ফের মেট্রোয় ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দীর্ঘক্ষণ মেট্রো চলাচল ব্যাহত হল। যার জেরে মেট্রোর যাত্রীদের হয়রানিও চরমে পৌঁছয়।
মেট্রো সূত্রে খবর, এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ এক যুবক গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মে দমদমগামী এসি রেকের সামনে আচমকা ‘ঝাঁপ’ দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। প্রায় আধ ঘণ্টার চেষ্টায় রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে কোনও মতে রেকের তলা থেকে উদ্ধার করে আনেন মেট্রোর কর্মীরা। পরে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনার ফলে প্রায় ৪৫ মিনিট মেট্রো চলাচল ব্যাহত হয়।
ওই সময়ে উত্তরে নোয়াপাড়া থেকে দমদম পর্যন্ত কোনও মেট্রো চলাচল করেনি। মেট্রো কর্তাদের দাবি, দুর্ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যে ময়দান থেকে কবি সুভাষের মধ্যে আপ এবং ডাউন লাইনে মেট্রো চলাচল শুরু করানো হয়। দীর্ঘক্ষণ নোয়াপাড়া থেকে পার্ক স্ট্রিটের মধ্যে মেট্রো বন্ধ থাকায় এসপ্লানেড, শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল, দমদমের মতো বিভিন্ন স্টেশনে অসংখ্য যাত্রী আটকে পড়েন। বাস বা অ্যাপ-ক্যাব ধরতে যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। দক্ষিণে টালিগঞ্জ, কালীঘাট, কবি নজরুল এবং কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনেও বহু যাত্রীকে মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। বিকেল ৪টের কাছাকাছি সময়ে ময়দান থেকে নিউ গড়িয়ার মধ্যে আপ এবং ডাউন লাইনে মেট্রো চলাচল শুরু হয়। এর মিনিট কুড়ির মধ্যে পুরো পথেই মেট্রো চলাচল শুরু হয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনে বছর ছাব্বিশের এক যুবককে দমদমগামী এসি মেট্রোর সামনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখেন মেট্রোচালক ও যাত্রীরা। দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে ট্রেনটি তখন প্ল্যাটফর্মে ঢোকা শুরু করেছে। চালক সঙ্গে সঙ্গে আপৎকালীন ব্রেক কষলেও মেট্রোর দু’টি কামরা
ওই যুবককে অতিক্রম করে যায়। প্ল্যাটফর্মে শুরু হয়ে যায় হইচই। ছুটে আসেন মেট্রোকর্মী এবং রেলরক্ষী বাহিনীর সদস্যেরা। কামরার তলায় ওই যুবক ঠিক কোথায় রয়েছেন, তা বুঝতেই পেরিয়ে যায় বেশ কিছুটা সময়।ওই যুবক জীবিত থাকতে পারেন মনে করে চালক এবং স্টেশন মাস্টার ট্রেনটিকে আর নড়ানোর কোনও রকম চেষ্টা করেননি। ওই অবস্থায় প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করা তিনটি কামরার দরজা ম্যানুয়ালি খুলে সব কামরার যাত্রীদের মেট্রো থেকে নামিয়ে আনা হয়। থার্ড লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যবস্থা করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
রেলরক্ষী বাহিনী এবং মেট্রো রেলের দুই কর্মী বড় আকারের টর্চ নিয়ে দু’টি কামরার সংযোগস্থলে থাকা ভেস্টিবিউলের পাশ দিয়ে লাইনে নেমে পড়েন। তার পরে ওই যুবককে তাঁরা খুঁজে বার করে মেট্রোর নীচে থেকে টেনে তোলেন। রক্তাক্ত ওই যুবককে কলকাতা পুলিশের ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। গুরুতর আহত ওই যুবকের চিকিৎসা চলছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ঝাঁপ দেওয়ার পরে ওই যুবক সম্ভবত ট্রেনের ধাক্কায় মেট্রোর দু’টি লাইনের মাঝের পরিসরে পড়ে যান। যুবকের হাত-পা অক্ষত থাকলেও তাঁর মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবক মানিকতলার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ঋণদান বিভাগের কর্মী। তাঁর বাবা-মা গড়িয়ার লস্করপুর এলাকার বাসিন্দা। গত কয়েক বছর ধরে স্ত্রীকে নিয়ে ওই যুবক দমদম রোডের ছাতাকল এলাকায় আলাদা থাকছিলেন। কেন তিনি আচমকা এ ভাবে মেট্রোর সামনে ‘ঝাঁপ’ দিলেন, পরিবারের লোকজনের কাছেও তা স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy