নিজের ‘সাম্রাজ্য’ চালানোর জন্য দু’টি দল তৈরি করেছিলেন অনিন্দ্য। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কোন বাড়ির দোতলা উঠছে, কোন বাড়িতে সংস্কার হচ্ছে, কার ফ্ল্যাটে পানীয় জলের সংযোগ প্রয়োজন, কোথায় ভাড়াটে-বাড়িওয়ালার বিবাদ চলছে, কোথায় দোকানঘর কেনাবেচা হচ্ছে— এই সব খবর রাখার দায়িত্ব প্রথম দলের উপরে। কোনও খবর পেলেই মাঠে নামত দু’নম্বর দল। হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো, কাজ বন্ধ করে দেওয়ার দায়িত্ব তাদের। তখন আবার শঙ্কিত বাসিন্দা বা ব্যবসায়ীদের ‘অভয়’ দিতে যেতেন প্রথম দলের সদস্যেরা। তাঁরাই বলে আসতেন, ‘দাদা (কাউন্সিলর) দেখা করতে বলেছেন।’
‘দাদা’ বসতেন ওয়ার্ড অফিসে। জুলুমের অভিযোগ নিয়ে কেউ দেখা করতে গেলেই প্রথমে শুরু হত দাবড়ানি। তার পরে আর রাখঢাক না করে সরাসরি টাকা চেয়ে হুমকি। কেউ দেখা করতে না চাইলে ফোনেই চাওয়া হতো তোলা। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পরে তদন্তে এমনই জানতে পেরেছে বিধাননগরের পুলিশ।
এই কাজে যুক্ত তাঁর দুই শাগরেদকেও বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ — তোলাবাজি। আজ, শুক্রবার ধৃতদের আদালতে তোলা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, মহম্মদ নাসিম ও সিন্ধু কুণ্ডু নামে ওই দু’জনকে যথাক্রমে বিডি মার্কেট এবং দত্তাবাদ এলাকা থেকে ধরা হয়েছে। ধৃত কাউন্সিলরের হয়ে সল্টলেকের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁরাই হুমকি দিয়ে, জুলুম করে তোলা আদায় করতেন বলে অভিযোগ। বিধাননগর পুলিশের ডিসি ডিডি সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘বিধাননগরের বাসিন্দা সন্তোষকুমার লোধ থানায় যে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন তাতে বলা হয়েছিল, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর দলবল জুলুম করেছে, হুমকি দিয়েছে, বাড়ির সামনে রাখা ইমারতি দ্রব্য ফেলে দিয়েছে। ফলে যে অভিযোগে অনিন্দ্য দোষী, তাতেই অভিযুক্ত তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গও। তাঁরাই সরাসরি ঘটনাস্থলে গিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন।’’
পুলিশ জানায়, ধৃত দু’জনেই অনিন্দ্যের দ্বিতীয় দলের সদস্য। সেই দলে যেমন আছেন ব্যবসায়ী নাসিম-সিন্ধু, তেমনই আছেন বিভিন্ন সব্জি বিক্রেতা। পুলিশ জেনেছে, প্রথম দলের সদস্যেরা সকলেই আপাত শিক্ষিত ও ভদ্র। এই দলে চিকিৎসক, দলের ব্লক কমিটির সম্পাদক, এমনকী যুবনেতাও আছেন। তাঁরা সকলেই সল্টলেকের বাসিন্দা। দ্বিতীয় দলের অনেক সদস্য অবশ্য সল্টলেকের বাইরে থেকেও আসতেন।
যেমন পুলিশ জানায়, ধৃত নাসিমের বাড়ি কেষ্টপুরে। বিধাননগর পুরসভার পক্ষ থেকে রাস্তায় রাস্তায় মশা মারার তেল ছড়ানো হয়। পুলিশ জেনেছে, নাসিম সেই মশা মারার তেল সরবরাহ করতেন। সেই সূত্রেই অনিন্দ্যের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। পরে ধীরে ধীরে অনিন্দ্য তাঁকে নিজের দলে ঢুকিয়ে নেন। বিধাননগরের একটি বাজারে নাসিমের লেপ-তোশকের দোকান রয়েছে বলেও জেনেছে পুলিশ। অন্য জন, সিন্ধু কুণ্ডু থাকেন দত্তাবাদ এলাকায়। নিজের ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসা আছে। গত ৫ মার্চ তাঁকে পুলিশ এক বার গ্রেফতারও করেছিল। সল্টলেকের করুণাময়ীতে একটি সরকারি আবাসন সংস্কারের কাজ চলাকালীন ঠিকাদারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ দিন ধৃত দু’জনকে দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সূত্রের খবর, জেরায় তাঁদের কাজকর্ম সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়েছে। তাঁরা আরও কয়েক জনের নাম বলেছেন, যাঁরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অনিন্দ্যের হয়ে তোলা আদায়ের কাজে যুক্ত। সূত্রের খবর, অনিন্দ্যের এক এবং দুই নম্বর দলের কয়েক জনের নামের তালিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে পুলিশ। একে একে তাঁদেরও ধরা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy