চক্রবর্তী, ভৈরবীপ্রসাদ সাহু, কৃষ্ণমোহন শ্রীমালির মতো ইতিহাসবিদেরা। তাঁদের মতে, কর্নাটকে সোনা এবং লোহার খনি ছিল। মৌর্য সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সেই খনির উপরে নিজের অধিকার কায়েম রাখতে চেয়েছিলেন অশোক। বহু ক্ষেত্রেই শিলালিপিগুলি খনি লাগোয়া এলাকাতেই মিলেছে বলে সুস্মিতারা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy