একটি চিনেবাদামের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেরোতে হল ২৫০ কিলোমিটার পথ। শ্বাসনালিতে আটকে থাকা ওই বাদামের জেরে মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিল এক বছর তিন মাসের শিশুটি। অবশেষে মুর্শিদাবাদের বাগডাঙার বাসিন্দা সেই শিশুর শ্বাসনালি থেকে বাদাম বার করল এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি’। বর্তমানে শিশুটিকে হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিকু) রাখা হয়েছে। দিন কয়েক পর্যবেক্ষণ করে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যখন আশিক সর্দার নামের ওই শিশুকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তত ক্ষণে নীল হয়ে গিয়েছিল তার ছোট্ট শরীর। দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। এক্স-রে করে চিনেবাদামের অবস্থান বুঝে নিতে যেটুকু সময় লেগেছিল, ততটুকুই অপেক্ষা করেছিলেন তাঁরা। ব্রঙ্কোস্কোপি করে ফরসেপের সাহায্যে শিশুর শ্বাসনালির ডান ও বাঁ ব্রঙ্কাস থেকে বার করে আনা হয়েছিল সেটি। মিনিট পঁচিশের ওই অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন প্রফেসর-চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত। চিকিৎসক দলে ছিলেন সায়ন হাজরা ও দেবাশিস ঘোষ। অরুণাভবাবুর কথায়, “গলা দিয়ে টিউবের মাধ্যমে ব্রঙ্কোস্কোপ যন্ত্র ঢুকিয়ে ফরসেপের সাহায্যে ডান ও বাঁ দিকের ব্রঙ্কাস থেকে দু’টুকরো হয়ে যাওয়া বাদামটি বার করা হয়েছে। দু’টি ব্রঙ্কাসেই বাধা তৈরি হওয়ায় শিশুর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা হু হু করে নামছিল। সেটি মারাত্মক ঝুঁকির। ওই একই পথে দেওয়া হয় অ্যানাস্থেশিয়া। এ ক্ষেত্রে সামান্য অসাবধানতায় বা অস্ত্রোপচারের নির্দিষ্ট সময় পেরোলে মৃত্যু হতে পারে রোগীর।” চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হয়ে নিউমোনিয়া হয়ে যাওয়ায় আশিককে পিকু-তে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শিশুদের শ্বাসনালিতে খাবার আটকানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এমন দুর্ঘটনার চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই প্রায় গোটা রাজ্যে, তা-ও মানছেন তাঁরা। ফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন এসএসকেএমে রেফার করা রোগী নিয়ে ছুটে আসেন পরিজনেরা। দিনে দু’টি এমন অস্ত্রোপচার সেখানে হয়েই থাকে বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।