যাদবপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত হয়ে এক জন মারা গেলেন, স্বাস্থ্য দফতর তা জানতে পারল তিন সপ্তাহ পরে!
চিত্তরঞ্জন শিশুসদনে চলতি সপ্তাহে পর-পর দুই সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু হল, সে খবর সময় মতো স্বাস্থ্যভবনে পৌঁছল না।
সোয়াইন ফ্লু-এর রিপোর্ট ট্রপিক্যাল থেকে চিত্তরঞ্জন শিশুসদনে আসতে সময় লাগল এক সপ্তাহের বেশি! কার্যত প্রকৃত রোগ জানার আগেই শিশু মারা গেল ও সংক্রমিত করে গেল এক চিকিৎসককে।
সোয়াইন ফ্লু (এইচ১এন১)- এর মতো বায়ুবাহিত সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বলে দেওয়া নিয়ম এ রাজ্যে প্রতি স্তরে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ জানান চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। হাসপাতাল কর্তা ও স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা ধামাচাপা দিতেই ব্যস্ত কি না উঠেছে তা নিয়েও প্রশ্ন।
সোয়াইন ফ্লু সংক্রান্ত তথ্যে এই দেরি, ফাঁক নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের অন্দরেই বিতর্ক তীব্র হওয়ায় বৃহস্পতিবার এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগ বিভাগের কর্তা কমলকৃষ্ণ পতি।
এত লুকোছাপার পরেও স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুনের ভিতর রাজ্যে অন্তত ৫০০ জন সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১৬ জন। এপ্রিল থেকে জুনের ভিতরে হাজরার চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতালে ৩টি ও ফুলবাগান বিসি রায় হাসপাতালে ৪টি সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত শিশু মারা গিয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জুন চিত্তরঞ্জনে মারা গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির শ্যামনগরের বাসিন্দা সাড়ে তিন বছরের শুভশ্রী গায়েন। আর ওই হাসপাতালেই ২৮ জুন মৃত্যু হয়েছে বেহালার পিকে চন্দ্র রোডের ন’মাস বয়সী আজান খানের।
আজান প্রায় ২৮ দিন চিত্তরঞ্জনে ভর্তি ছিল। অথচ তার কফ পরীক্ষা করতে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয় ২৭ জুন। ২৮ জুন রিপোর্ট আসার পরেই আজানের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশই স্বীকার করছেন, আজানের সোয়াইন ফ্লু-র পরীক্ষা সময়মতো হলে উপযুক্ত চিকিৎসা করা যেত। তা ছাড়া, ডাক্তারবাবুরাও শিশুটির চিকিৎসার সময় সুরক্ষা কবচ হিসাবে মাস্ক ব্যবহার করতে পারতেন। সেটা না-করায় ইতিমধ্যে চিত্তরঞ্জনের একজন পিজিটি ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রসঙ্গত, ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন বাজারে মেলে। সেটা প্রতি বছর দিতে হয়। যে সব সরকারি হাসপাতালে এর চিকিৎসা হয় সেখানকার চিকিৎসক ও কর্মীদের সরকার চলতি বছর এখনও আগাম এই টিকা দেয়নি। আইডি হাসপাতাল নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ডাক্তার-নার্সদের এই প্রতিষেধক দিলেও বাকিরা এখনও এর আওতার বাইরেই থেকে গিয়েছেন।
চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতাল থেকে শুভশ্রীর কফ পরীক্ষার জন্য ট্রপিক্যালে পাঠানো হয়েছিল ১৯ জুন। সেই রিপোর্ট চিত্তরঞ্জনে পৌঁছয় ২৬ জুন। সে দিনই শিশুটি মারা যায়। ট্রপিক্যালের যুক্তি, ২০ তারিখ তাদের এমসিআই পরিদর্শন ছিল। তার উপরে তাদের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোটে একজন। সেই সঙ্গে মাঝখানে পড়ে গিয়েছিল শনি-রবিবার। সব মিলিয়ে রিপোর্টে দেরি হয়েছে। কমলকৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘ট্রপিক্যালের ২০ জুনের রিপোর্ট তাঁরা পেয়েছেন ২৮ জুন। সেখানে ৫ জনের এইচ১এন১ পজিটিভ মিলেছে। কিন্তু দেরিতে পাওয়ায় সেই জায়গাগুলিতে স্বাস্থ্য দফতর এখনও টিম পাঠাতে পারেনি। চিত্তরঞ্জনের দুই শিশুর মৃত্যুর রিপোর্টও সময় মতো তাঁরা পাননি। বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালই ঠিক মতো তথ্য জানাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy