Advertisement
E-Paper

টাকা বকেয়া, চার ইএসআই-তে বন্ধ ওষুধের সরবরাহ

ওষুধ কেনার টাকা মেটানো নিয়ে একাধিক ইএসআই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লড়াই বেঁধেছে রাজ্য ইএসআই ডিরেক্টরের। অভিযোগ, গত কয়েক মাসে কয়েক কোটি টাকার পাওনা মেটাননি তিনি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ২৩:২৯
Share
Save

ওষুধ কেনার টাকা মেটানো নিয়ে একাধিক ইএসআই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লড়াই বেঁধেছে রাজ্য ইএসআই ডিরেক্টরের। অভিযোগ, গত কয়েক মাসে কয়েক কোটি টাকার পাওনা মেটাননি তিনি। ফলে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলার মোট চারটি ইএসআই হাসপাতালে ওষুধ ও ল্যাবরেটরির রিএজেন্ট, অস্ত্রোপচারে প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে ওষুধ সংস্থাগুলি। এর মধ্যে আবার দু’টি হাসপাতালে ডায়ালিসিস ও ক্যানসারের সুপার স্পেশ্যালিটি চিকিৎসা হয়। সেখানে ওষুধ না পেয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন কিডনি বিকল হওয়া ও ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা।

এই হাসপাতালগুলিতে মূলত শ্রমিক শ্রেণির মানুষ আসেন, তাঁদের আর্থিক ক্ষমতাও কম। এখানে নিখরচায় ওষুধ না পেলে বেসরকারি কোনও হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষমতা নেই, তাই তাঁদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। এ দিকে, চার হাসপাতালেই ল্যাবরেটরির অধিকাংশ পরীক্ষা, বিশেষত ক্যানসারের যাবতীয় পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অনেক অস্ত্রোপচার পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মানিকতলা, শিয়ালদহ, হুগলির গৌরহাটি ও উত্তর চব্বিশ পরগনার কামারহাটি ইএসআই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত প্রায় ন’-দশ মাস ধরে যত ওষুধ ও রিএজেন্ট তাঁরা ‘লোকাল পারচেজ’-এ কিনেছেন, তার কোনও টাকা দেননি ইএসআই ডিরেক্টর। চার হাসপাতাল মিলিয়ে ওষুধ সংস্থাগুলির বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু মানিকতলা থেকেই সংস্থাগুলির পাওনা দু’কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। শিয়ালদহ ইএসআই থেকে ১ কোটি ২৯ লক্ষ, কামারহাটি থেকে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ ও গৌরহাটি থেকে ৬৭ লক্ষ টাকা পাওনা হয়েছে। দিন দশেক আগে ওই চার হাসপাতালে চিঠি দিয়ে ওষুধ ও রিএজেন্ট সরবরাহকারী প্রধান তিনটি সংস্থা জানিয়েছে, টাকা না পেলে আর মাল দেওয়া সম্ভব নয়। রাজ্য ইএসআই ডিরেক্টর মৃগাঙ্কশেখর করকে সে কথা জানালেও তাঁর কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ ওই চার হাসপাতালের কর্তাদের।

কিন্তু রাজ্য ইএসআই-এর ভাঁড়ারে এখন প্রায় ৫২ কোটি টাকা থাকলেও কেন টাকা মেটানো হচ্ছে না? কেন এ ভাবে সমস্যায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে গরিব রোগীদের?

এ বিষয়ে ইএসআই ডিরেক্টর মৃগাঙ্কশেখরবাবুর সাফ জবাব, ‘‘টাকা আছে বলেই যেমন-তেমন ভাবে দেওয়া যায় না। চার হাসপাতালের সুপারেরা তাঁদের নির্দিষ্ট আর্থিক সীমার বাইরে গিয়ে বিপুল টাকার ওষুধপত্র কিনেছেন। অর্থ দফতর এর অনুমতি দেয় না। তাই তাদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলে অনুমতি আদায় করে তবে টাকাটা মেটানো হবে। তাতে কিছুটা সময় লাগবে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এত টাকার লোকাল পারচেজ ই-টেন্ডারের মাধ্যমেই করা উচিত ছিল। বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করার জন্য ডিরেক্টরেটকেও তো প্রচুর ওষুধ কিনতে হয়। সমস্ত টাকা লোকাল পারচেজ-এ খরচ করলে চলবে কেন?’’

যা শুনে হাসপাতালের সুপারদের পাল্টা যুক্তি, ‘‘২০১৩ সাল থেকে ই-টেন্ডারের কথা শুনছি। ডিরেক্টর নিজেই তো এত দিন তা কার্যকর করার ব্যবস্থা করেননি। মাত্র কিছু দিন আগে আমাদের ই-টেন্ডারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হল।’’

তাঁদের কথায়, ‘‘ইএসআই-এর সেন্ট্রাল স্টোর থেকে অধিকাংশ সুপার স্পেশ্যালিটি চিকিৎসার ওষুধ ও প্রয়োজনীয় রি-এজেন্ট মেলে না। অথচ ডায়ালিসিস, ক্যানসার, হার্টের রোগ, নিউরোসার্জারির মতো বিভাগে প্রতিদিনই ভিড় উপচে পড়ছে। ওষুধ না পেয়ে তাঁরা অনেকেই হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মীদের উপর চড়াও হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে আমাদের লোকাল পারচেজ-এ যেতে হয়েছে।’’

মানিকতলা ইএসআই-এ মাসে গড়ে ৪০০ রোগীর ডায়ালিসিস হয়। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে সেখান থেকে ১১৫ জন ওষুধ পাচ্ছেন। শিয়ালদহ ইএসআই থেকে মাসে গড়ে ১০০-১২০ জন কেমোথেরাপির ওষুধ পান। এক সুপারের বক্তব্য, ‘‘ইএসআই হাসপাতালগুলিতে সুপারদের রোগীপিছু দিনে ১০ হাজার টাকার ওষুধ লোকাল পারচেজের অনুমতি রয়েছে। ক্যানসার বা কিডনির এক-একটি ওষুধ বা ইঞ্জেকশনের দামই এখন ২০-২২ হাজার টাকা। তার উপরে রোগী প্রতিদিন বাড়ছে। ১০০-র বদলে ৩০০ রোগী এসে গেলে কি তাঁদের ওষুধ কিনে দেব না?’’

এই লড়াইয়ের মাঝখানে পড়ে চরমে পৌঁছেছে রোগীদের দুর্ভোগ। মানিকতলা ইএসআই-এ দেড় মাস আগে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে হাসপাতাল থেকেই ওষুধ নিচ্ছিলেন বেলঘরিয়া রথতলার বাসিন্দা ছবিলাল দেওরা। বছর পঞ্চান্নর ছবিলাল গত দেড়মাস ওষুধ পাননি। শেষে এক জনের থেকে টাকা ধার করে বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। একই অবস্থা শিয়ালদহ ইএসআই থেকে কেমোথেরাপির ওষুধ নেওয়া পদ্মিনী চৌবের। গত মাসে কেমোথেরাপির ওষুধ পাননি ওই হাসপাতাল থেকে। নৈহাটির বাসিন্দা পদ্মিনীকে তাঁর এলাকার কিছু মানুষই চাঁদা তুলে ওষুধ কিনে দিয়েছেন। এ মাসে কী হবে, জানেন না তিনি।

এই বিরোধে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক কিন্তু কিছুটা ডিরেক্টরের পক্ষ নিয়েই কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘টাকার ব্যাপার খুব গোলমেলে। সব হিসেব মিলিয়ে টাকা মেটাতে একটু সময় তো লাগবেই।’’ কিন্তু দেরির জন্য তো ওষুধ সংস্থাগুলি ওষুধ-রিএজেন্ট সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে!

মন্ত্রী বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার থেকে সুপারদের লোকাল পারচেজের আর্থিক সীমা রোগী পিছু এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। আগে থেকেই এর টাকা দিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের। তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

Medicine ESI

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}