ছেলেবেলা থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। কখনও নিজের পরিচয় দিতেন ‘কর্নেল’, কখনও ‘ব্রিগেডিয়ার’। বৃহস্পতিবার অবশ্য ‘মেজর জেনারেল’ পরিচয় দিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে ঢুকেছিলেন বেলতলা রোডের বাসিন্দা প্রমিত মিত্র। তদন্তকারীরা বলছেন, সে দিন পরিচয় ফাঁস হওয়ার আগেও কয়েক বার ফোর্ট উইলিয়ামে ঢুকেছিলেন তিনি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দেশ-বিরোধী সংগঠনের চর হিসেবে নয়, সংগ্রহশালা ঘুরে দেখতেই ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে ঢুকেছিলেন প্রমিত। গোয়েন্দারাও অনেকটা নিশ্চিত, প্রমিত অপরাধমূলক কাজ করেননি।
এ দিকে, নিরাপত্তার খামতি পুরো মানতে নারাজ সেনাকর্তারা। তবে এই ঘটনায় কিছুটা নড়ে বসেছেন তাঁরা। উইং কম্যান্ডার সিমরনপাল সিংহ বিরদি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে নিরাপত্তা আরও আটোসাঁটো করা হয়েছে। প্রবেশের মুখে তল্লাশি জোরদার হচ্ছে।’’
ধৃত প্রমিতকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশের একাংশের অনুমান, তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তাই কখনও পরিচয় দিতেন ‘কর্নেল’, কখনও ‘ব্রিগেডিয়ার’। পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রমিতের মানসিক চিকিৎসা চলছে বলে তাঁর পরিবারও জানিয়েছে।
প্রমিতের পরিবারের একটি সূত্র জানায়, তাঁর বাবা প্রদ্যোৎকুমার মিত্র নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমোডর। পারিবারিক ইতিহাসও উজ্জ্বল। প্রদ্যোৎবাবুর ঠাকুর্দা ব্রিটিশ আমলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ‘রায়বাহাদুর’ খেতাব পেয়েছিলেন। প্রমিতও সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাইতেন। কিন্তু বহু চেষ্টাতেও সফল হননি। কলেজ পাশ করে একাধিক বাণিজ্যিক সংস্থায় চাকরি করেছেন। পরে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। সেনাবাহিনীতে চাকরি না পেলেও বরাবর সেনার পোশাক নিয়ে আগ্রহ ছিল প্রমিতের। গাড়িতে সেনাবাহিনীর স্টিকারও ব্যবহার করতেন। এ ব্যাপারে প্রদ্যোৎবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। কথা বলতে পারব না।’’
মনস্তত্ত্ববিদদের অনেকের মতে, পারিবারিক ইতিহাস ও সেনাকর্তা বাবাকে দেখে নিজেও সেনাকর্তা বা তেমন সম্মান অর্জনের তাগিদ অনুভব করতেন প্রমিত। কিন্তু সফল না হওয়ায় মনে অসুখের বীজ রোপণ হয়েছিল। তা থেকেই এমন আচরণ করতে থাকেন তিনি। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, ‘‘কল্পনার সঙ্গে বাস্তবকে গুলিয়ে ফেলছেন উনি।’’
প্রমিতের সঙ্গে দেশ বিরোধী কোনও সংগঠনের যোগ না পেলেও এই ঘটনা কিন্তু ফোর্ট উইলিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি এ ভাবেই পঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হানা দিয়েছিল জঙ্গিরা। তার পরেই দেশ জুড়ে বিভিন্ন সেনাঘাঁটির নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা ওঠে। চলতি বছরে খাস কলকাতা থেকে আইএসআই-এর দু’টি চর চক্র ফাঁস হয়। তদন্তে উঠে এসেছিল, একটি চক্র পানাগড়-সহ বিভিন্ন সেনাঘাঁটির তথ্য ও ছবি পাকিস্তানে পাচার করেছিল। মেরঠ থেকে পাকড়াও হওয়া পাক নাগরিক ও আইএসআই এজেন্ট মহম্মদ ইজাজের সূত্রে উঠে আসে দ্বিতীয় চক্রের নাম। ইজাজকে শহরে লুকিয়ে রাখা, তার ভুয়ো পরিচয় তৈরি করার পাশাপাশি ওই চক্রের সদস্যেরা গার্ডেনরিচের যুদ্ধজাহাজ কারখানার ম্যাপ ও ছবিও পাকিস্তানে পাচার করে বলে অভিযোগ। পুলিশের একাংশও মনে করছে, তার পরে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ইস্টার্ন কম্যান্ডের সদর দফতর ফোর্ট উইলিয়ামে ঢুকে পড়া নিরাপত্তার খামতিকেই প্রমাণ করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy