রহস্য: বাগানে পড়ে রয়েছে টুপি। নিজস্ব চিত্র
সম্ভ্রান্ত বাঙালি পরিবারের মানুষটির ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ হয়ে উঠেছিল
তাঁর টুপি!
খালি মাথায় তাঁকে রাস্তায় কখনও দেখেছেন বলে মনে করতে পারেন না একই পাড়ায় দীর্ঘদিনের প্রতিবেশীরা। তাঁর নিজের ছেলেও বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, পাড়ায় ‘হ্যাট দাদু’ নামেই পরিচিত ছিলেন মলয় মুখোপাধ্যায়। আর তাঁর এই টুপিতেই একটা খটকা থেকে যাচ্ছে গোয়েন্দাদের।
কারণ, নিউ আলিপুরে নিজের বাড়িতে যখন মলয়বাবুর মৃতদেহ পাওয়া যায়, তখন তাঁর ব্যবহৃত তিন-তিনটি টুপি বাগানে ছড়ানো-ছেটানো অবস্থায় মিলেছিল। কোনও লোক একসঙ্গে তিনটি টুপি পরতে যাবেন না। তদন্তকারীদের প্রাথমিক ভাবে অনুমান, আততায়ীই টুপিগুলি ছুড়ে ফেলেছে। কিন্তু এত জিনিস থাকতে হঠাৎ টুপির উপরে কেন আক্রোশ এসে পড়বে আততায়ীর? তা হলে কি গোটা ঘটনার সঙ্গে টুপির কোনও সম্পর্ক রয়েছে?
মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের ব্যাখ্যায়, ‘‘ক্রিমিন্যাল সাইকোলজি বিষয়টা একটু আলাদা। অপরাধীদের মনের ভাবনাচিন্তাগুলো খুব জটিল। এমন হতে পারে যে, ভদ্রলোক জীবিত থাকাকালীনই তাঁকে দেখিয়ে টুপিগুলি ছুড়ে ফেলা হয়েছে তাঁকে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার জন্য। কারণ, টুপিগুলি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় জিনিস ছিল।’’ অন্য একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালও। তিনি বলেন, ‘‘টুপিগুলি মলয়বাবুর ব্যক্তিত্ব ও পরিচিতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে ছিল। টুপি ছাড়া তাঁকে ভাবা যেত না। হয়তো তাঁর উপরে ব্যক্তিগত ভাবে খুনির এতটাই রাগ আর ঘৃণা ছিল যে, তাঁকে খুন করার পরেও তাঁর ‘আইডেন্টিটি’ হিসেবে ওই টুপিগুলিকেও সে নষ্ট করতে চেয়েছিল।’’ দু’রকম ব্যাখ্যাতেই ‘প্রতিহিংসা’র বিষয়টি এসে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মনোবিদেরা। এবং সেখান থেকে আততায়ী মলয়বাবুর পূর্বপরিচিত হওয়ারও একটা সম্ভাবনা থাকছে। গোয়েন্দারা এই দিকটিও খতিয়ে দেখছেন।
তবে, বৃহস্পতিবার মলয়বাবুর ছেলে শুভাশিস মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন, ‘‘আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। আমাদের মনে হচ্ছে, ডাকাতি করতে এসে কেউ বা কারা পূর্ব-পরিকল্পনা ছাড়াই বাবাকে খুন করে ফেলেছে।’’ মিশুকে, হাসিখুশি, আড্ডাবাজ মানুষটি এই ভাবে খুন হওয়ায় হতচকিত পাড়ার লোকও। ঠিক উল্টো দিকের ফুটপাথেই গত প্রায় সাতাশ বছর ধরে একটি হোমিওপ্যাথি ডিসপেন্সরি চলছে। সেখানকার কর্মীরা জানিয়েছেন, ছোটখাটো অসুখবিসুখে ওষুধ নিতে আসতেন মলয়বাবু। অন্য সময়েও এসে গল্প করতেন, পরিবারের সকলের খবর নিতেন। গত শনিবারও গল্প করে গিয়েছিলেন। তাঁর বাড়িতে কখনও কোনও ঝামেলা বা অশান্তি হতেও তাঁরা দেখেননি।
একই কথা উল্টো দিকের ফুটপাথের প্রায় ৬০ বছরের পুরনো মুড়ির দোকানের মালিক অজয় গুপ্তর। তাঁর কথায়, ‘‘খুব ভাল লোক ছিলেন। সব সময় টুপি পরতেন। আমার দোকান থেকে নিয়মিত খই-চিঁড়ে কিনতেন। কিছু দিন আগে ওঁর মা মারা গিয়েছিলেন। আমার বাড়ি ইলাহাবাদে। ইলাহাবাদ নিয়ে হিন্দিতে ছড়া বেঁধে শোনাতেন। এমন লোক খুন হয়ে গেল, ভাবতেই পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy