Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ক্লাসে ফিরছেন পড়ুয়ারা, আন্দোলন জারি

ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন যাদবপুরের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। তবে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে ক্লাসের খাতায় হাজিরা দেবেন না তাঁরা। ইঞ্জিনিয়ারিং ও কলা শাখার পড়ুয়ারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন কাল, শুক্রবার। তবে তাঁরাও বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের পথে হাঁটবেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফিরলে ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা অনেকটাই কাটবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ মানুষ। পড়ুয়ারা অবশ্য জানিয়েছেন, ক্লাসে ফিরলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে তাঁরা সরছেন না।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের বাইরে পুলিশি পাহারা। নজরদারির বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের পোস্টার। ছবি: শৌভিক দে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের বাইরে পুলিশি পাহারা। নজরদারির বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের পোস্টার। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন যাদবপুরের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। তবে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে ক্লাসের খাতায় হাজিরা দেবেন না তাঁরা। ইঞ্জিনিয়ারিং ও কলা শাখার পড়ুয়ারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন কাল, শুক্রবার। তবে তাঁরাও বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের পথে হাঁটবেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফিরলে ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা অনেকটাই কাটবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ মানুষ। পড়ুয়ারা অবশ্য জানিয়েছেন, ক্লাসে ফিরলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে তাঁরা সরছেন না। ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের এক মাস পূর্ণ হওয়ায় আজ, বৃহস্পতিবার দিনভর ক্যাম্পাসে কনভেনশন, নাটক ইত্যাদি চলবে। ক্যাম্পাসে রাত কাটিয়ে, কালো ব্যাজ পরে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি প্রতীকী অনশন করবেন ছাত্রছাত্রীরা। ১৬ সেপ্টেম্বর ঝামেলার দিন যে ‘বহিরাগতেরা’ ক্যাম্পাসে ছিলেন, ফেসবুকের পাতায় তাঁদের বৃহস্পতিবার যাদবপুরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

আজ উপাচার্য ক্যাম্পাসে এলে তাঁকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে না বলে জানান আন্দোলনকারীরা। রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, এই সব কর্মসূচি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে কিছু বলেননি।

কিন্তু উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী কবে যাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে? বুধবারও ক্যাম্পাসে যাননি তিনি। উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, আজ, বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে যেতে পারেন অভিজিৎবাবু। অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকার মতে, ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা কাটাতে অভিভাবক হিসেবে উপাচার্যেরই সব চেয়ে বেশি উদ্যোগী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর তরফে তেমন কোনও প্রয়াস দেখা যায়নি। ডিসেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন নিয়ে আলোচনার জন্য কয়েক জন অফিসারকে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে তিনি বৈঠক করতে চেয়েছিলেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। সল্টলেকে অন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ের দফতরের সেই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পরে অবশ্য তা বাতিল করা হয় বলে সূত্রের খবর।

গত সোমবার থেকে ক্লাসে ফিরছিলেন কিছু কিছু ছাত্রছাত্রী। বুধবার ইংরেজির এক শিক্ষিকাকে খোলা জায়গায় এক দল পড়ুয়াকে নিয়ে ক্লাস করতে দেখা যায়। কলা ও বিজ্ঞান শাখার কিছু বিভাগে বুধবার বেশ কিছু ক্লাস হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার। তবে এ দিন ক্লাসে হাজির হয়েও বেশির ভাগ পড়ুয়াই রোল কলে সাড়া দেননি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। বিজ্ঞান শাখার ডিন সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুনেছি, ছাত্রছাত্রীরা রোল কলে সাড়া দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়, তা জানতে চেয়েছেন অনেক শিক্ষক। আমি বলেছি, আপাতত ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে ফেরাটা বেশি জরুরি।”

আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে বুধবার সাধারণ সভার বৈঠক করেন ছাত্রছাত্রীরা। পরে এক ছাত্র জানান, ক্লাস বয়কট করে কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না। তাই বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিক্ষক সংগঠন জুটা-ও এ দিন সাধারণ সভার বৈঠক করে। জুটার সভাপতি কেশব ভট্টাচার্য জানান, তাঁদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বহাল থাকছে। আজ, বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে মিছিল করবেন তাঁরা। ২১ অক্টোবর গণ কনভেনশন।

এ দিনই বিধানসভায় গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি শিক্ষক সংগঠন ‘আবুটা’। সংগঠনের দাবি ছিল, ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের সম্পূর্ণ দায় নিতে হবে উপাচার্যকে। ওই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিও জানিয়েছে আবুটা। মন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে লাঠিচাজর্র্ হয়নি। সেই সঙ্গেই তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের প্রবেশ তিনি কখনওই চান না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলেন বলেই ১৬ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢোকে।

পরে আবুটার সভাপতি তথা এসউইউসিআইয়ের বিধায়ক, যাদবপুরের শিক্ষক তরুণ নস্কর বলেন, “মন্ত্রীকে বলেছি, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরুক সেটা আমরা সকলেই চাই। কিন্তু সে জন্য তো উপাচার্যকে উদ্যোগী হতে হবে। উনি তো তেমন কোনও পদক্ষেপই করছেন না।”

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার জন্য উপাচার্য এবং রাজ্য সরকারের ‘জেদ’কেই দায়ী করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE