Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মাইক্রোবায়োলজির পড়ুয়ারাও শামিল কোভিড-লড়াইয়ে

রোগীর পাশে দাঁড়িয়েই যুদ্ধ জয়ের সাহস জোগাচ্ছেন ওঁরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২০ ০২:১৪
Share: Save:

রোগীর পাশে দাঁড়িয়েই যুদ্ধ জয়ের সাহস জোগাচ্ছেন ওঁরা।

লকডাউনের ছুটিতে ওয়েব-সিরিজ দেখেই কাটিয়ে দিতে পারতেন মাইক্রোবায়োলজির স্নাতকোত্তর স্তরের ওই পড়ুয়ারা। তার বদলে সপ্তাহে ছ’দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিপিই পরে কোভিড পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছেন তাঁরা। দেশে নাগাড়ে কোভিড পরীক্ষা চালিয়ে যেতে ‘মাইক্রোবায়োলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’ (এমএসআই)-র ডাকেই মাঠে নেমেছেন ওঁরা।

বিপুল পরিমাণ কোভিড পরীক্ষার জন্য টেকনিশিয়ান পেতে অনেক বেসরকারি ল্যাবই সমস্যায় পড়ছে। আবার কোভিড ছাড়া অন্য রোগের জন্য নমুনা নিতে গেলে সেই টেকনিশিয়ানেরা কোভিড রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে ভরসা দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের একাংশ। ছিটেফোঁটা আর্থিক প্রাপ্তি নয়, স্রেফ মানবিকতার খাতিরেই যাঁরা মাঠে নেমেছেন।

যেমন, আইআইটি খড়্গপুরের পড়ুয়া সৌম্যসারথি গঙ্গোপাধ্যায়, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী সুস্মিতা দাস, সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শুদ্ধা চট্টোপাধ্যায়, সম্পূর্ণা ঘোষেরা পঞ্চসায়রের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পড়ে রয়েছেন। খাতায়-কলমে টেকনিশিয়ান নন ওঁরা। তবে এমএসআই-এর প্রোজেক্ট ম্যানেজার, মুম্বইয়ে কর্মরত বিজ্ঞানী শ্যাম পাটিল বলছিলেন, “মাইক্রোবায়োলজিস্ট বা অণুজীবী বিশেষজ্ঞেরা জীবাণু-ভাইরাস নিয়ে কাজ করেন। সতর্কতা-বিধি মেনে চলায় ও পিপিই সামলানোয় তাঁদের অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁরা কোভিড পরীক্ষায় নামলে অনেকে সাহস পাবেন ভেবেই মাইক্রোবায়োলজিস্টদের ডাক দিই।”

আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের করোনা টিকা অক্টোবরেই? সেই চেষ্টাই চলছে, বলছেন বিজ্ঞানীরা

খাস মুম্বইয়ের একটি সর্বভারতীয় বেসরকারি ল্যাব থেকে অনেক টেকনিশিয়ান কাজ ছেড়ে দেওয়ার পরে কর্মহীন বার-ডান্সারদের তালিম দিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজে লাগানো হয়েছে। শ্যামের দাবি, “গোটা দেশে মাইক্রোবায়োলজির পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রী এই কাজে যোগ দিতে চান। তাঁদের মধ্যে ১২৫-১৩০ জনের মতো বিভিন্ন হাসপাতাল ও ল্যাবে নমুনা সংগ্রহের কাজে শামিল। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সাড়া পেয়েছি।”

তবে এ রাজ্যের শীর্ষ স্তরের এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “বিভিন্ন হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিক ও ইএনটি বিভাগের টেকনিশিয়ানদের দিয়েই নমুনা সংগ্রহ করানো চলছে।” কোভিড হাসপাতাল এম আর বাঙুরের মেডিক্যাল সুপার শিশিরকুমার নস্কর বলছেন, “ট্রু-ন্যাট বা এনটিপিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষার কাজে মাইক্রোবায়োলজিস্টদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহেও তাঁরা সামনে থাকলে একটা সামাজিক সংহতির বার্তা পৌঁছয়।”

গত মে মাসে মুম্বইয়ের সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের বায়োটেকনোলজি বিভাগের ওয়েবিনারে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের আধিকারিক তথা ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজিস্ট শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকও কোভিড-যুদ্ধে যুব সমাজ, প্রধানত মাইক্রোবায়োলজির পড়ুয়াদের এগিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। তখনই এমএসআই-এর আহ্বায়কেরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এগিয়ে আসেন এ রাজ্যের মেধাবী পড়ুয়া-স্বেচ্ছাসেবীরাও।

শুদ্ধা, সৌম্য, সুস্মিতাদের অনেকেরই বাড়িতে বৃদ্ধা ঠাকুরমা, ঠাকুরদা, মা-বাবারা রয়েছেন। তাই তাঁদের থেকে বাড়িতে আলাদা থাকছেন ওঁরা। আসানসোলের মেয়ে সম্পূর্ণা বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন মাসের পর মাস। তবু ঝুঁকি নিয়েও নেশার মতো লেগে এই যুদ্ধে। সুস্মিতা বলছিলেন, “বাড়িতে বসে কী করব? এই সময়টা ঐতিহাসিক। সরাসরি কোভিড-যুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা জীবনভর কাজে লাগবে।”

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus lockdown microbiologist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE