Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কাটা গাছ থেকে জল, ‘পুণ্য’ অর্জনে ভিড় স্থানীয় বাসিন্দাদের!

মিনিট দু’য়েকের মধ্যেই শুরু হল প্রবল উলুধ্বনি। ভিড় ঠেলে বড় জবার মালা হাতে গাছের কাছে পৌঁছে গেলেন এক মহিলা। প্রবল প্রত্যয়ে ঘোষণা করলেন, ‘‘আজ রাতে এখানে পুজো হবে। কাল থেকে শুরু হবে মন্দির তৈরির কাজ।’’

হুজুগ: এই গাছটি (ইনসেটে) ঘিরেই ছড়াচ্ছে গুজব। ‘পুণ্য’ অর্জনে ভিড় করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

হুজুগ: এই গাছটি (ইনসেটে) ঘিরেই ছড়াচ্ছে গুজব। ‘পুণ্য’ অর্জনে ভিড় করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৫
Share: Save:

দুপুর রোদে ব্যস্ত রাস্তায় প্রবল ভিড়। গাড়ি চলাচল বন্ধ। একে অপরকে টেক্কা দিয়ে একটি কাটা গাছের কাছে পৌঁছনোর তাড়ায় প্রত্যেকেই। কারও কারও হাতে ফাঁকা জলের বোতল। কেউ এনেছেন প্লাস্টিকের জলের পাত্র।

মিনিট দু’য়েকের মধ্যেই শুরু হল প্রবল উলুধ্বনি। ভিড় ঠেলে বড় জবার মালা হাতে গাছের কাছে পৌঁছে গেলেন এক মহিলা। প্রবল প্রত্যয়ে ঘোষণা করলেন, ‘‘আজ রাতে এখানে পুজো হবে। কাল থেকে শুরু হবে মন্দির তৈরির কাজ।’’

পুরসভার কেটে দিয়ে যাওয়া গাছ থেকে জলীয় পদার্থ বেরোনোর ঘটনা ঘিরে এ ভাবেই মঙ্গলবার দিনভর সরগরম রইল উল্টোডাঙার রমাকান্ত সেন লেন। ‘খবর’ শুনে সকাল থেকেই ভিড় জমালেন আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। কেউ কেউ গাছ থেকে বেরোনো জলীয় পদার্থ ‘পবিত্র’ বলে পাত্রে ভরে নিয়ে গেলেন। সীমা কাঞ্জিলাল নামে তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘এই গাছে ভগবান আছেন। গাছ কাটায় ওঁর লেগেছে। মন্দির হলে রোজ আসব।’’

আরও খবর: খোঁজ মিলল দূরতম নক্ষত্র ইকারাসের

এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। গত রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টিতে ওই এলাকার বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ে। বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডুর নির্দেশে পুরকর্মীরা গিয়ে ভেঙে পড়া গাছ সরানোর পাশাপাশি কিছু গাছ কেটেও দেন। কাউন্সিলর বলেন, ‘‘একটা ডুমুর গাছ থেকে জল পড়ছে। সকলে বলছেন গাছে ভগবান আছে। আমি জানি না।’’ পাশের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ডুমুর গাছে এমনিতেই জল জমে। ভগবান কাঁদছেন— এ সব বাজে কথা!’’

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ রণজিৎ সামন্ত বলেন, ‘‘ওই গাছ নিয়ে যা হচ্ছে তা অন্ধ বিশ্বাস বলেই মনে হচ্ছে। তবে গাছটি না দেখে বলা ঠিক হবে না।’’ তবে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ তথা বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রাক্তন জয়েন্ট ডিরেক্টর অরবিন্দ প্রামাণিক বলছেন, ‘‘মস্ত বড় ভুল হচ্ছে। এর পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা রয়েছে। গাছটির ছবি দেখে মনে হচ্ছে, এটি একটি পাকুড় জাতীয় গাছ। বৈজ্ঞানিক নাম ফিকাস ইনফেকটোরিয়া। এদের ডাল কাটলে বা পাতা ছিঁড়লে জলীয় পদার্থ বার হয়।’’ অরবিন্দবাবু জানান, এই জলীয় পদার্থ আদতে গাছের বর্জ্য। ডাল ভেঙে গেলে বা পাতা ঝড়ে যাওয়ার সময় ওই বর্জ্য ক্ষরণ হয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।

তবে মিঠু পোদ্দার নামে এক মন্দির-উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘বিশ্বাসই আসল। বিজ্ঞান পরে বুঝব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Superstition Tree Ultadanga Norwesters God
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE